গত কয়েকমাস ধরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে প্রায় এক লাখ সেনা ও অস্ত্র মোতায়েন করেছে রাশিয়া৷ এই অবস্থায় রাশিয়া আবারও ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে কিংবা ঢুকে যেতে পারে এই আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছে রাশিয়া৷ বুধবার ব্রাসেলসে ন্যাটোর সঙ্গে আলোচনা হবে৷ ২০১৯ সালের পর এই প্রথম ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা হতে যাচ্ছে৷ রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সাণ্ডার গ্রাশকো ও উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেক্সাণ্ডার ফোমিন আলোচনায় অংশ নেবেন৷ আলোচনার সময় ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদরদপ্তরে মার্কিন উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শারমান উপস্থিত থাকবেন৷
২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া দখল করে রাশিয়া৷ তখনও ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া সেনা ও অস্ত্র মোতায়েন করেছিল৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করতে সমর্থ হয়েছিল বলে মনে করেন পেন্টাগনের সেই সময়কার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জিম টাউনসেন্ড৷ বর্তমানে তিনি সেন্টার ফর এ নিউ অ্যামেরিকান সোসাইটির সিনিয়র ফেলো হিসেবে কাজ করছেন৷ পেন্টাগনের পর টাউনসেন্ড ওবামা প্রশাসনের ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন৷ সম্প্রতি তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ওবামা প্রশাসনের আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত ছিল৷
বুধবার ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনায় ন্যাটোর লক্ষ্য থাকবে ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি ঠেকানো৷ বিনিময়ে ন্যাটো তার কার্যক্রম আরও পুবে সরাবে না, এই নিশ্চয়তা চাইবে রাশিয়া৷ এছাড়া ন্যাটো ইউরোপ থেকে তাদের সেনা ও অস্ত্রসংখ্যা কমাবে এবং ইউক্রেন কখনও ন্যাটোর সদস্য হবে না, এই নিশ্চয়তাও চায় রাশিয়া৷ ইউক্রেন বর্তমানে ন্যাটোর পার্টনার দেশ হিসেবে আছে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ইতিমধ্যে ন্যাটোর সদস্যপদের উপর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি কৌশলে প্রত্যাখ্যান করেছে৷
বুধবারের আলোচনা থেকে অনেককিছু আশা করছেন না ন্যাটোর প্রধান ইয়েন্স স্টলটেনব্যার্গ৷ তিনি বলেছেন, বুধবারের বৈঠকে যদি ভবিষ্যতে আরও আলোচনা চালিয়ে যেতে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায় তাহলে সেটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া হবে৷
সোমবার হয়ে যাওয়া ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনাকে দুই পক্ষই গঠনমূলক বলেছে৷ কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি৷
ন্যাটোর সঙ্গে কথা বলার পর বৃহস্পতিবার অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যাণ্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপের সঙ্গে আলোচনা করবে রাশিয়া৷
২০১৮ সালের ছবিঘর দেখুন
ছবিতে রুশ-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব
কের্শ প্রণালী থেকে তিন ইউক্রেনীয় জাহাজ আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে৷ এই দ্বন্দ্ব আর শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, ইউরোপ ছাড়িয়ে এর উত্তাপ ছুঁয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Volskii
যেভাবে শুরু
ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সাথে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সংযোগ স্থাপনকারী সেতুর ওপর রুশ জেট বিমান উড়ছে৷ ইউক্রেনের তিন কার্গো জাহাজ আটকের পর এভাবেই মহড়া দেয় রুশ বিমানবাহিনী৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
আটক জাহাজ
ইউক্রেনের জাহাজ তিনটি কৃষ্ণ সাগর থেকে কের্শ প্রণালী হয়ে আজভ সাগরে যাচ্ছিল৷ এক চুক্তি অনুযায়ী কের্শ প্রণালীতে রাশিয়া ও ইউক্রেন, দুই দেশেরই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷ কিন্তু রাশিয়ার দাবি, বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সীমা লঙ্ঘন করে রাশিয়ার সীমানায় ঢুকে পড়েছিল জাহাজগুলো৷
ছবি: Reuters/A. Dmitrieva
আটক নাবিক
জাহাজগুলোতে থাকা নাবিকদের আটক করেছে রুশ নৌবাহিনী৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ক্রাইমিয়ার আদালতে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্রাইমিয়ার সিম্ফারপোলে আদালতে এক আটক ইউক্রেনীয় নাবিককে নিয়ে যাচ্ছেন রাশিয়ার এফএসবির নিরাপত্তা সদস্য৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
ইচ্ছাকৃত উসকানি!
আদালতে শুনানিতে ইউক্রেনের নাবিক ইউরি বুদসিলোকে তাঁর আইনজীবীর সাথে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে৷ পুরো ঘটনার জন্য ইউক্রেন রাশিয়াকে দায়ী করলেও রুশ সেনাবাহিনীর দাবি, বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও রুশ জলসীমায় ঢুকে পড়ে ইউক্রেনের জাহাজ৷ এই বক্তব্যের সমর্থনে আটক নাবিকদের স্বীকারোক্তিও প্রচার করা হয়েছে রুশ গণমাধ্যমে৷ তবে ‘ভয় দেখিয়ে’ এমন কথা বলতে নাবিকদের বাধ্য করা হয়েছে, দাবি ইউক্রেনের৷
ছবি: Reuters/P. Rebrov
মার্শাল ল’
রাশিয়ার ‘অনভিপ্রেত’ ও ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের কড়া জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেংকো৷ তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে রুশ সীমান্তের বেশ কিছু এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির পার্লামেন্ট৷ পাশাপাশি, আজভ সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে ন্যাটোকে আহ্বান জানিয়েছেন পোরোশেংকো৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ
জাহাজ আটকের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে৷ বিশেষ করে উগ্র ডানপন্থি দলগুলো আয়োজন করেছে বিক্ষোভ কর্মসূচির৷ কিয়েভে পার্লামেন্ট ভবন এবং রুশ দূতাবাসের সামনে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ডানপন্থিরা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রুশ দূতাবাসে ইউক্রেনের পতাকা ওড়ানোর চেষ্টা করছেন এক বিক্ষোভকারী৷