হারানো সব অঞ্চল সামরিক পন্থায় ফিরে পেতে চায় না ইউক্রেন
২৯ মে ২০২২
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান যে ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ার কাছে হারানো ইউক্রেনের সব অঞ্চল সামরিক প্রচেষ্টায় ফিরে পেতে গেলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হবে৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আমরা যদি এভাবে (সামরিক পন্থায়) চেষ্টা করি তাহলে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাবে,'' বলেন জেলেনস্কি৷
তবে, তিনি এটাও বলেছেন যে ‘‘ইউক্রেন সবকিছু ফিরে পাবে৷ সবকিছু৷’’
দেশের পূর্বাঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে জেলেনস্কি জানান, সেখানকার পরিস্থিতি ‘অবর্ণনীয় রকমের কঠিন'৷ এসব অঞ্চলে রাশিয়া ক্রমাগত নিজেদের দখলে নিচ্ছে৷
শনিবার দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ করে ডোনবাস এবং খারকিভ অঞ্চলের পরিস্থিতি খুবই জটিল৷ সেখানে রাশিয়ান সেনারা (যুদ্ধের) কিছু ফলাফল অন্তত নিজেদের পক্ষে নিতে চাচ্ছে৷''
এদিকে, ইউক্রেনের লিমান অঞ্চলের দখল নেওয়ার পর রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী শহর সিভিরোডোনেটস্ক দখলে হামলা জোরদার করে৷
বার্তাসংস্থাগুলো জানায়, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডোনবাসের দখল নিতে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ান সেনারা৷ এ অঞ্চলের সিভিরোডোনেটস্ক ও লিসিচান্সক শহরের চারপাশে নিজেদের অবস্থান শক্তশালী করছে৷
লিসিচান্সক অঞ্চলের গভর্নর সেরগি গাইডে টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় জানান, লিসিচান্সকের পরিস্থিতি মারাত্মক খারাপ৷ একটি আবাসিক ভবনে রাশিয়ার বোমার আঘাতে একজন মেয়ে নিহত হয়েছেন এবং চারজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷
দেশটির ডোনটেস নদীর পুর্বাঞ্চলীয় শহর সিভিরোডোনেটস্কের দখল নিতে হামলা অব্যহত রেখেছে রাশিয়ান সেনারা৷
সরাসরি ও আন্তরিক আলোচনার আহ্বান
চলমান যুদ্ধের মাঝেই জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলনেস্কির সাথে ‘সরাসরি ও আন্তরিক আলোচনা' চালানোর আহ্বান জানান৷
পুটিনের সাথে ফোনে ৮০ মিনিটের আলোচনায় ইউরোপের এই দুই নেতা দ্রুত যুদ্ধ বিরতির এবং ইউক্রেন থেকে সৈন্য প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানান৷
আরআর/এআই (এএফপি, এপি, ডিপিএ রয়টার্স)
ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করে ২৪ ফেব্রুয়ারি৷ নিজস্ব অস্ত্র ছাড়াও পশ্চিমাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার মোকাবিলা করছে ইউক্রেন৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
কিনজাল মিসাইল
মিগ-৩১ বিমানের গায়ে সাদা কিনজাল মিসাইল দেখতে পাচ্ছেন৷ শব্দের গতির চেয়ে এর গতি প্রায় পাঁচগুণ বেশি৷ তাই একে হাইপারসনিক মিসাইল বলা হয়৷ ১৯ মার্চ রাশিয়া জানায়, ইউক্রেনের পশ্চিমের একটি বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করতে এই মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর ২৯ মার্চ এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া নিয়মিত এমন মিসাইল ব্যবহার করছে৷ ছবিটি ২০১৮ সালে তোলা৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
ভ্যাকুয়াম বোমা
এই বোমা থার্মোব্যারিক বোমা বা অ্যারোসল বোমা নামেও পরিচিত৷ ছবিতে রাশিয়ার টিওএস-১এ থার্মোব্যারিক রকেট লঞ্চার দেখা যাচ্ছে, যেটা থেকে ভ্যাকুয়াম বোমা ছো়ড়া হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধে এই সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷ ভ্যাকুয়াম বোমার আঘাতে অনেক বড় আগুনের গোলা সৃষ্টি হয়৷ এটি সুরক্ষিত ভবন, যন্ত্রপাতি ধ্বংস করতে পারে৷ মানুষকে মেরে ফেলতে কিংবা আহত করতে পারে৷
