ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে আসা ৭৪টি ড্রোনের মধ্যে ৬০টি ধ্বংস করা হয়েছে। চারটি মিসাইলও ধ্বংস হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের সেনা জানিয়েছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য অ্যামেরিকার তৈরি এফ ১৬ জেট নিয়ে লড়ছিলেন এক পাইলট। জেট ক্র্যাশ করে। পাইলট মারা গেছেন।
তবে ইউক্রেনের সেনার দাবি, রাশিয়ার চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। একটি এফ ১৬ যুদ্ধবিমান যখন পরবর্তী টার্গেটে আঘাত করতে যায়, তখন তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়। পরে দেখা যায়, বিমানটি ধ্বংস হয়েছে, পাইলট মারা গেছেন।
ইউক্রেনের সেনা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই পাইলটের নাম জানায়নি। তবে তাদের ওয়েস্টার্ন কম্যান্ড জানিয়েছে, ওই পাইলট তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি ড্রোন ধ্বংস করেন। শেষপর্যন্ত তিনি নিজের জীবন দিয়েছেন।
অগাস্টের প্রথমে ইউক্রেনে প্রথমবার এফ ১৬ জেট আসার কথা জানানো হয়। ইউক্রেন আর্মড ফোর্স ডে-তে সেগুলি কিয়েভের আকাশে উড়তে দেখা যায়।
রাশিয়ার আগ্রাসনের আগে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির মতো ইউক্রেনের কাছেও মূলত সোভিয়েত আমলে তৈরি মিগের মতো যুদ্ধবিমানই ছিল।
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
ছবি: Anatoliy Zhdanov/REUTERS
9 ছবি1 | 9
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কিয়েভ অ্যামেরিকায় তৈরি আধুনিক যুদ্ধবিমান দেয়ার জন্য অনুরোধ করছিল। কিন্তু ইউক্রেনের বন্ধু দেশগুলি তাদের মিগ বিমানই দেয়, যেগুলি চালাতে ইউক্রেনের পাইলটরা অভ্যস্ত।
গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের পাইলটদের ইউরোপে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান চালাবার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
বেয়ারবকের অভিযোগ
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে 'ঠান্ডা যুদ্ধ' চালাতে চায়।
বেয়ারবক বলেছেন, সম্প্রতি তারা ইউক্রেনের হিটিং ও জল সরবরাহ পরিকাঠামোতে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করার চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য, ইউক্রেনের মানুষ যেন শীতের সময় ঠান্ডায় জমে মারা যান।
বেয়ারবকের অভিযোগ, পুটিন আরো বড় আকারে এই 'ঠান্ডা যুদ্ধ' চালাতে চাইবেন। এই অবস্থায় ইইউ যেন ইউক্রেনকে নতুন প্রোটেকটিভ শিল্ড দেয়।
তিনি বলেছেন, জার্মানি ইউক্রেনকে এই বছরের শেষের মধ্যে চারটি আইআরআইএস-টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং অতিরিক্ত বিমান-বিধ্বংসী কামান দিতে চায়। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম থাকলে ইউক্রেন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারবে।