রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে ইইউ। বিরোধী নেতা নাভালনিকে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টার জন্য। ইইউ বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে নিষেধাজ্ঞা জারি নিয়ে মতৈক্য হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
লুক্সেমবুর্গে বৈঠকে বসেছিলেন ইইউ-র বিদেশমন্ত্রীরা। সেখানে ২৭ মিনিটের আলোচনাতেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছলেন তাঁরা। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দিয়েছে ইইউ।
সপ্তাহখানেক আগেই জার্মানি ও ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রীরা রিপোর্ট দিয়েছিলেন যে, রুশ সরকারই নাভালনিকে বিষপ্রয়োগ করে মারতে চেয়েছিল। তাঁদের প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই এখন কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
তবে নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে চালু হচ্ছে না। কারণ, এর খসড়া তৈরি হবে। আইনজ্ঞরা তা বিচার করবেন। ২৭টি ইইউ দেশ তা মেনে নেবে। তারপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
জার্মানি ও ফ্রান্সের মতে, রুশ কর্তৃপক্ষ জড়িত না থাকলে নাভালনিকে বিষ দেয়া সম্ভব হতো না। মস্কো এর কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। জার্মানির বিদেশমন্ত্রী হাইকো মাস বলেছেন, নাভালনিকে বিষপ্রয়োগের ফল পেতে হবে রাশিয়াকে। এর জন্য জার্মানি ও ফ্রান্স চায় দায়ী কিছু ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হোক।
পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী নাভালনি!
পুতিন বিরোধী আন্দোলনে রাশিয়ার অন্যতম আলোচিত চরিত্র বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি৷ ২০১৮ সালে দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে পুতিনের বিরোধিতা করতে বাধা দেয়া হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/navalny.com
রাজনীতিবিদের মুখ
ছিলেন আইনজীবী৷ হয়েছেন সক্রিয় রাজনীতিক৷ চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিনকে৷ ২০০৮ সালের কথা৷ রাশিয়ার রাজনীতি আর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অপকর্ম নিয়ে ব্লগ লিখে রাতারাতি আলোচনায় আসেন নাভালনি৷ তাঁর লেখা ব্লগের কারণে অনেকেই পদত্যাগ পর্যন্ত করতে বাধ্য হন৷ যা ছিল রাশিয়ার রাজনীতির বিরল দিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TASS/V. Sharifulin
বিতর্কিত সংসদীয় নির্বাচন
২০১১ সালে প্রথম কারাগারে গেলেন নাভালনি৷ ছিলেন ১৫ দিন৷ অভিযোগ, মস্কোর স্টেট ডুমায় সরকার বিরোধী মিছিল-সমাবেশ৷ পুতিনের ‘ইউনাইটেড রাশিয়া’ নির্বাচনে জয় পায়৷ কিন্তু ভোট কারচুপির অভিযোগ আনা হয় পুতিনের বিরুদ্ধে৷ কারাগারে রেখেও দমানো যায়নি নাভালনিকে৷ বের হয়ে এসে আবারো চাঙ্গা করেন পুতিন বিরোধী আন্দোলন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Stenin
কারাগের দ্বিতীয় সাময়িক
২০১২ সালে পুননির্বাচিত হলেন পুতিন৷ রাশিয়ার তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দিলেন নাভালনির অতীত খুঁজে বের করতে৷ দ্বিতীয় দফায় কারাগারে গেলেন নাভালনি৷ আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে জেল খাটলেন পাঁচ বছর৷ উচ্চ আদালতে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দেয় তাঁকে৷
ছবি: Reuters
ক্রেমলিন বিরোধী মঞ্চ
আইনি কিছু ঝামেলায় পড়েও, মস্কোর মেয়র পদে নির্বাচনে অনুমতি পান তিনি৷ ২০১৩ সালের ওই নির্বাচনে নাভালনিকে হার মানতে হয়৷ কারণ, পুতিনের মিত্র সের্গেই সোবানিয়ান বিপুল ভোটে জয় পায়৷ আর বিরোধী রাজনীতি আবারো চাপা পড়ে যায় পুতিন জোয়ারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাজনীতিকের সামাজিক যোগাযোগ
ক্রেমিলন বিরোধী আন্দোলনের কারণে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নিষিদ্ধ হন নাভালনি৷ ফলে, নিজের রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দিতে বেছে নিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্লগ৷ গুছিয়ে বলতে পারা, ভাষার ব্যবহার, পুতিনকে নিয়ে হাস্যরসত্মাক কথা আর বিনয়-সবমিলিয়ে তরুণদের কাছে তিনি হয়ে যান নতুন কান্ডারি৷
ছবি: Alexei Navalny/Youtube
রাষ্ট্রপতির হওয়ার আকাঙ্ক্ষা
