রাশিয়ার বিরুদ্ধে তেল ও গ্যাস নিয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি অ্যামেরিকার। যুক্তরাজ্য ২০২২-এর মধ্যে মস্কোর তেল-গ্যাস নেয়া বন্ধ করবে।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক লড়াই আরো তীব্র করলো অ্যামেরিকা ও যুক্তরাজ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন, রাশিয়া থেকে তারা অশোধিত তেলও গ্যাস নেবেন না। রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অ্যামেরিকা। বাইডেন বলেছেন, এভাবে অ্যামেরিকার মানুষ পুটিনকে আরেকটি বড় ধাক্কা দিলেন।
যুক্তরাজ্যও ঘোষণা করেছে, ২০২২-এর মধ্যেই তারা পর্যায়ক্রমে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমিয়ে এনে একেবারে বন্ধ করে দেবে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংস্থা শেল জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের প্রভাব রাশিয়ার উপর ভয়ংকরভাবে পড়বে। নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের অর্থনীতি প্রবল চাপে পড়বে।
অ্যামেরিকা বিদেশ থেকে যে অশোধিত তেল ও পরিশোধিত পণ্য আমদানি করে, তার আট শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। আর যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে এই পরিমাণটা হলো ছয় শতাংশ।
ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যারা
ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে৷ রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন ও স্টিঙ্গার মিসাইল চেয়েছে ইউক্রেন৷
ছবি: Efrem Lukatsky/AP/dpa/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনকে আরও অতিরিক্ত ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দেয়ার নির্দেশ দেন৷ এর মধ্যে জ্যাভলিন (ছবি) এবং স্টিঙ্গারও রয়েছে৷ এছাড়া সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বর্ম, ছোট অস্ত্র, অ্যান্টি-আর্মার থাকার কথা জানিয়েছে পেন্টাগন৷ ইতিমধ্যে জার্মানিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের সংগ্রহশালা থেকে সেগুলো পোল্যান্ড হয়ে ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে৷
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইইউ নেতারা কিয়েভে ৪৫০ মিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র সরবরাহ করতে একমত হয়েছেন৷
ছবি: John Thys/AFP/Getty Images
জার্মানি
সংঘাত চলছে এমন জায়গায় এতদিন অস্ত্র না পাঠানোর নীতি অনুসরণ করত জার্মানি৷ তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে এক হাজার অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন ও ৫০০ স্টিঙ্গার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি৷ এছাড়া সোভিয়েতদের তৈরি ২,৭০০ ‘স্ট্রেলা’ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইলও (ছবি) পাঠানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: gemeinfrei
ফ্রান্স
ইউক্রেনের অনুরোধে ডিফেন্সিভ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ও ডিজিটাল উইপন পাঠিয়েছে ফ্রান্স৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
যুক্তরাজ্য
গত জানুয়ারিতে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস ইউক্রেনকে হালকা অ্যান্টি-আর্মার ডিফেন্সিভ উইপন সিস্টেম দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন৷ ২৩ ফেব্রুয়ারি ডাউনিং স্ট্রিট ‘লিথাল ডিফেন্সিভ উইপন’ দেয়ার অঙ্গীকার করে৷ ছবিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনকে ইউক্রেনের পতাকার রংয়ে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Jeff J Mitchell/Getty Images
পোল্যান্ড
কয়েক হাজার শেল ও আর্টিলারি অ্যামুনিশন, অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল, লাইট মর্টার (প্রতীকী ছবি) এবং শত্রুপক্ষের অবস্থান জানার জন্য ড্রোন ও অস্ত্র পাঠানোর অঙ্গীকার করেছে পোল্যান্ড৷
ছবি: Sgt Paris/Capers /UPI Photo/imago
সুইডেন, ডেনমার্ক
