জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চোরাপথে উত্তর কোরিয়াকে জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করছে রাশিয়া৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি এমন অভিযোগ আনলেন৷ তবে নীতিগতভাবে তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়ার উপর চাপ আরও বাড়াতে মার্কিন প্রশাসন ক্যানাডার সঙ্গে যৌথভাবে এক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল৷ চীন ও রাশিয়া তাতে অংশ নেয়নি৷ এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ আনলেন৷ তাঁর মতে, রাশিয়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলতে উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য করে চলেছে৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া মোটেই আমাদের সাহায্য করছে না৷ চীন সাহায্য করলেও রাশিয়া সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিচ্ছে৷''
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন-এর সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, এই মুহূর্তে এমন পদক্ষেপ নিয়ে তাঁর মনে সংশয় রয়েছে৷ নীতিগতভাবে তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত৷ তবে তাতে সমস্যার সমাধান হবে কিনা, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নয়৷ তাঁর পূর্বসূরিরাও এমন প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন৷ তিনি সে কারণে বিল ক্লিন্টন, জর্জ ডাব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামাকে সেই ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেন৷ ঠাট্টার সুরে তিনি বলেন, হয়তো তাঁরা জানতেন যে, এমন দুরূহ কাজ এমন কারো জন্য রেখে দিতে হবে, যিনি বুদ্ধির পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো ফল করবেন৷
আসন্ন শীতকালীন অলিম্পিককে কেন্দ্র করে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠতাকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রাম্প৷
পশ্চিম ইউরোপের নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স ডিসেম্বর মাসে জানিয়েছিল যে, সম্প্রতি রাশিয়ার ট্যাংকার জাহাজ কমপক্ষে ৩ বার উত্তর কোরিয়াকে জ্বালানি সরবরাহ করেছে৷ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সমুদ্রেই পণ্য হস্তান্তর করা হয়েছিল৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার ফলে উত্তর কোরিয়া ক্ষতির মুখ দেখতে শুরু করেছে৷ রাশিয়া পুরোপুরি সহযোগিতা না করলেও সার্বিকভাবে কাজ হচ্ছে৷ ফলে শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে আসতে হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ তবে রাশিয়া চোরাপথে উত্তর কোরিয়ায় জ্বালানি ছাড়াও অন্য কিছু পণ্য সরবরাহ করছে বলে টিলারসন অভিযোগ করেন৷
যেসব দেশের কারণে টিকে আছে উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও এমন কয়েকটি দেশ আছে যারা উত্তর কোরিয়া থেকে পণ্য বা অস্ত্র আমদানি করে৷ চলুন দেখে নিই কোন দেশগুলো আছে এই তালিকায়৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
অ্যাঙ্গোলা
আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তারক্ষীদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দেয় উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
চীন
চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ৷ চীনের শিল্পকারখানায় উত্তর কোরিয়ার অনেক নাগরিক কাজ করে৷ চীনে উত্তর কোরিয়ান অনেক রেস্তোরাঁও রয়েছে, যেখান থেকে উত্তর কোরিয়া বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
কঙ্গো
কঙ্গোর সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পিস্তল এবং অন্য ছোট অস্ত্র আমদানি করে, যা মধ্য আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল দেহরক্ষী এবং পুলিশ ব্যবহার করে৷
ছবি: Reuters/R. Carrubba
মিশর
অভিযোগ রয়েছে, উত্তর কোরিয়া মিশরকে ক্ষেপণাস্ত্রের উপকরণ পাঠিয়েছে৷ এ অভিযোগ সত্য কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Reuters/Amr Abdallah Dalsh
ইরিত্রিয়া
ইরিত্রিয়া আফ্রিকার ছোট একটি দেশ৷ এই দেশটিরও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ জানা গেছে, তারা উত্তর কোরিয়া থেকে সামরিক উপকরণ কিনে থাকে৷
ছবি: DW
কুয়েত
উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কুয়েতে নির্মাণ কাজে যুক্ত আছে৷ কুয়েতে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসও আছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোজাম্বিক
উত্তর কোরিয়া মোজাম্বিককে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করছে৷ এছাড়া ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণেও সহায়তা দিচ্ছে দেশটিকে৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFP/Getty Images
নামিবিয়া
দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে সমরাস্ত্র উপকরণ তৈরি করার একটি কারখানা স্থাপনের জন্য উপকরণ এবং কর্মী পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: DW/B. Osterath
নাইজেরিয়া
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক চিকিৎসক যান৷ ২০১৩ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় উত্তর কোরিয়ার তিন চিকিৎসক নিহত হয়েছিলেন সেখানে৷
ছবি: picture alliance /AP Photo/L. Oyekanmi
ওমান
ওমানে নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে কাজ করার জন্য উত্তর কোরিয়া তাদের শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে৷
ছবি: SR
কাতার
কাতারেও নির্মাণ প্রকল্পে উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কাজ করে৷ ২০২২ সালে দেশটিতে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷ এজন্য সেখানে স্টেডিয়ামসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zumapress
সুদান
উত্তর কোরিয়া সুদানে যেসব সামরিক উপকরণ পাঠায়, তার মধ্যে রকেট কন্ট্রোল সেকশন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shazly
সিরিয়া
দীর্ঘ সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলা দেশটিও উত্তর কোরিয়ার উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম৷ জানা গেছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক সমরাস্ত্র এবং উপকরণ কিনে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Service of the President
উগান্ডা
আফ্রিকার দেশ উগান্ডারও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ উত্তর কোরিয়ার সেনারা উগান্ডায় বিমানবাহিনীর পাইলট এবং টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন৷
ছবি: AP
সংযুক্ত আরব আমিরাত
ইউএই-তে উত্তর কোরিয়ার অনেক রেস্তোরাঁ এবং নির্মাণ কোম্পানি রয়েছে, যেখানে কাজ করার জন্য সবসময়ই উত্তর কোরিয়া থেকে কর্মী পাঠানো হয়৷ এছাড়া উত্তর কোরিয়া থেকে স্কুড মিসাইল কিনে থাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