রাশিয়ার ক্ষমতাকেন্দ্রে সংস্কারের ঘোষণা করলেন পুটিন
১৬ জানুয়ারি ২০২০
‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান' ঘটিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকার লক্ষ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তনের প্রস্তাব এনেছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷ গণভোটে জনগণ এ বিষয়ে রায় দেবে৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার আইন ও সংবিধানকে সুকৌশলে নিজের সুবিধামতো কাজে লাগিয়ে গত প্রায় দুই দশক ধরে ক্ষমতায় টিকে রয়েছেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সীমিত দুটি কার্যকালের শেষে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেছেন৷ তারপর আবার ফিরে গেছেন ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্টের দফতরে৷ তার একান্ত অনুগত দিমিত্রি মেদভেদেভ প্রতিবার ‘খালি' পদ গ্রহণ করে পুটিনের নির্দেশ পালন করেছেন৷ ১৯৯৯ সাল থেকে এমনটা হয়ে আসছে৷ ৬৭ বছর বয়সি পুটিনের বর্তমান কার্যকাল শেষ হচ্ছে ২০২৪ সালে৷ তারপর তাঁকে আবার প্রধানমন্ত্রী পদে ‘ফিরতে' হবে৷
এতকাল চলে আসা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে বুধবার পুটিন রাশিয়ার রাজনৈতিক কাঠামোয় ‘সংস্কার' আনার ঘোষণা করলেন৷ তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী এবার প্রেসিডেন্টের বদলে প্রধানমন্ত্রীর পদকে আরও শক্তিশালী করে তোলার সময় এসে গেছে৷ সংসদ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে তাঁর হাতে আরও ক্ষমতা তুলে দেবে৷ অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট দেশের সাংবিধানিক প্রধান হয়ে উঠবেন৷ এই প্রস্তাবকে বৈধতা দিতে পুটিন এক গণভোটের ঘোষণা করেছেন৷
পুটিনের এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মেদভেদেভের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গণ পদত্যাগ করে এই সংস্কারের পথ সুগম করে দিয়েছে৷ পুটিন তাঁর কার্যকালের প্রশংসা করেন৷ তবে একই সঙ্গে মনে করিয়ে দেন যে সরকার অনেক কিছুই ঠিকমতো করতে পারে নি৷ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন মিখাইল মিশুস্টিন৷ তিনি সম্ভবত দেশের আগামী প্রেসিডেন্ট হবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ পুটিন নিজে তখন সংসদের অনুমোদন নিয়ে দেশের প্রথম নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে তাঁর ক্ষমতা একটানা অটুট থাকবে৷
রাশিয়ার রাজনৈতিক কাঠামোর এই পরিবর্তনকে অনেক বিরোধী নেতা ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান' হিসেবে বর্ণনা করছেন৷ পুটিন যাতে আজীবন ক্ষমতাকেন্দ্রে থেকে যেতে পারেন, সেই লক্ষ্যই নতুন এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে বলে তাঁরা অভিযোগ করছেন৷ জনগণের একটা বড় অংশের মধ্যে জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে পুটিন গণভোটে নতুন ব্যবস্থার অনুমোদন পাবেন বলেও ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ সম্প্রতি তিনি বেশ কিছু জনমোহিনী পদক্ষেপের মাধ্যমে নিজের জনপ্রিয়তা আরও বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন৷
ভ্লাদিমির পুটিন: গোয়েন্দা থেকে প্রেসিডেন্ট
পড়াশোনা শেষে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ এরপর কয়েক বছরের মধ্যেই রাজনীতির শীর্ষে চলে আসতে সক্ষম হন তিনি৷
জন্ম ১৯৫২ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে৷ ১৯৭৫ সালে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে সাবেক সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল নিজ শহর লেনিনগ্রাদে (পরবর্তীতে নাম হয় সেন্ট পিটার্সবার্গ) বিদেশি নাগরিক ও কনস্যুলেটের কর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা৷ এরপর বদলি হন পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে৷ বার্লিন প্রাচীর পতনের পর তিনি কেজিবির অনেক ফাইল পুড়িয়ে ফেলেন বলে জানা যায়৷
বামে তরুণ পুটিনকে দেখতে পাচ্ছেন? ছবিতে যে ব্যক্তিকে এক নারীর সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম আনাতোলি সবচাক৷ তিনিই প্রথম পুটিনকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন, নিজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন পুটিনকে৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
উল্কার বেগে উত্থান
খুব দ্রুতই সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো চলে গিয়েছিলেন পুটিন৷ ১৯৯৭ সালে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিন তাঁকে নিজের প্রশাসনে মাঝ পর্যায়ের এক পদে নিয়োগ দেন৷ এই পদটি আসলে ছিল গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পদ, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
বন্ধুর মৃত্যু
২০০০ সালে সবচাকের মৃত্যু পুটিনকে আবেগে আক্রান্ত করেছিল৷ কারণ, যাঁরা পুটিনকে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তিনি৷ সবচাকের মৃত্যুর বছরখানেক আগে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রতারণার অভিযোগ নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাতিল করেছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Chirikov
অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট
২০০০ সালের জুনে ইয়েলিৎসিন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুটিন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন৷ এরপর যখন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রশাসনে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ কিন্তু অভিযোগ যিনি এনেছিলেন, সেই সাংসদ মারিনা সালিয়েকে শেষ পর্যন্ত শহর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
রাজনৈতিক সঙ্গী
সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দু’বার দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে আর তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব ছিল না পুটিনের৷ তাই সেই সময় তিনি তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন দিয়েছিলেন৷ আর নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন৷ সেবারই সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় আর প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল চার থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়৷ এরপর ২০১২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট হন পুটিন৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
চতুর্থবার প্রেসিডেন্ট
১৮ মার্চ, ২০১৮ রবিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও জয়লাভ করেন পুটিন৷ ফলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকছেন তিনি৷ ২০৩০ সালেও তিনি প্রার্থী হবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে পুটিন সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘১০০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করে যাবার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই৷’’