ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার কয়েকটি বড় আর্থিক এবং জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও চলতি মাসের শেষ নাগাদ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকে অগ্রসর হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার উপরে বুধবার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো যুক্তরাষ্ট্র৷ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত অস্ত্রধারীদের নিয়ন্ত্রণে দেশটি ব্যর্থ হওয়ায় ওয়াশিংটন এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বুধবার বলেছেন, ‘‘আমাদের জোটসঙ্গী, যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, তাদের সঙ্গে নিয়ে বারংবার একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছি যে, রাশিয়ার অবশ্যই ইউক্রেনে অস্ত্র এবং যোদ্ধার স্রোত বন্ধ করতে হবে৷''
ওবামা বলেন, ‘‘এ সব বিষয়ে রাশিয়া এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে৷ বরং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি সমর্থন এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের উপর হস্তক্ষেপ এখনো অব্যাহত রেখেছে সে দেশ৷''
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
বারাক ওবামা মনে করেন, রাশিয়ার উপর জারি করা সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা শুধু অর্থপূর্ণই নয় সুনির্দিষ্টও৷ আর এই নিষেধাজ্ঞার কারণে মার্কিন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে দিকেও নজর দেয়া হয়েছে৷
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন নিষেধাজ্ঞায় মূলত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক, বাণিজ্যিক এবং প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে রয়েছে ‘ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স', গাসপ্রম ব্যাংক, তেল কোম্পানি রসনেফট, প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি নোভাটেক এবং ‘মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশন৷'
এদিকে, নতুন নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘ডেড এন্ড' পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ আর এ সব নিষেধাজ্ঞা শেষমেষ মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থি হবে বলে মনে করেন তিনি৷
নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর পথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন
এদিকে রাশিয়ার উপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে মনস্থির করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)৷ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার উপর প্রত্যক্ষ বা আর্থিকভাবে হস্তক্ষেপ করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনবে ইইউ৷ চলতি মাসের শেষনাগাদ এরকম একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে ব্রাসেলসে বুধবার এক বৈঠকের পর জানিয়েছেন ইইউ নেতারা৷
পাশাপাশি ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংককে রাশিয়ায় বিনিয়োগ না করার আহ্বান জানিয়েছেন ইইউ নেতারা৷ আর ‘ইউরোপিয়ান রিকন্সট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে' ভবিষ্যতে রাশিয়ায় বিনিয়োগ করতে বারন করা হয়েছে৷