ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জি-সেভেন ও ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাসেলসে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন৷ ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পর নিরাপত্তা ও জ্বালানির মতো ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের জন্য চাপ বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইইউ, জি-সেভেন ও ন্যাটোর মতো রাষ্ট্রজোটের প্রাসঙ্গিকতা ও ঐক্যের অভাব নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্তও নানা সংশয় দেখা যেত, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পর নিন্দুকেরা পিছু হঠতে বাধ্য হচ্ছে৷ তিন রাষ্ট্রজোটই অভূতপূর্ব ঐক্য দেখিয়ে দ্রুত একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং আরও খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কায় প্রস্তুতি চালাচ্ছে৷ অ্যাটলান্টিকের দুই প্রান্তের মধ্যে ঐক্যও ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলের অনিশ্চয়তা দূর করতে পেরেছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার ইইউ, জি-সেভেন ও ন্যাটোর জরুরি শীর্ষ সম্মেলন ও সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থিতি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিও ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ন্যাটো ও ইইউ-র শীর্ষ নেতাদের কাছে বক্তব্য রাখছেন৷
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার সূচনার ঠিক এক মাস পর ব্রাসেলসে মিলিত হচ্ছেন দুই জোটের শীর্ষ নেতারা৷ আলোচনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বিরুদ্ধে আরও কড়া শাস্তি, ইউক্রেনের জন্য আরও সহায়তা এবং ইউরোপের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা আরও জোরালো করার মতো বিষয়গুলিই প্রাধান্য পাচ্ছে৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর স্থায়ী সামরিক তৎপরতার প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে৷ এর ফলে রাশিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়া লঙ্ঘন করা হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমন চরম পদক্ষেপের জন্য চাপ বাড়ছে৷ বৃহস্পতিবার রাতে বাইডেন এক সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে পারেন৷
আপাতত রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রুমেনিয়া ও স্লোভাকিয়ায় চারটি নতুন ‘ব্যাটল গ্রুপ’ মোতায়েনের ঘোষণা করেছেন৷ তবে ইউক্রেনের দাবি মেনে সে দেশের উপর ‘নো ফ্লাই জোন’ কার্যকর করতে এখনো নারাজ এই রাষ্ট্রজোট৷ সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সংঘাত এখনো এড়িয়ে চলতে চায় ন্যাটো৷ তবে বাইডেনের আশঙ্কা, রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে৷ এমনকি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না মস্কো৷ ফলে ন্যাটোকে শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার মোকাবিলা করতেই হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক মুখপাত্র৷
রাশিয়ার উপর আরও নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে৷ বিশেষ করে গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামের মতো জ্বালানি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করার প্রশ্নে জার্মানির মতো দেশ এখনো এমন চরম পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুতি নয়৷ রাতারাতি এমন সিদ্ধান্ত নিলে জার্মানি তথা ইউরোপের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছে ওলাফ শলৎসের সরকার৷ ধাপে ধাপে সেই দিশায় অগ্রসর হতে চায় জার্মানি৷ অন্যদিকে ইউক্রেন, অ্যামেরিকা ও মূলত পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি পুটিনের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই উৎস বন্ধ করে দেবার জন্য চাপ দিচ্ছে৷ একমাত্র এভাবেই রাশিয়ার অর্থনীতিকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে পুটিনের ক্ষমতা খর্ব করা সম্ভব বলে তারা মনে করে৷ স্পেন, পর্তুগাল, ইটালি ও গ্রিস জ্বালানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নির্ভরতাকমাতে জরুরি ভিত্তিতে ইউরোপীয় স্তরে সমন্বয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেবার জন্য চাপ দিচ্ছে৷ এ ক্ষেত্রে মার্কিন সহায়তারও আশা করছে ইইউ৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এপি)
পশ্চিমা বিশ্বে রাশিয়ার সাইবার হামলার আতঙ্ক
গোয়েন্দা তথ্যের উল্লেখ করে জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা করতে পারে রাশিয়া৷ পশ্চিমের আরো কিছু দেশও এ আতঙ্কে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কিভাবে সাইবার হামলা চালাতে পারে রাশিয়া? ছবিঘরে দেখুন..
ছবি: Kacper Pempel/REUTERS
পশ্চিমা বিশ্বজুড়ে হ্যাকিং
ক্রেমলিনের স্বার্থে সাইবার যুদ্ধকে কেন্দ্রীয় নীতির অন্তর্ভুক্ত করেছিল রাশিয়া৷ এই নীতির বেশিরভাগটাই ছিল গোপনীয়৷ ক্রেমলিনে কম্পিউটার হ্যাকারদের নিয়ে একটি দল গড়ে তোলার খবর নিশ্চিত করেছিল একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম৷ এরপরই পশ্চিমা বিশ্বে রাশিয়ার সাইবার হামলার ভয়টা আরো বেশি জাঁকিয়ে বসেছে৷
ছবি: Rafael Ben-Ari/Photoshot/picture alliance
ইউক্রেনে ব্ল্যাক এনার্জি হামলা
ইউক্রেনকে অনেক সময় রাশিয়ার হ্যাকারদের ‘খেলাঘর’ বলা হয়৷ নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে তা যাচাই করতে ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়ে এসেছেন রুশ হ্যাকাররা৷ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এবার ইউক্রেনে ‘সাইবার আগ্রাসন’ চালাতে পারে রাশিয়া৷
ছবি: Dominic Lipinski/PA Wire/picture alliance
হামলা পশ্চিমের অন্য দেশেও?
