রাশিয়ার তেলের দাম নির্দিষ্ট করে দিতে সম্প্রতি একমত হয়েছে শিল্পোন্নত সাত দেশের সংগঠন জি-সেভেন৷ তারা মনে করছে তেল বিক্রির টাকা ইউক্রেন যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেয় পশ্চিমা বিশ্ব৷ তাদের আশা ছিল এর ফলে রাশিয়ার অর্থনীতির উপর চাপ পড়বে৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ার তেল বিক্রি বেড়েছে৷ আর গ্যাসের দাম বাড়িয়েও রাশিয়ার আয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে৷ রাশিয়ার অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী আশা করছেন, এ বছর জ্বালানি রপ্তানি ৩৮ শতাংশ বাড়তে পারে৷
এই অবস্থায় রাশিয়ার আয় কমাতে তেলের দাম নির্ধারণ করে দিতে চাইছে জি-সেভেন৷ এক্ষেত্রে পণ্যবাহী জাহাজের বিমা কোম্পানির মালিকানা থাকার সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে তারা৷ কারণ বিশ্বের এমন সব বিমা কোম্পানির ৯০ শতাংশের মালিক জি-সেভেন দেশগুলো৷ ফলে রাশিয়া তেল রপ্তানি করতে চাইলে যত জাহাজ লাগবে, তার একটি বড় অংশই পশ্চিমা বিমা কোম্পানি থেকে বিমা করা জাহাজ৷ এসব জাহাজ ভবিষ্যতে রাশিয়ার তেল বহন করতে চাইলে সেই তেলের দাম জি-সেভেনের ঠিক করে দেয়া দাম বা তার কমে হতে হবে৷ অবশ্য নির্দিষ্ট দামটা কত হবে, তা এখনও জানায়নি জি-সেভেন৷ তারা বলছে জি-সেভেন সদস্য নয় এমন রাশিয়ার তেলের আমদানিকারক বড় দেশ, যেমন চীন ও ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে দাম ঠিক করা হবে৷
যদিও চীন ও ভারত জি-সেভেনের এই উদ্যোগে যোগ দেবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়৷ কারণ রাশিয়া ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, যেসব দেশ জি-সেভেনের সঙ্গে যোগ দেবে তাদের কাছে তেল বিক্রি করা হবে না৷
ফলে জি-সেভেনের উদ্যোগ সফল হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়৷
আর্থার সুলিভান/জেডএইচ
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা যেভাবে কমাবে ইউরোপ
২০২৭ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর থেকে তাদের জ্বালানির নির্ভরতা শূন্যে নামিয়ে আনতে চাইছে৷ গত বুধবার এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় এই জোট৷
ছবি: Jean-Francois Badias/AP/picture alliance
রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা
এখন পর্যন্ত রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ ভাগ গ্যাস ও ২৭ ভাগ তেলের চাহিদা মেটাচ্ছে৷ ইউরোপজুড়ে এই জ্বালানি ঘর গরম রাখতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং শিল্পে ব্যবহৃত হয়৷ এতটা নির্ভরশীলতা হুট করে কমানো সম্ভব নয়৷ তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ইউরোপকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে৷ অবশ্য এই নির্ভরশীলতা কাটাতে অন্তত আরো পাঁচ বছর প্রয়োজন৷
ছবি: Kremlin Pool/ZUMAPRESS/picture alliance
নবায়নযোগ্যে ভরসা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল৷ কিন্তু ইউরোপীয় কমিশন সেই পরিকল্পনাকে আরো ত্বরান্বিত করতে চাইছে এখন৷ আগের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্যের পরিকল্পনাকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করতে চাইছে তারা৷ ২০২০ সালের হিসেবে, তাদের ২২ শতাংশ জ্বালানি আসে বায়ু, সৌর ও জৈবশক্তি থেকে৷
ছবি: picture alliance / Zoonar
আইনে পরিবর্তন
লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইউরোপীয় কমিশন আইনে পরিবর্তন আনার ঘোষণাও দিয়েছে৷ কড়া বিধিনিষেধের কারণে অনেক প্রকল্প পাস হতে সময় লাগে৷ সেগুলো কিছুটা শিথিলের উদ্যোগ নেয়া হবে৷ এছাড়া বড় বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলোর ওপর সৌর প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করার নিয়মও করা হবে৷
ছবি: Philip Reynaers/BELGA/dpa/picture alliance
জ্বালানি সাশ্রয়
কমিশন ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি সাশ্রয়ও ১৩ ভাগ কমাতে চায়৷ আগের প্রস্তাবে তা ছিল ৯ শতাংশ৷ এর জন্য অনেক ভবনকে সংস্কার করা হবে, যেন সেগুলোতে কম জ্বালানি খরচ হয়৷ তাদের হিসেব বলছে, মানুষ চাইলে নিজ উদ্যোগে তাদের জ্বালানি খরচ কমাতে পারে৷ এতে করে অন্তত পাঁচ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা কমানো সম্ভব৷
ছবি: David McNew/Getty Images
গ্যাসের নতুন অবকাঠামো
ইউরোপ রাশিয়া থেকে বছরে ১৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আমদানি করে থাকে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও জ্বালানি সাশ্রয় করে এর বিকল্প তৈরি সম্ভব৷ কিন্তু স্বল্পমেয়াদে ইউরোপ এখন সেই গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজছে৷ সেক্ষেত্রে হাইড্রোজেন গ্যাস এর বিকল্প হতে পারে৷ কিন্তু এর অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে৷ কারণ যে-কোনো সময় রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বিপদ তৈরি হবে, যেমনটি তারা পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ার ক্ষেত্রে করেছে৷
ছবি: Joerg Boethling/imago images
অর্থায়ন
সবমিলিয়ে জ্বালানি খাতে ২০২৭ সালের মধ্যে ২১০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করতে চায় ইইউ৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৩০০ বিলিয়ন হবে৷ এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ৮৬ বিলিয়ন, হাইড্রোজেন অবকাঠামোর জন্য ২৭ বিলিয়ন ইউরো, ২৯ বিলিয়ন ইউরো বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নয়নে ও ৫৬ বিলিয়ন ইউরো জ্বালানি সাশ্রয় অবকাঠামো ও হিট পাম্প তৈরিতে খরচ হবে৷
ছবি: Christoph Hardt/Geisler-Fotopress/picture alliance