রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ফের বৈঠকে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান। যদিও দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান করমর্দন করেননি।
বিজ্ঞাপন
শান্তি প্রস্তাবের পর এই প্রথম দেখা হলো আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের রাষ্ট্রপ্রধানের। সোমবার মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে বৈঠক হয় দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। নাগর্নো-কারাবাখের বর্তমান পরিস্থিতি, দুইপক্ষের আটক সৈন্যদের হস্তান্তরের বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি ফের তাঁরা বৈঠকে বসবেন।
নাগর্নো-কারাবাখে বিপদে সাধারণ মানুষ
নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ প্রবেশ করলো দশম দিনে৷ কিন্তু এখনও মিলছে না যুদ্ধবিরতির আভাস৷ দুই পক্ষের বোমা বর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে বসতবাড়িও৷ ঘটছে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা৷
ছবি: Reuters
প্রোপাগান্ডা চলছে
মাঠে চেয়ে বেশি লড়াই চলছে মুখে৷ দুই পক্ষই আশ্রয় নিচ্ছে বাগাড়ম্বরের৷ নিজেদের ছোঁড়া গোলায় সাধারণ মানুষ মারা গেলেও দুই পক্ষই অপর পক্ষকে দুষছে যুদ্ধের নিয়ম না মানার জন্য৷ হামলা নিয়ে দুই পক্ষের পালটা দাবিতে সংকট আরো বাড়ছে৷
ছবি: David Ghahramanyan/NKR InfoCenter/PAN Photo/Reuters
নাগরিক সেবা বন্ধ
কারবাখের প্রধান শহর স্টেপানকিয়ার্টে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে আজারবাইজান৷ এতে শহরটির বেশিরভাগ নাগরিক সেবা প্রায় বিধ্বস্ত৷ অনেক নাগরিকই বিদ্যুৎ, জলের সংকটে দিন কাটাচ্ছেন৷ ছবিতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
আজারাবাইজানে হামলা
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী একাধিক শহরেও আর্মেনীয় বাহিনীর হামলার খবর পাওয়া গেছে৷ গ্যাঞ্জা শহরে হামলার কথা স্বীকার করেছে আর্মেনিয়াও৷ শহরটিতে হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে৷
ছবি: Gor Kroyan/Reuters
নিত্যদিনের ভয়
বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বাঙ্কারে৷ কেউ কেউ যাওয়ার জায়গা না থাকায় আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়৷ ছবিতে রাস্তায় পড়ে থাকা বিধ্বস্ত একটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ৷
ছবি: Reuters
পাহারায় বৃদ্ধা
বয়সের ভারে এই বৃদ্ধার নড়াচড়ারও সামর্থ্য নেই৷ নিজের বাসার দরজায় বসে আছেন বন্দুক হাতে৷ তবে মুখোমুখি সংঘর্ষের চেয়ে রকেট হামলাই এখন সবচেয়ে বড় ভয় স্টেপানকিয়ার্টের মানুষের কাছে৷
ছবি: Pablo Gonzalez/Agencia EFE/Imago Images
রাস্তাঘাটে রকেট
গত কয়েকদিনে এত বেশি রকেট হামলা হয়েছে শহরটিতে যে, এখন রাস্তা, মাঠ সর্বত্রই রকেট শেল পড়ে থাকতে দেখা যায়৷
নাগর্নো-কারাবাখের একটি শহর ও সাতটি গ্রাম পুনর্দখলের দাবি করেছে আজারবাইজন৷ কয়েকটি ভিডিওতে কারবাখের গ্রামে আজেরি সৈন্যদের পতাকা হাতে ঘুরতেও দেখা গেছে৷
ছবি: Karo Sahakyan/ArmGov/PAN Photo/Reuters
যুদ্ধবিরতি, সমঝোতা?
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুরু থেকেই দুই দেশকে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে৷ তবে তাতে সাড়া মেলেনি৷ এরই মধ্যে দুই পক্ষ মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ৷
ছবি: via REUTERS
আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা
তুরস্ক এরই মধ্যে সরাসরি আজারবাইজানকে সমর্থন দিয়েছে৷ সীমান্তবর্তী ইরান এবং রাশিয়া দুই দেশকে আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে৷ তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, দীর্ঘদিন এ যুদ্ধ চলতে থাকলে প্রতিবেশী দেশগুলোও একসময় এতে জড়িয়ে পড়তে পারে৷ সেক্ষেত্রে বড় আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে৷
ছবি: Umit Bektas/Reuters
9 ছবি1 | 9
নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান। এর আগে নব্বইয়ের দশকে তাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। আন্তর্জাতিক ভাবে নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের জায়গা বলে স্বীকৃত। কিন্তু সেখানে বসবাস করেন আর্মেনিয় জনগোষ্ঠীর মানুষ। ফলে কার্যত একটি স্বতন্ত্র সরকার সেখানে তৈরি করে ফেলেছিল আর্মেনিয়ার মানুষ। তাদের মদত দিয়েছিল আর্মেনিয়ার সরকার। এই বিষয়টি নিয়েই সেপ্টেম্বরে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। বেশ কিছু দিন যুদ্ধের পরে আজারবাইজান অনেকটা জমিই পুনরুদ্ধার করে। বস্তুত, নাগর্নো-কারাবাখের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলি আজারবাইজানের হাতে চলে আসে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতার জন্য আসরে নামে রাশিয়া। বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় তারা দুই দেশের মধ্যে একটি শান্তিপ্রস্তাব প্রতিষ্ঠা করতে পারে। যাতে ঠিক হয়, এই মুহূর্তে যে যেখানে অবস্থান করছে, সে সেখানেই থাকবে। আজারবাইজান বিষয়টিকে নিজেদের জয় হিসেবেই দেখে। আর্মেনিয়ায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। আজারবাইজান নাগর্নো-কারাবাখের বহু এলাকায় দেশের পতাকা লাগিয়ে দেয়।
যুদ্ধ থামলেও দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক থামেনি। এখনো বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। তারই মধ্যে সোমবার আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এবং আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনয়ান মস্কোয় পৌঁছান। সেখানে ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এদিনের বৈঠকে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান করমর্দন করেননি। পুটিনকে দুই দেশই যুদ্ধবন্দিদের ছাড়ার বিষয়ে সক্রিয় হতে আর্জি জানিয়েছেন। পুটিন জানিয়েছেন, শান্তি প্রস্তাবের পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনার সময় হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এখনো যা বিতর্ক আছে, তার শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রস্তাবও দিয়েছেন পুটিন। সেই মতোই আগামী ৩০ জানুয়ারি পরবর্তী বৈঠকের দিন স্থির হয়েছে।