যতই তিনি ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন, রাশিয়ার কালো ছায়া ততই তাঁর ঘাড়ে চাপছে৷ এবার ট্রাম্প প্রশাসনের উপর রাশিয়ার প্রভাব নিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর দাবি প্রকাশ্যে এলো৷ ট্রাম্প আর কতকাল এই চাপ সামলাতে পারবেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
১৮টি দিন৷ ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে এই ক'টা দিন নিযুক্ত ছিলেন জেনারেল মাইকেল ফ্লিন৷ রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি কারো অজানা নয়৷ তবে সেই সম্পর্ক আসলে কতটা গভীর, তা-ও এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি৷ ওয়াশিংটনে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে সত্য গোপন করার অভিযোগে শেষ পর্যন্ত তাঁকে বরখাস্ত করা হয়৷ ট্রাম্প ভেবেছিলেন, এর ফলে ফ্লিনকে নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়ে যাবে৷ কিন্তু আরেক বরখাস্ত হয়ে যাওয়া কর্মকর্তা সংসদের এক কমিটির সামনে মারাত্মক অভিযোগ আনায় গোটা বিষয়টি আবার প্রকাশ্যে গুরুত্ব পাচ্ছে৷
ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণ করার সময়ে কার্যনির্বাহী অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন স্যালি ইয়েটস৷ প্রশাসনের প্রথম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির সময় তিনি এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছিলেন৷ বলেছিলেন, এই নির্বাহী আদেশ সংবিধান-বিরোধী৷ ফলে ট্রাম্প তাঁকে বরখাস্ত করেন৷ এতকাল নীরব থাকার পর তিনি এবার মুখ খুলেছেন৷ সেনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটির সামনে সোমবার তিনি বলেন, জানুয়ারি মাসেই তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে জেনারেল ফ্লিন সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছিলেন৷ বলেছিলেন, রাশিয়া ফ্লিন সম্পর্কে এমন কিছু জানে, যা তারা ব্ল্যাকমেলের অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাতে পারে৷
উল্লেখ্য, স্বয়ং বারাক ওবামাও ট্রাম্পকে ফ্লিনের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন বলে সম্প্রতি জানা গেছে৷ ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও ২০১৫ সালের শেষেট্রাম্পের কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে রাশিয়ার সন্দেহজনক আদানপ্রদান টের পেয়ে সেই তথ্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির হাতে তুলে দিয়েছিল বলে দ্য গার্ডিয়ান সংবাদপত্র দাবি করেছিল৷ স্যালি ইয়েটস বলেন, সেই দাবি একেবারে সত্য৷
বলা বাহুল্য, রাশিয়ার সঙ্গে নিজের টিমের যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে ভুগছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সোমবারের ঘটনার পর তিনি যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে ক্ষুব্ধ হয়ে বেশ কয়েকটি টুইট করেন৷
কিন্তু স্যালি ইয়েটস সতর্ক করে দেওয়া সত্ত্বেও হোয়াইট হাউস দীর্ঘ সময় ধরে জেনারেল ফ্লিনের বিষয়ে কেন এত নীরব ছিল, সেই প্রশ্ন নতুন করে উঠে আসছে৷ সংসদের তদন্তের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলির তদন্তে আরও কী উঠে আসে, সে বিষয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে৷
বেকায়দায় ট্রাম্প, চারিদিকে অরাজকতা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবার পরেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছেন, কখনো প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগে জেরবার হচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প টিম-এর সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সহ একাধিক মহলের যোগসূত্র নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে৷ এর মধ্যে জাতীয় উপদেষ্টা হিসেবে মাইকেল ফ্লিনকে বিদায় নিতে হয়েছে৷ একাধিক তদন্তের মুখে পড়েছেন অভিযুক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Lovetsky
ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা
কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণের উপর তড়িঘড়ি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ট্রাম্প৷ আদালতের হস্তক্ষেপে প্রথম নির্বাহী আদেশ বাতিল হবার পর দ্বিতীয়টিও থামিয়ে দিয়েছে আদালত৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
স্বাস্থ্য বিমা বিপর্যয়
তথাকথিত ‘ওবামাকেয়ার’ বা পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে স্বাস্থ বিমা খাতে যে সংস্কার চালানো হয়েছিল, তা বাতিল করতে বদ্ধপরিকর ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে রিপাবলিকান দলেরই একটা অংশ ট্রাম্প প্রশাসনের বিকল্প আইনের বিরোধিতা করায় এ যাত্রায় হাত পুড়িয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে এখনো হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
স্বজনপোষণ
প্রচলিত বিধিনিয়ম উপেক্ষা করে জামাই ও মেয়েকে হোয়াইট হাউসে উপদেষ্টার পদ দিয়ে প্রবল বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সমালোচকদের মতে, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থের সংঘাত এক্ষেত্রে অনিবার্য৷ অবৈতনিক ফেডারেল কর্মী হিসেবে তাঁরা অনেক রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যেরও নাগাল পেতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Thew/Epa
পরিবেশের ক্ষতি
বহু বছর ধরে দরকষাকষির পর জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে অ্যামেরিকা সহ বিশ্বের দেশগুলি প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে৷ সেই ঐকমত্যের পেছনে ওবামা প্রশাসনের উদ্যোগ নস্যাৎ করে ট্রাম্প পরিবেশের ক্ষতি করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Thibault Camus
ক্ষমতার অহমিকা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প বার বার ‘একলা চলো রে’ নীতির পথে চলার চেষ্টা করছেন৷ চটজলদি সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে চান তিনি৷ নিজের মন্ত্রিসভা তো নয়ই, এমনকি রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও সংসদের দুই কক্ষের সঙ্গেও আলোচনা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন তিনি৷ এই অবস্থায় প্রশাসনের ভিতর থেকেই অনেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Barria
প্রশাসনে অরাজকতা
একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে প্রশাসনের কাঠামোর মধ্যে কোনো স্পষ্ট নীতি বা বিভিন্ন বিষয়ে ধারাবাহিকতার অভাব বার বার প্রকট হয়ে উঠছে৷ এমনকি খোদ ট্রাম্প অনেক বিষয় পুরোপুরি না বুঝেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷ এমন অরাজক পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় লোকবলের অভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/A. Harnik
জনপ্রিয়তার অভাব
সাম্প্রতিক কালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্যকালের প্রথম পর্যায় জনমত সমীক্ষায় এমন বিরোধিতার সম্মুখীন হননি৷ এমনকি রিপাবলিকান দলের অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিও তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন৷ বিচার বিভাগ বার বার হস্তক্ষেপ করছে৷ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের বৈরি সম্পর্ক পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলছে৷