রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ ইইউ এবং অ্যামেরিকার। নাভালনির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি। পাল্টা তোপ রাশিয়ার।
ছবি: Press Service of Babushkinsky District Court of Moscow/REUTERS
বিজ্ঞাপন
নাভালনি মামলায় এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিল অ্যামেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পুটিনের দেশের একাধিক কর্মকর্তা এবং সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো। নাভালনির গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ। রাশিয়া জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ বাস্তবসম্মত নয়। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারা অ্যামেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদক্ষেপকে সমর্থন করে। যদিও যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
রাশিয়ার পুটিন-বিরোধী রাজনীতিক নাভালনি। পুটিনের বিরুদ্ধে একাধিক ব্লগ লিখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার সংস্থা তদন্তমূলক রিপোর্টে প্রকাশ করেছে, কীভাবে কালো টাকায় আস্ত একটি প্রাসাদ কিনেছেন পুটিন। এই পরিস্থিতিতে গত বছর নাভালনিকে প্রশাসন বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। অসুস্থ নাভালনিকে জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন। জার্মানি জানায়, এই কাজের জন্য পুটিনকে জবাব দিতে হবে।
নাভালনির ঘটনায় পুটিনের যা হতে পারে
আলেক্সেই নাভালনিকে বিষ খাইয়ে মারার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন৷ নাভালনির নামই উচ্চারণ করেন না পুটিন৷ এমন অস্বীকার ও তাচ্ছিল্যের কৌশলের পরিণাম কী হতে পারে? ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Instagram @Navalny/Reuters
রাশিয়ার রাজনীতিবিদ জার্মানিতে
রাশিয়ার বিরোধী রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী আলেক্সেই নাভালনি গত ২০ আগস্ট টোমাস্ক থেকে মস্কো যাওয়ার পথে বিমানে অজ্ঞান হয়ে যান৷ ১৮ দিন হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে গোপনে জার্মানিতে নিয়ে আসা হয় তাকে৷ বার্লিনে দীর্ঘ চিকিৎসার পর নাভালনি এখন সুস্থ৷
ছবি: Vasily Maximov/APF/Getty Images
রাশিয়ার ‘অস্বীকার’ ও ‘আদেশ’
রাশিয়ার বিরোধী দল এবং পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, রুশ গোয়েন্দা সংস্থা নাভালনিকে বিষ খাইয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করা হচ্ছে৷ সম্প্রতি রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালের এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত নাভালনিকে অবিলম্বে সশরীরে হাজির হতে বলে, তা না হলে পরে দেশে ফেরামাত্র জেলে পোরা হবে তাকে৷
ছবি: Shamil Zhumatov/REUTERS
কৌশলী পুটিন
গত চার মাসে নাভালনির ঘটনা অনেক দূর গড়িয়েছে৷ কিন্তু ভ্লাদিমির পুটিন একটিবারের জন্য নাভালনির নাম উচ্চারণই করেননি৷ জার্মানিতে নিয়ে আসার পর থেকে নাভালনিকে পুটিন বর্ণনা করছেন স্রেফ ‘বার্লিনের হাসপাতালের একজন রোগী’ হিসেবে৷
রাশিয়া দায় অস্বীকার করলেও, পুটিন ‘বার্লিনের হাসপাতালের রোগী’ বলে তাচ্ছিল্য করলেও ঘটনার বিস্তার থেমে থাকেনি৷ নাভালনির বিষয়ে মানুষের কৌতুহলও কমেনি৷ অজ্ঞান হয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে দুটি ভিডিও অনুসন্ধানী নেটওয়ার্ক বেলিংক্যাট এবং দ্য ইনসাইডারে ছেড়েছিলেন নাভালনি৷ একটি ভিডিও এক সপ্তাহে দেখা হয়েছে দু কোটি বার, অন্যটি মাত্র দু দিনেই এক কোটি ৭০ লাখ বার! ওপরের ছবিতে বার্লিনে স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে নাভালনি৷
ছবি: Instagram @Navalny/Reuters
রুশ নিরাপত্তা সংস্থার চরম ব্যর্থতা
ব্রিটেনের ইতিহাসবিদ এবং গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মার্ক গালেওট্টি মনে করেন ‘নাভালনিকাণ্ড’ রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবিকে সের্গেই ক্রিপাল ও তার মেয়েকে বিষ খাওয়ানোর ঘটনার চেয়েও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, কারণ, ‘‘এফএসবি নাভালনিকে শুধু হত্যা করতে ব্যর্থই হয়নি, বড় একটা প্রমাণও রেখে দিয়েছে তারা, কেননা নাভালনিকে জার্মানিতে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে৷’’
ছবি: Imago/ZUMA Press
পুটিনের কী হবে?
