রাশিয়ার অর্থ ইউক্রেনের জন্য কাজে লাগাতে চায় ইইউ
২১ মার্চ ২০২৪২০২২ সালে ইউক্রেনের উপর হামলা শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে পশ্চিমা জগত৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার যাবতীয় সম্পদ মস্কোর নাগালের বাইরে রাখা হয়েছে৷ একাধিক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি ইউরো সরাসরি জব্দ করা না হলেও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের প্রশাসনের লেনদেনের আওতার বাইরে রয়েছে৷ সেই জমা অর্থ থেকেও বিশাল অংকের সুদ ও মুনাফা সৃষ্টি হয়েছে৷ ইউক্রেনের দুর্দিনে সেই অর্থ কাজে লাগানোর জন্য চাপ বাড়ছে৷
বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা রাশিয়ার ‘ফ্রোজেন অ্যাসেট' থেকে পাওয়া মুনাফা কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার বিষয়ে আলোচনায় বসছেন৷ মার্কিন কংগ্রেসে ৬,০০০ কোটি ডলার অংকের সহায়তা প্যাকেজ আটকে থাকায় ইউক্রেন যে সংকটে পড়েছে, রাশিয়ার আর্থিক সম্পদের মুনাফার অর্থ কিছুটা হলেও সেই ঘাটতি পূরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ইইউ কমিশন সেই অর্থের ৯০ শতাংশ ‘ইউরোপিয়ান পিস ফেসিলিটি' নামের বিশেষ তহবিলে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে৷ সেই তহবিল কাজে লাগিয়ে বর্তমানে ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র কেনা হচ্ছে৷ ইইউ-র কমিশনের হিসেব অনুযায়ী রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ ও একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে মুনাফার অংক বছরে আড়াইশো থেকে তিনশো কোটি ইউরো হতে পারে৷ মূলত বেলজিয়ামের ‘ইউরোক্লিয়ার' সংস্থার তত্ত্বাবধানে রাখা সেই সম্পদ থেকে পাওয়া মুনাফার উপর সে দেশের সরকার যে ২৫ শতাংশ কর চাপায়, সেই অর্থও ইউক্রেনকে হস্তান্তর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ রাশিয়া বুধবার ইইউ-র এই উদ্যোগকে ‘দস্যুবৃত্তি ও চুরি' হিসেবে বর্ণনা করেছে৷
নীতিগতভাবে ইইউ সদস্য দেশগুলি রাশিয়ার সম্পদ থেকে মুনাফা ইউক্রেনের কাজে লাগানোর পক্ষে হলেও সেই অর্থ কাজে লাগিয়ে সরাসরি অস্ত্র কেনার বিষয়ে কিছু দেশের সংশয় রয়েছে৷ বিশেষ করে পুটিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান ইউক্রেনকে আদৌ কোনো অস্ত্র পাঠানোর বিরোধিতা করে আসছেন৷ তাছাড়া কোনো সামরিক জোটের বাইরের থাকা দেশ হিসেবে মাল্টা, অস্ট্রিয়া ও আয়ারল্যান্ডও নিজস্ব নিরপেক্ষতা ভেঙে এমন উদ্যোগে সায় দেবে কিনা, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে৷ শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্ভব না হলেও রাশিয়ার সম্পদ থেকে মুনাফা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে আরো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে৷
রাশিয়া শুধু ইউক্রেনেই হামলা সীমাবদ্ধ না রেখে ভবিষ্যতে ইইউ-র ভূখণ্ডেও হস্তক্ষেপ করতে পারে, এমন আশঙ্কা আর উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ ইউরোপকে রক্ষা করতে ভবিষ্যতে অ্যামেরিকা কতটা উদ্যোগ নেবে, সে বিষয়েও সংশয় বাড়ছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে ইউরোপের সুরক্ষা বৃদ্ধি ও অস্ত্র শিল্পকে চাঙ্গা করার বিষয়েও আলোচনা করছেন ২৭টি সদস্য দেশের শীর্ষ নেতারা৷ ইউরোপে তৈরি অস্ত্র কেনার প্রণোদনা বাড়ানো এবং যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্প চালানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ এস্টোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাইয়া কালাস ইউরোপীয় ডিফেন্স বন্ড চালু করে প্রতিরক্ষা খাতে যৌথ ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, ডিপিএ)