ইউক্রেন আক্রমণ করলে কড়া রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হবে রাশিয়াকে। বার্তা ন্যাটো প্রধান এবং জার্মান চ্যান্সেলরের।
বিজ্ঞাপন
যে কোনো মুহূর্তে রাশিয়ার সেনা ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে। সোমবার এক বৈঠকে এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শোলৎস এবং ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। সোমবার বার্লিনে এক বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছিলেন তারা। রাশিয়ার বর্তমান অবস্থান নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ কথা হয়। তারপরেই নিজেদের আশঙ্কার কথা সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করেন তারা।
শোলৎস কী বলেছেন
বৈঠকের পর শোলৎস বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকের রাস্তা সবসময় খোলা আছে। কিন্তু রাশিয়াকে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। যুদ্ধের অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। শোলৎসের হুমকি, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে তার জন্য কড়া রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মূল্য দিতে হবে তাদের। রাশিয়া যা কল্পনাও করতে পারছে না। ন্যাটো এবং ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
রাশিয়া-ন্যাটো বৈঠকেও মেলেনি সমাধানসূত্র
ইউক্রেন সংকট সেই তিমিরেই। ন্যাটোর বৈঠকেও সমাধানসূত্র মেলেনি। রাশিয়ার সঙ্গে আরো আলোচনার প্রস্তাব ন্যাটো সদস্যদের।
ছবি: Benoit Doppagne/dpa/picture alliance
ঐতিহাসিক বৈঠক
২০১৯ সালে শেষবার ন্যাটোর দেশগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল রাশিয়া। বুধবার ফের তারা ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়। এদিন ন্যাটোর ৩০টি সদস্য দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন রাশিয়ার প্রতিনিধিরা।
ছবি: Olivier Hoslet/AFP
অধরা সমাধানসূত্র
ন্যাটো প্রধান জেন স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সহজে তার সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রথম আলোচনায় তা মিললেও আরো আলোচনার পরিসর তৈরি হয়েছে।
অ্যামেরিকা-সহ ন্যাটোর অভিযোগ, ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে রাশিয়া। বিপুল পরিমাণ সেনা মজুত করা হয়েছে সেখানে। রাশিয়ার বক্তব্য, আত্মরক্ষার্থেই তারা সে কাজ করেছে। ইউক্রেনের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ইউক্রেনের ভিতরে রাশিয়া সেনা মোতায়েন করেছে।
অ্যামেরিকা-সহ একাধিক পশ্চিমা দেশের দাবি, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হোক। রাশিয়া এর ঘোর বিরোধী। ন্যাটোর বৈঠকে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইউক্রেনকে সদস্যপদ দিলে ফলাফল ভালো হবে না।
ছবি: Nick Connolly/DW
বৈঠকের আলোচনা
স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সদস্যপদ, রাশিয়ার সেনা মজুত সব বিষয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। দুইপক্ষ একটি বিষয়ে সহমত হয়েছে। অস্ত্রের ব্যবহার কমাতে হবে। মিসাইলের ব্যবহার কমাতে হবে। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানসূত্র খুঁজতে হবে।
ছবি: Andriy Dubchak/AP Photo/picture alliance
অ্যামেরিকার প্রতিক্রিয়া
এদিনের বৈঠকের পর অ্যামেরিকার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাশিয়া নিজের অবস্থানে অনড়। কিন্তু রাশিয়ার দাবি কাছে মাথা নত করা হবে না। আরো আলোচনার পক্ষে মত দিয়েছে অ্যামেরিকা।
সোভিয়েত আমলে ইউক্রেন ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। পরবর্তী সময়ে তা রাশিয়া থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং নতুন রাষ্ট্র তৈরি করে। সেই সময় থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের বিতর্ক। বিত্রক আরো বাড়ে গত দশকে ক্রাইমিয়া রাশিয়া দখল করার পর। ইউক্রেনের দাবি, অবৈধভাবে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করেছে। অ্যামেরিকা এবং ন্যাটোর অধিকাংশ দেশ ইউক্রেনের সমর্থনে কথা বলেছে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
তীব্র সংঘাত
এই পরিস্থিতিতে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলির। জো বাইডেন এবং ভ্লাদিমির পুটিন একাধিক বৈঠক করেছেন। এবং একে অপরকে সতর্ক করেছেন। হুমকি পাল্টা হুমকির ঘটনা ঘটছে প্রায় রোজই। তারই মধ্যে ব্রাসেলসে ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন সকলে।
9 ছবি1 | 9
স্টলটেনবার্গ কী বললেন
ন্যাটো প্রধান জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার রাস্তা খোলা আছে। রাশিয়া কী চায়, তা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। কিন্তু তার আগে রাশিয়াকে যুদ্ধের পথ থেকে সরে আসতে হবে। ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
বস্তুত, রাশিয়া শেষ বৈঠকের পর জানিয়ে দিয়েছে, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত ন্যাটোর আর কোনো বৈঠকে তারা অংশ নেবে না। স্টলটেনবার্গ রাশিয়াকে এই সিদ্ধান্তও পুনর্বিবেচনা করে দেখতে বলেছেন।
বাস্তব পরিস্থিতি
ন্যাটোর বক্তব্য, ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে রাশিয়া। রাশিয়ার গুপ্তচররা ইউক্রেনের ভিতরে ঢুকে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ। যদিও রাশিয়া এই সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে। রাশিয়ার বক্তব্য, ইউক্রেনকে কোনোভাবেই ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না। ন্যাটো এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে, রাশিয়াও ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে না।
২০০৮ সালে ন্যাটো ইউক্রেনকে তাদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ন্যাটো নতুন করে আলোচনা শুরু করেছিল। তারপরেই পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়। ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া সেনা মোতায়েন করে।
অ্যামেরিকাও এদিন ফের রাশিয়াকে হুমকি দিয়েছে। বলা হয়েছে, সেনা না সরালে কড়া নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেবে অ্যামেরিকা। সোমবার মস্কোয় গিয়ে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবকও রাশিয়াকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে এসেছেন।