মার্ক গালেওট্টির ধারণা এত বড় ঘটনাকেও হয়ত কৌশলে সামাল দিয়ে ফেলবেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ ক্রেমলিন এখনো মনে করে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা যথেষ্ট দক্ষ৷ ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগে যখন রুশ গোয়েন্দা সংস্থার নাম আসে, তখনও ধারণা করা হয়েছিল পুটিন হয়ত কোণঠাসা হবেন, বিব্রত হবেন৷ অথচ পরে সেই ঘটনার জন্য পুটিনকে ‘কিংমেকার’ ভেবেছেন অনেকে৷
ছবি: Alexei Nikolsky/AP Photo/picture alliance
‘রাশিয়া হতে চায় কঠোর খারাপ ছেলে’
রাশিয়ার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে গালেওট্টির মনে হচ্ছে, রাশিয়ায় যারা ক্ষমতাসীন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, ‘‘ওকে, আমরা যেহেতু ভালো ছেলে হতে পারবো না, চল তাহলে সবচেয়ে কঠোর খারাপ ছেলে হয়ে যাই৷’’ ব্রিটিশ ইতিহাসবিদের মতে, ‘‘ক্রেমলিনের নিয়ন্ত্রণ এখন এমন নিষ্ঠুর রাজনীতিবিদদের হাতে, যারা কিছুতেই থামবে না৷’’
ছবি: imago/Panthermedia
7 ছবি1 | 7
নাভালনি দেশে ফিরতেই পুটিনের প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে তার সাজা হয়। এর পরেই একদিকে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অ্যামেরিকা তারই জেরে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল।
ইউরোপাীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তার মধ্যে রাশিয়ান ফেডেরেশনের ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির প্রধান আলেকজান্ডার বাস্ত্রিকিন আছেন। এছাড়াও প্রসিকিউটর জেনারেল ইগোর ক্রাসনোভ, ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান ভিক্টর জোলোটোভ, ফেডারেল প্রিসন সার্ভিসের প্রধান আলেকজান্ডার কালশনিকভ আছেন। ইইউ রাশিয়ার কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।
অ্যামেরিকা সাতজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একই সঙ্গে ১৩টি কোম্পানি বা সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অ্যামেরিকার দাবি, ওই সংস্থাগুলি নার্ভ গ্যাস এবং বায়ো অস্ত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত।
জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে এটাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার সব চেয়ে বড় পদক্ষেপ। মঙ্গলবার বাইডেনের প্রশাসন বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, অ্যামেরিকা দ্রুত নাভালনির মুক্তি চাইছে। এরপরেও রাশিয়া কোনো ব্যবস্থা না নিলে আরো কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জার্মানি দীর্ঘদিন ধরেই নাভালনি মামলায় রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। তারই মধ্যে ইইউ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে ভ্লাদিমির পুটিনের উপর অনেকদিন ধরেই চাপ রয়েছে। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। মঙ্গলবার নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পরে পুটিনের প্রশাসন জানিয়েছে, যে ভাবে অ্যামেরিকা এবং ইইউ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। তারা এর সমালোচনা করছে। অ্যামেরিকা এবং ইইউ-র দাবি মানারও প্রশ্ন উঠছে না।