ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়ায় অ্যামেরিকা, ইইউ ও জার্মানি রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাচ্ছে৷ ইউক্রেনে রাশিয়ার আরো সামরিক তৎপরতার আশঙ্কা করছে ন্যাটো৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন শুধু ইউক্রেনের ঐক্য ও অখণ্ডতা আবার চ্যালেঞ্জ করে বিরত থাকবেন, না ধাপে ধাপে গোটা দেশটি দখল করার পথে অগ্রসর হবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ পূবের ডনবাস এলাকার দনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে ‘স্বাধীন প্রজাতন্ত্রের’ স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে আপাতত রুশ ‘শান্তিরক্ষী’ সেনা মোতায়েনের তোড়জোড় করছে রাশিয়া৷
এমন পদক্ষেপের কড়া নিন্দার পাশাপাশি প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে পশ্চিমা জগত৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করে রাশিয়ার উপর বেশ কিছু আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন৷ সে দেশের দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কয়েকজন রুশ শিল্পপতি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপের আওতায় থাকছে৷ ইউক্রেনের উপর আরো আগ্রাসন ঘটলে আরো কড়া নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে পুটিনের সঙ্গে বাইডেনের শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউস৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনও চলতি সপ্তাহে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন না৷ ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও লাভরভের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন৷ নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বাল্টিক অঞ্চলের ন্যাটো সদস্য দেশ ও পোল্যান্ডে আরও সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নও ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাশিয়ার উপর প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ যে সব রুশ জনপ্রতিনিধি ইউক্রেনের ভূখণ্ডে দুই রুশ-প্রধান অঞ্চলের স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছেন, তাঁরা ছাড়াও আরও ২৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সেই তালিকায় রয়েছে৷ জার্মানি বিতর্কিত ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ গ্যাস পাইপলাইন চালু করার ছাড়পত্র আপাতত মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও সরাসরি রাশিয়া থেকে জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ আপাতত সম্ভব হবে না৷ ব্রিটেন, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানও রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে৷
ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, কিছু রুশ সৈন্য ইতোমধ্যেই ডনবাস অঞ্চলে প্রবেশ করেছে৷ রাশিয়া ইউক্রেনের উপর পুরোদমে হামলা চালাতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন৷ মঙ্গলবার রুশ সংসদের উচ্চ কক্ষ সে দেশের সেনাবাহিনীকে বিদেশে সশস্ত্র অভিযানের ঢালাও ছাড়পত্র দেওয়ায় সেই আশঙ্কা আরো বেড়ে যাচ্ছে৷ রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিয়েভসহ ইউক্রেনের সব দূতাবাসের কর্মীদের প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য এখনো যুদ্ধের আশঙ্কা দেখছেন না৷ তবে উত্তেজনা বাড়লে তিনি দেশে সামরিক আইন কার্যকরার করার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
রাশিয়ার আক্রমণের শঙ্কা, ঘর ছাড়ছেন ইউক্রেনের মানুষ
ইউক্রেনের দুই বিচ্ছিন্ন অংশের স্বীকৃতি ও সেখানে ‘শান্তিরক্ষী বাহিনী’ পাঠানোর ঘোষণা করে রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন দৃশ্যত সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছেন৷ আক্রমণের শঙ্কায় সীমান্তবর্তী এলাকা ছাড়ছেন পূর্ব ইউক্রেনের বাসিন্দারা৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
বিদ্রোহীদের দখলে
রাশিয়াপন্থি বিদ্রোহীগোষ্ঠীর দখলে রয়েছে পূর্ব ইউক্রেনের একাংশ৷ সেখান থেকে রাশিয়ার ভরোনেজহের অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকার জন্য পা বাড়িয়েছেন অসংখ্য মানুষ৷ সপরিবারে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন অনেকেই৷
ছবি: Vladimir Lavrov/REUTERS
নিরাপদ গন্তব্যে পাড়ি
ইউক্রেন সীমান্তে হওয়া রাশিয়ার সেনা বাহিনীর যে কোনো আক্রমণাত্মক কার্যকলাপের দাম দিতে হবে রাশিয়াকে- পশ্চিমের দেশগুলি এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আগেই৷ কিন্তু পুটিন অবিচল৷ তাই যুদ্ধের শঙ্কায় ঘর ছাড়ছেন মানুষ৷ রাশিয়ার রস্তভের তাগানরগ শহরে সমাজকল্যাণ বিভাগের সামনে অজস্র মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে৷ এই ব্যক্তিদের পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শিশু
ট্রেনে করে নিরাপদ এলাকার দিকে চলে যাচ্ছেন অনেকেই৷ ট্রেনের মধ্যে ইউক্রেনীয় একটি শিশুর ছবি ধরা পড়েছে আলোকচিত্রীর ক্যামেরায়৷ যুদ্ধ, রাজনীতি- কোনোকিছুর মানেই সে বোঝে না এখনো৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
অস্থায়ী আয়োজন
রস্তভের তাগানরগে একটি স্থানীয় স্পোর্টস স্কুলে অস্থায়ী আশ্রয় তৈরি করা হয়েছে৷ সেখানে এক খুদেকে সামলানোর চেষ্টা করছেন তার অভিভাবক৷ সারি সারি বিছানা, বালিশ আর কম্বলের ব্যবস্থা করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
নতুন আশ্রয়ের পথে
রস্তভ থেকে ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন এই ব্যক্তি৷ বিদ্রোহী অধ্যুষিত পূর্ব ইউক্রেন থেকে তাকেও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে৷ ক্রাচে ভর দিয়ে নতুন গন্তব্যের দিকে পাড়ি দিচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
মানবিক সহায়তা
মানবিক সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে অনেক সংস্থা৷ সবজি প্যাক করার কাজ করছেন কর্মীরা৷
ছবি: Alexey Pavlishak/REUTERS
খাবারের ব্যবস্থা
ক্রিমিয়ার সিমফেরোপলে পাঠানো হবে এই প্যাকেটজাত খাবারগুলি৷ সবরকম পরিস্থিতির কথা ভেবে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে৷ পানীয় জল-সহ খাবারের প্যাকেট পাঠানোর কাজ চলছে৷
ছবি: Alexey Pavlishak/REUTERS
পুটিনের ঘোষণার ফল
সোমবার পূর্ব ইউক্রেনের রুশ-সমর্থিত দুই অঞ্চল দনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন৷ এর ফলে সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে৷ ভয় বেড়েছে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও৷ নিরাপদ এলাকায় সরানো হয়েছে অনেককে৷ এক বৃদ্ধা একা বসে রয়েছেন রস্তভের অস্থায়ী আশ্রয়ে৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
ভবিষ্যতের পথে
ভরোনেজহের অস্থায়ী আশ্রয়ে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় একদল মানুষকে৷ নিরাপত্তার কথা ভেবেই ঘর ছাড়তে হয়েছে তাদের৷ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, কী করবেন কেউ জানেন না৷
ছবি: Vladimir Lavrov/REUTERS
হামলার শঙ্কা
যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী৷ ক্রিমিয়ার উপকূলে যুদ্ধজাহাজও ঘোরাফেরা করছে৷ রুশপন্থি বিদ্রোহীরা যুদ্ধের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষদের সরিয়ে দিচ্ছে রাশিয়ায়৷ বিশেষ করে নারী, শিশু, প্রবীণদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে৷ অভিভাবিকার হাত ধরে দুই বালিকা চলেছে অস্থায়ী আশ্রয়ের দিকে৷ কিন্তু মুখে অমলিন হাসি৷ সংকটময় পরিস্থিতির কথা হয়তো তারা বোঝেনি এখনও৷