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা দিলেন প্রেসিডন্ট পদে লড়তে চান তিনি৷ ২০১৮ সালের মার্চকে সামনে রেখে শুরু করলেন প্রচারণা৷ এবার দুর্নীতির অভিযোগে পারলেন না কাঙ্ক্ষিত পদে দৌড়াতে৷ যদিও বলা হয়, রাজনৈতিক হয়রানি শিকার হয়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Kudryavtsev
দুর্নীতির দায়
২০১৬ সাল৷ ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালত এক রুলে জানায়, কিরভ মামলায় সুবিচার বঞ্চিত হয়েছে নাভালনি৷ রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্টও নাভালনির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে৷ নথি পাঠিয়ে দেয়া হয় কিরভ আদালতে৷ ২০১৭ সালে আবার তাঁর কারাদণ্ড বাতিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Sputnik/A. Kudenko
অর্ধযুগে মস্কোর বড় বিক্ষোভ
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি৷ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের বিলিয়ন-ইউরোর সাম্রাজ্য নিয়ে রিপোর্ট লিখেন নাভালনি৷ সেই ঘটনাকে ঘিরে রাশিয়ার অন্তত ১২টি শহরে শুরু হয় দুর্নীতি বিরোধী মিছিল-সমাবেশ৷ নাভালনিসহ অন্তত হাজারো রাজনৈতিক কর্মীকে সেদিন গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১১ সালের পর এতো বড় বিক্ষোভ আর দেখেনি মস্কোবাসী৷ ১৫ দিন কারাবাসের পর মুক্তি পায় নাভালনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Evgeny Feldman for Alexey Navalny's campaign
শারীরিক লাঞ্চনা
দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের দুই মাস পর হাসপাতাল ঠিকানা হয় তাঁর৷ নাভালনির মুখে ছোঁড়া হয় সবুজ রঙের রাসায়নিক৷ ডান চোখের কর্নিয়া তাতে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়৷ চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে দেয়া হয়নি তাঁকে৷ কারণ তখনও দুর্নীতির অভিযোগ ঝুলছিল তাঁর গলায়৷ পরে ক্রেমলিনের মানবাধিকার কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে চোখের অপারেশনের জন্য স্পেন যাওয়ার অনুমতি পান নাভালনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Feldman
গ্রেপ্তার এবং গ্রেপ্তার
গেল বছরের গোড়ার দিকে এক মাস জেল খেটেছেন নাভালনি৷ তার কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারো গ্রেপ্তার হন তিনি৷ গেল সেপ্টেম্বরে জামিন পান৷ এ বছরের এপ্রিলে, তাঁর পক্ষে রুল জারি করে ইউরোপের মানবাধিকার কোর্ট৷ বলা হয়, কিরভ মামলায় ২০১৪ সাল থেকে এক প্রকার গৃহবন্দি রেখে নাভালনির অধিকার হরণ করেছে রাশিয়া৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
এবার বিষক্রিয়া
১০ দিন জেল খেটে বের হবার পর, সাতদিনও কাটেনি৷ এ বছরের জুলাইতে আবারো গ্রেপ্তার হন তিনি৷ রাশিয়ার কঠোর প্রতিবাদ আইন ভঙ্গের অভিযোগে আবারো ৩০দিনের জন্য জেলে ঢুকলেন তিনি৷ কারাগারে তাঁর শরীরে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ তুলেছেন পুতিন বিরোধী এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/navalny.com
11 ছবি1 | 11
লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধেও
ইইউ-র বিদেশমন্ত্রীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চান। বেলারুশে লুকাশেঙ্কো যে ভাবে বিক্ষোভকারীদের দমন করছেন তার প্রতিবাদেই কড়া ব্যবস্থা নিতে চান ইইউ বিদেশমন্ত্রীরা।
এতদিন লুকাশেঙ্কো বিক্ষোভকারীদের ধরে জেলে ভরছিলেন। পুলিশ লাঠি চালাচ্ছিল। কাঁদানে গ্যাস দিয়ে বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলা করা হচ্ছিল। এ বার লুকাশেঙ্কো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে বলেছেন নিরাপত্তা কর্মীদের। অর্থাৎ, বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালাবার অধিকার দেয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় ইইউ-র বিদেশমন্ত্রীরা বিবৃতি জারি করে বলেছেন, ''বেলারুশে সহিংসভাবে বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলা করা হচ্ছে। ইইউ এটা মেনে নিতে পারছে না। তাই লুকাশেঙ্কো সহ উচ্চপদে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে।''
জর্মানির বিদেশমন্ত্রী হাইকো মাস বলেছেন, ''বেলারুশে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সরকার সহিংসতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মোকাবিলা করছে। বিক্ষোভকারীদের সমানে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাই আমরা লুকাশেঙ্কো সহ অন্যদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবি করছি।''