২০১৫ সালে সাইবার হামলায় ব্যাহত হয়েছিল ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা৷ ওই সাইবার হামলার নামকরণ করা হয় ‘ব্ল্যাকএনার্জি’৷ ওই হামলায় অস্থায়ীভাবে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে সমস্যায় পড়েন পশ্চিম ইউক্রেনের ৮০ হাজার নাগরিক৷ কিয়েভেও হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে এক বছর পরে৷ এবার একইরকম হামলা কি পশ্চিমের অন্য দেশেও চালাতে পারে রাশিয়া? এই প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসছে বারবার৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Iamges
নিশ্চিত সাইবার হামলা?
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করার উভয় ঘটনার তদন্তের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ইউক্রেনের সাইবার নিরাপত্তা কর্মী মারিনা ক্রোৎফিল৷ তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘রাশিয়া চাইলে এমন সক্ষমতার দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে৷’’ তবে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল৷ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিসাধন বিল্ট ইন নিরাপত্তার কারণে সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছিলেন মারিনা৷ কিন্তু তবুও শঙ্কাটা রয়ে গিয়েছে৷
ছবি: Torsten Sukrow/SULUPRESS/picture alliance
নটপেটইয়া ম্যালওয়্যার
নটপেটইয়া ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে সাইবার হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছিল অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল সাইবার হামলা হিসেবে পরিচিত৷ সেই সময় কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমে প্রভাব পড়ায় এক হাজার কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল৷ গোটা পৃথিবী যেখানে মুঠোফোনে বন্দি, সেখানে এ জাতীয় হামলার ভয়ও এড়াতে পারছে না পশ্চিমা বিশ্ব৷
ছবি: Fotolia/bofotolux
হ্যাকারদের নিয়োগ ও পশ্চিমের সতর্কতা
২০১৭ সাল থেকেই কলেজের ছাত্র ও পেশাদার প্রোগ্রামারদের চাকরির প্রস্তাব দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছে রাশিয়া৷ সাইবার অপরাধ জগতের সম্ভাব্য প্রতিভার খোঁজেও প্রকাশ্যে তৎপরতা দেখা গিয়েছিল দেশজুড়ে৷ সামরিক ঘাঁটিতে স্থাপন করা সায়েন্স স্কোয়াড্রনস নামের ইউনিটে একাধিক প্রতিভাবানকে নিয়োগ করা হয়েছিল৷ তাই সাইবার অপরাধ থেকে সতর্ক থাকতে বদ্ধপরিকর পশ্চিমা শক্তিগুলি৷
ছবি: Jochen Tack/IMAGO
কলোনিয়ান পাইপলাইনে অ্যামেরিকায় হামলা
২০২১ সালের মে মাসে হ্যাকাররা মার্কিন জ্বালানি তেলের পূর্বাঞ্চলীয় নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ পাইপলাইন বন্ধ করে দেয়৷ এর ফলে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়েছিল অ্যামেরিকা৷ হামলাটি চালিয়েছিল ‘ডার্কসাইড’ নামের হ্যাকারদের একটি দল৷ অনুমান, দলটি রাশিয়াকেন্দ্রিক৷ প্রতিষ্ঠানটি কম্পিউটার সিস্টেমে নিয়ন্ত্রণ পেতে মুক্তিপণ হিসেবে হ্যাকারদের ৪৪ লাখ ডলারের বিটকয়েন দিতে বাধ্য হয়৷
ছবি: Kendall Warner/The News/AP/picture alliance
র্যানসমওয়্যার হামলার আশঙ্কা
বিশ্বের বৃহত্তম গো-মাংস প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান জেবিএসে র্যানসমওয়্যার হামলা চালায় হ্যাকারদের দল ‘আরইভিল’৷ সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা এটা ভেবে শঙ্কিত যে ক্রেমলিন হয়ত হ্যাকারদের যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যগুলোর উপর একসঙ্গে হামলা করার নির্দেশ দেবে যাতে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে বড় আকারের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়৷
ছবি: Frank Rumpenhorst/dpa/picture alliance
সাইবার হামলায় আর্থিক ক্ষতি
র্যানসমওয়্যারের মাধ্যমে হামলার ফলে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে পশ্চিমা বিশ্বে৷ এর ফলে আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে পারে তারা৷ সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে রাশিয়া৷
ছবি: Panthermedia/imago images
পাল্টা জবাব
সংবাদসংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, ইউক্রেনকে রক্ষা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হ্যাকারদের একটি বাহিনী সাইবারস্পেসে গড়ে উঠছে৷ প্রায় ২৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী হ্যাকার যোগ দিয়েছেন ‘তথ্য প্রযুক্তি বাহিনী’-তে৷ রাশিয়াকে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত তারা, উল্লেখ করা হয়েছে এ কথা৷ রয়েছে টেলিগ্রাম গ্রুপও৷ তবে এ হামলায় কী ধরনের জবাব দেয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে৷ সাইবার যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