নিরপেক্ষ থাকার নীতি ভেঙে পাঁচ হাজার ‘এটি৪ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন’ (ছবি) পাঠাচ্ছে সুইডেন৷ ডেনমার্ক পাঠাচ্ছে দুই হাজার ৭০০টি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন৷
ছবি: StockTrek Images/imago images
নরওয়ে
নরওয়ে হেলমেট ও বর্ম ছাড়া প্রায় দুই হাজারের মতো এম৭২ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন (ছবি) পাঠাচ্ছে৷
ছবি: U.S. Marines/ZUMA Wire/imago images
এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া
এস্তোনিয়া জ্যাভলিন মিসাইল এবং লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়া স্টিঙ্গার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল দিচ্ছে৷ ১২ ফেব্রুয়ারির এই ছবিতে লিথুয়ানিয়ার সৈন্যদের ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য স্টিঙ্গার মিসাইল ও বর্ম বিমানে তুলতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Lithuanian Ministry of National Defense/AP/picture alliance
ফিনল্যান্ড
দেড় হাজার সিঙ্গেল শট অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন, আড়াই হাজার অ্যাসল্ট রাইফেল (প্রতীকী ছবি), দেড় লাখ রাউন্ড গুলি পাঠাচ্ছে ফিনল্যান্ড৷
ছবি: Bernd Weißbrod/dpa/picture alliance
নেদারল্যান্ডস
২০০টি স্টিঙ্গার এয়ার ডিফেন্স রকেট (ছবি) এবং ৪০০ রকেটসহ ৫০টি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন পাঠানো হবে বলে ২৬ ফেব্রুয়ারি সংসদকে জানায় সরকার৷
ছবি: LEILA GORCHEV/AFP/Getty Images
বেলজিয়াম
আরও তিন হাজার অটোমেটিক রাইফেল (প্রতীকী ছবি), ২০০ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন ও ৩,৮০০ টন জ্বালানি পাঠাচ্ছে৷
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেনে চার হাজার মর্টার, ৩০ হাজার পিস্তল, সাত হাজার অ্যাসল্ট রাইফেল, তিন হাজার মেশিন গান, অনেকগুলো স্নাইপার রাইফেল (প্রতীকী ছবি) ও দশ লাখ বুলেট পাঠানো হবে বলে শনিবার জানিয়েছিল দেশটি৷
ছবি: Bundeswehr/Walter Wayman
14 ছবি1 | 14
ইইউ-র প্রতিক্রিয়া
তবে অ্যামেরিকা ও যুক্তরাজ্য এই ঘোষণা দিলেও ইইউ এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। কারণ, জার্মানি সহ ইউরোপের অনেক দেশই রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা ২০৩০-এর আগেই শেষ করে দেবে। তারা অন্য দেশ থেকে তেল-গ্যাস আনার চেষ্টা করছে। তাছাড়া দ্রুত বিকল্প শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াবার চেষ্টা করছে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া জানিয়েছে, তারাও কয়েকটি দেশে কিছু কাঁচা মাল ও পরিশোধিত পণ্য পাঠানো বন্ধ করে দেবে। তবে কী কী পণ্য পাঠানো তারা বন্ধ করবে সেই তালিকা এখনো দেয়া হয়নি। তেল-গ্যাস ছাড়াও রাশিয়া থেকে পশ্চিমা দেশগুলি দানাশষ্য ও মাংস কেনে।
রাশিয়া আগেই হুমকি দিয়েছে, তাদের উপর তেল ও গ্যাস নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি তিনশ ডলার হবে। তার ধাক্কা বিশ্বের প্রতিটি দেশের উপর এসে পড়বে। তাছাড়া তারা জার্মানিকেও গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে।
জেলেনস্কির বক্তব্য
অ্যামেরিকা ও যুক্তরাজ্যের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, এটা একটা খুবই শক্তিশালী বার্তা। এখন যা পরিস্থিতি হলো, তাতে রাশিয়াকে হয় আন্তর্জাতিক আইন মানতে হবে, যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, নাহলে তাদের হাতে কোনো অর্থ থাকবে না। জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়াকে দেয়া প্রতিটি সেন্ট বুলেট বা অস্ত্র বানাতে খরচ হয়। সেই অস্ত্র অন্য সার্বভৌম দেশের উপর আছড়ে পড়ে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আলোচনার মধ্যে দিয়ে লড়াই বন্ধ করতে হবে।
দাম বাড়ছে
রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফলে শুধু যে মস্কো চাপে পড়েছে তাই নয়, অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলিতেও তার প্রভাব পড়ছে। সব জায়গায় পেট্রো পণ্যের দাম বেড়েছে। তার প্রভাব সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপর পড়েছে। প্রায় সব দেশেই জিনিসের দাম কমবেশি বাড়ছে।