ছবি: Leonid Faerberg/ZUMAPRESS/picture alliance
ক্লাস্টার বা গুচ্ছ বোমা
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল বাচেলেট বুধবার জানান, রাশিয়া জনবহুল এলাকায় অন্তত ২৪ বার এমন বোমা ব্যবহার করেছে বলে তার অফিস অভিযোগ পেয়েছে৷ এই বোমার এমন নামকরণের কারণ এই বোমায় অনেকগুলো ছোট ছোট বোমা (বম্বলেট) থাকে৷ ক্লাস্টার বোমা বিস্ফোরিত হলে ছোট বোমাগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে একটা বিশাল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: MOHAMMED ZAATARI/AA/picture alliance
কালিবা ক্রুজ মিসাইল
ইউক্রেনের সামরিক ও সরকারি ভবনে হামলা চালাতে কালিবা ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করেছে রাশিয়া৷ ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
ছবি: Tass/imago images
ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক মিসাইল
এই মিসাইল সর্বোচ্চ ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে৷ বড় ভবন ও সুরক্ষিত, দুর্ভেদ্য অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে এটি৷ বেলারুশ থেকে কিছু ইস্কান্দার মিসাইল ইউক্রেনের দিকে ছোড়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: Russian Defense Ministry via AP/picture alliance
আর্টিলারি সিস্টেম
২৬ ফেব্রুয়ারির এই ছবিতে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার বেলগোরোদ এলাকায় ‘উরাগান’ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম দেখা যাচ্ছে৷ তার দুদিন আগে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া৷ উরাগান ছাড়াও রাশিয়ার কাছে সোভিয়েত আমলের ডিজাইন করা ‘গ্রাট’, ‘স্ম্যার্শ’ রকেট লঞ্চার আছে৷
ছবি: Mikhail Voskresenskiy/SNA/imago images
ফসফরাস বোমা?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২৫ মার্চ জানান, রাশিয়া ইতিমধ্যে ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে৷ লুহানস্কের গভর্নর জানান একটি গ্রামে এমন বোমা হামলায় দুই শিশুসহ কমপক্ষে চারজন মারা গেছেন৷ জেলেনস্কির মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানান, রাশিয়া ‘‘কখনও আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন করেনি৷’’ ছবিতে ১৯৪৫ সালে ফসফরাস বোমার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: United Archives International/imago images
জ্যাভলিন মিসাইল
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ব্যবহার করছে ইউক্রেন৷ পশ্চিমা দেশগুলো এসব তাদের সরবরাহ করেছে৷ গত ডিসেম্বরের ছবিতে জ্যাভলিনসহ ইউক্রেনের সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷
এটি একটি অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল৷ এটিও পশ্চিমের কাছ থেকে পেয়েছে ইউক্রেন৷
ছবি: LEILA GORCHEV/AFP/Getty Images
বায়রাকতার ড্রোন
যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেনকে এই ড্রোন দিয়েছিল তুরস্ক৷ এটি ব্যবহার করে রাশিয়ার মিলিটারি কনভয়ের উপর হামলার ভিডিও প্রকাশ করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী৷
ছবি: Emrah Yorulmaz/AA/picture alliance
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব
ওরিক্স মিলিটারি অ্যানালিসিস ব্লগের তথ্য উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত রাশিয়ার ৩১৮টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়েছে কিংবা সেনারা ফেলে পালিয়ে গেছেন৷ এছাড়া পাঁচশর বেশি সাঁজোয়া যান, ১৬টি ফাইটার জেট, ৩৫টি হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে ওরিক্স৷ আর ইউক্রেন হারিয়েছে ৭৯টি ট্যাঙ্ক, প্রায় ২০০টি সাঁজোয়া যান, ১২টি জেট ও ১৩টি জাহাজ৷