রাশিয়াকে চীনের সমর্থন, ক্রেমলিন যাবেন ফ্রেঞ্চ-জার্মান নেতারা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে আর কোন নতুন সদস্য যুক্ত হওয়া সমর্থন করবে না চীন৷ এ ব্যাপারে মস্কোর সঙ্গে একমত হয়েছে বেইজিং৷ এদিকে, ইউক্রেন উত্তেজনা প্রশমনে মস্কো যাচ্ছেন ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষ নেতারা৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন সংকটে গেল শুক্রবার চীনের সমর্থন পেল রাশিয়া৷ শীতকালীন অলিম্পিক উপলক্ষে চীন সফরে যাওয়া রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে৷ বৈঠক শেষে পুটিন দুই দেশের মধ্যে ‘মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক' রয়েছে বলে উল্লেখ করেন৷
এরপর বৈশ্বিক নিরাপত্তায় ওয়াশিংটনের ভূমিকাকে নেতিবাচক উল্লেখ করে একটি কৌশলগত নথি প্রকাশ করা হয়৷ সেখানে বলা হয়, ‘‘(স্বাক্ষরকারী) প্রতিটি পক্ষ ন্যাটোর পরিসর বাড়ানোর বিরোধিতা করে এবং নর্থ আটলান্টিক অ্যালায়েন্সকে শীতল যুদ্ধকালীন আদর্শিক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানায়৷''
অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্বার্থের সম্মান জানানোর আহ্বান করা হয় নথিটিতে৷
ন্যাটো মহাসচিব জেনারেল ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ রুশ-চাইনিজ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন৷ সংবাদমাধ্যম এমএসএনবিসিকে তিনি বলেন, ‘‘আসলে ন্যাটোর পরিসর বাড়ানো লক্ষ্য না৷ প্রতিটি সার্বভৌম দেশ যেন নিজের পথ বেছে নিতে পারে সেটাই লক্ষ্য৷''
এদিকে, ইউক্রেনকে ঘিরে উত্তেজনা এখনো কমেনি৷ ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া প্রায় এক লাখ সেনা জড়ো করেছে বলে পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ করে আসছে৷ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ যদি হামলা করা হয়, তাহলে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর কঠিন অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছে৷
সংকট নিরসনে ফ্রান্সের পর এখন জার্মানিও আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে৷ ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ সোমবার মস্কো ও মঙ্গলবার কিয়েভ সফরে যাবেন৷ শুক্রবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও ঘোষণা দেন যে তিনি ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন ও পরদিন রাশিয়া সফর করবেন৷
জেডএ/এআই (এপি, ডিপিএ)
ভ্লাদিমির পুটিন: গোয়েন্দা থেকে প্রেসিডেন্ট
পড়াশোনা শেষে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ এরপর কয়েক বছরের মধ্যেই রাজনীতির শীর্ষে চলে আসতে সক্ষম হন তিনি৷
জন্ম ১৯৫২ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে৷ ১৯৭৫ সালে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে সাবেক সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল নিজ শহর লেনিনগ্রাদে (পরবর্তীতে নাম হয় সেন্ট পিটার্সবার্গ) বিদেশি নাগরিক ও কনস্যুলেটের কর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা৷ এরপর বদলি হন পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে৷ বার্লিন প্রাচীর পতনের পর তিনি কেজিবির অনেক ফাইল পুড়িয়ে ফেলেন বলে জানা যায়৷
বামে তরুণ পুটিনকে দেখতে পাচ্ছেন? ছবিতে যে ব্যক্তিকে এক নারীর সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম আনাতোলি সবচাক৷ তিনিই প্রথম পুটিনকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন, নিজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন পুটিনকে৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
উল্কার বেগে উত্থান
খুব দ্রুতই সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো চলে গিয়েছিলেন পুটিন৷ ১৯৯৭ সালে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিন তাঁকে নিজের প্রশাসনে মাঝ পর্যায়ের এক পদে নিয়োগ দেন৷ এই পদটি আসলে ছিল গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পদ, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
বন্ধুর মৃত্যু
২০০০ সালে সবচাকের মৃত্যু পুটিনকে আবেগে আক্রান্ত করেছিল৷ কারণ, যাঁরা পুটিনকে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তিনি৷ সবচাকের মৃত্যুর বছরখানেক আগে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রতারণার অভিযোগ নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাতিল করেছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Chirikov
অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট
২০০০ সালের জুনে ইয়েলিৎসিন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুটিন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন৷ এরপর যখন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রশাসনে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ কিন্তু অভিযোগ যিনি এনেছিলেন, সেই সাংসদ মারিনা সালিয়েকে শেষ পর্যন্ত শহর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
রাজনৈতিক সঙ্গী
সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দু’বার দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে আর তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব ছিল না পুটিনের৷ তাই সেই সময় তিনি তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন দিয়েছিলেন৷ আর নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন৷ সেবারই সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় আর প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল চার থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়৷ এরপর ২০১২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট হন পুটিন৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
চতুর্থবার প্রেসিডেন্ট
১৮ মার্চ, ২০১৮ রবিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও জয়লাভ করেন পুটিন৷ ফলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকছেন তিনি৷ ২০৩০ সালেও তিনি প্রার্থী হবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে পুটিন সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘১০০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করে যাবার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই৷’’