মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুটা দ্বিধার সঙ্গেই বিলটিতে স্বাক্ষর করেন, কেননা তাঁর মতে এই বিল ‘গুরুতরভাবে ত্রটিপূর্ণ’৷ অপরদিকে রাশিয়া বিলটিকে ‘পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধের’ সঙ্গে তুলনা করেছে৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার ট্রাম্প যখন বিলটিতে স্বাক্ষর করেন, তখন সেখানে কোনো সাংবাদিক বা ক্যামেরার উপস্থিত ছিল না৷ স্বাক্ষরের পর ট্রাম্প একটি বিবৃতিতে বলেন যে, তাঁর দৃষ্টিতে বিলটি ‘‘গুরুতরভাবে ত্রুটিপূর্ণ’’ এবং এই বিল তাঁর কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা চালানোর পথে বাধা সৃষ্টি করবে৷
‘‘প্রশাসনের প্রতিক্রিয়ার স্বাধীনতা সীমিত করার মাধ্যমে এই বিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মার্কিন জনগণের জন্য সুবিধাজনক চুক্তি করা আরো কঠিন করে তুলবে, এবং চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পরস্পরের আরো বেশি কাছাকাছি নিয়ে আসবে,’’ বলেন ট্রাম্প৷ তিনি ‘‘জাতীয় ঐক্যের কল্যাণে’’ বিলটিতে স্বাক্ষর করেছেন, বলে ট্রাম্প যোগ করেন৷
কে কার বিরুদ্ধে
রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ সংক্রান্ত বিলটি মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ, অর্থাৎ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ও সেনেটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় গৃহীত হয়েছে৷ বিলের একটি সূত্র অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট তাঁর একক ক্ষমতার বলে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করতে পারবেন না৷ অপরদিকে কংগ্রেসে বিলটির যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তার ফলশ্রুতি স্বরূপ প্রেসিডেন্ট তাঁর ভেটো নিয়োগ করে বিলটিকে রুখতে পারবেন না৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও ক্রাইমিয়া দখল, প্রধানত এই দু'টি কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করছে এই বিল৷ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো রাশিয়ার জ্বালানি শিল্প, বিশেষ করে তার রপ্তানি ব্যবসা – যা পরোক্ষভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে প্রভাবিত করবে, কেননা ইইউ-এর কাঁচা জ্বালানি শক্তির একটা বড় অংশ আসে রাশিয়া থেকে; দ্বিতীয়ত, রাশিয়া থেকে বালটিক সাগর হয়ে জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রেরণ সংক্রান্ত ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ প্রকল্পটিতে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার একাধিক বড় জ্বালানি সংস্থা সংশ্লিষ্ট – এই বিল অনুযায়ী সেই সব সংস্থার উপর দণ্ড আরোপ করা চলতে পারে৷
ট্রাম্প, তাঁর পরিবারের কিছু সদস্য ও একাধিক নির্বাচনি সহযোগীর বিরুদ্ধে যখন রুশ কূটনীতিক ও অপরাপর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও যোগসাজসের ব্যাপারে তদন্ত চলেছে, তখন কংগ্রেসের এই ‘বাইপার্টিজান’, অর্থাৎ রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যদের যৌথ পদক্ষেপকে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক রিপাবলিকান দলের অভ্যন্তরে প্রেসিডেন্টের প্রতি আস্থাহীনতা, অন্যদিকে সাধারণভাবে কংগ্রেস তথা মার্কিন রাজনীতিকদের স্বাধীনতা ঘোষণা হিসেবে গণ্য করছেন৷ ট্রাম্প যখন তাঁর ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে সচেষ্ট, তখন এই বিল সেই প্রচেষ্টার বিপরীত দিক নির্দেশ করছে – আসল সংঘাত সম্ভবত সেখানেই৷
রুশ প্রতিক্রিয়া
রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন যে, এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটার সব আশার অন্ত ঘটিয়েছে৷ তাঁর ফেসবুক পোস্টে মেদভেদেভ দাবি করেন যে, ‘‘কংগ্রেসের কাছে সবচেয়ে অপমানজনক ভাবে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব সমর্পণ করে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের পূর্ণ অক্ষমতা প্রদর্শন করেছে৷’’ এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধের’ সমতুল, বলে মেদভেদেভ যোগ করেন৷
বিশ্বে যে ২০ জন মানুষের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি
এই বিশ্বে এখন প্রায় ৭৪০ কোটি মানুষের বাস৷ এত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাবান ২০ জন মানুষ৷ ২০১৮ সালের তালিকায় কে কে আছেন, সেটা অনুমান করতে পারেন? দেখুন ফোর্বস ম্যাগাজিন কোন ২০ জনকে বেছে নিয়েছে৷
শি জিনপিং
চীনের প্রেসিডেন্ট এবং কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক
ছবি: Getty Images/Rolex dela Pena
20 ছবি1 | 20
ট্রাম্প বিলটিতে স্বাক্ষর করার আগেই রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ায় তাদের কূটনৈতিক কর্মীসংখ্যা কমানোর নির্দেশ দেয় – পর্যবেক্ষকরা যাকে ক্রেমলিনের তরফে অপেক্ষাকৃত মৃদু প্রতিক্রিয়া হিসেবেই গণ্য করছেন৷ পর্যবেক্ষকদের মতে, মস্কো এখনও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটার আশা পুরোপুরি ত্যাগ করেনি৷
ইউরোপের উদ্বেগ
ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন যে, তাঁর প্রশাসন বিলটিতে কিছু পরিবর্তন আনার জন্য মার্কিন কংগ্রেসের সাথে কাজ করেছে; ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইন নিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলির উদ্বেগের বিষয়টিও তার মধ্যে ছিল৷
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লোদ ইয়ুঙ্কার বুধবার জার্মান সরকারি টেলিভিশন কেন্দ্র এআরডিকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইইউ-এর কিছু কিছু দুশ্চিন্তা বিবেচনা করেছে৷ কিন্তু তিনি পুনরায় ব্রাসেলসের অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেন যে, মার্কিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা যদি ইউরোপীয় শিল্পসংস্থাগুলির হানি ঘটায়, সেক্ষেত্রে ইইউ ‘‘কয়েক দিনের মধ্যে’’ পাল্টা পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত৷
বিলটিতে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার উপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছে প্রধানত এই দু'টি দেশের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কারণে – যদিও ইরানের ক্ষেত্রে স্বদেশে মানবাধিকার ভঙ্গ ও মধ্যপ্রাচ্যে ‘‘স্থিতি হানিকর গতিবিধি’’ এবং উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে দাস শ্রমিকদের ব্যবহারও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জোরদার করার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে৷ তেহরানের মতে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির পরমাণু চুক্তির ‘‘বয়ান ও মনোভাবের’’ বিরোধী৷
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স, এএফপি)
৬ মাস গেল, ৪ বছর টিকতে পারবেন তো ট্রাম্প?
ক্ষমতার প্রথম ৬ মাস কাটলো বিতর্ক, কেলেঙ্কারি, অভিযোগ ও সংকটের মধ্যে৷ অবশ্য রিপাবলিকান দলের মধ্যে এখনো তাঁর প্রতি অটুট সমর্থন রয়েছে৷ সব প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে বাকি সাড়ে তিন বছর টিকে থাকতে পারবেন কি ডোনাল্ড ট্রাম্প?
ছবি: picture-alliance/dpa/Consolidated/R. Sachs
নির্বাহী আদেশই পছন্দ
প্রথম ছ’মাসে পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলের বিশেষ করে পরিবেশ ও শিল্প সংক্রান্ত ১৪টি নিয়মকানুন বাতিল করে দিয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে সংসদের উভয় কক্ষে রিপাবলিকান দলের নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও তাদের উপর ভরসা না করে নির্বাহী আদেশ জারি করতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Consolidated/R. Sachs
সংসদে ব্যর্থতা
রিপাবলিকান দলের সংসদ সদস্যরা আনুগত্য দেখিয়ে চললেও প্রথম ছ’মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংসদে কোনো উল্লেখযোগ্য আইন পাশ করাতে পারেন নি ট্রাম্প৷ এমনকি দু’বার চেষ্টা চালিয়ে ‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল করে স্বাস্থ্য বিমার সংস্কার সংক্রান্ত আইনও অনুমোদন করাতে পারেন নি তিনি৷
ছবি: Getty Images/Chip Somodevilla
উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা
স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে হাত পুড়িয়েও কর ও জনকল্যাণ ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে বদ্ধপরিকর ট্রাম্প প্রশাসন৷ প্রথম এক বছরে প্রধান নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করে ভোটারদের বাহবা কুড়াতে চান ট্রাম্প৷ তবে জটিল এই আইন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও ঐকমত্যের অভাব দেখছেন সমালোচকরা৷
ছবি: Getty Images
অবকাঠামোর উন্নয়ন
নির্বাচনি প্রচারের সময় অ্যামেরিকার বিপর্যস্ত অবকাঠামো ঢেলে সাজাতে এক লক্ষ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ রাস্তাঘাট, সেতু, পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা বা সংস্কারের কাজে সেই অর্থ ব্যয় করতে চেয়েছিলেন তিনি৷ অথচ ২০১৮ সালের বাজেটে এই খাতে কত বরাদ্দ পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/R.Beck
আবার ভোটের পরীক্ষা
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কংগ্রেসের প্রায় অর্ধেক আসনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ ততদিনে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করতে না পারলে রিপাবলিকান সংসদ সদস্যদের পক্ষে ভোটারদের মন জয় করা কঠিন হবে৷ সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে না পারলে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে বাকি দু’বছর দেশ শাসন করা কঠিন হয়ে উঠবে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Goldman
ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা?
প্রতীকী প্রতিরোধ হিসেবে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রক্রিয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক সদস্যের সমর্থন পাওয়া কঠিন৷ মারাত্মক কোনো ঘটনা বা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যদিও আগেভাগে তার পূর্বাভাষ পাওয়া কঠিন৷