যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটের একটি বিলে রাশিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ জোরদার করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশঙ্কা করছেন, এর ফলে রাশিয়া থেকে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস আসা ব্যাহত হবে৷
বিজ্ঞাপন
বিলটি সেনেটে ৯৮-২ ভোটে অনুমোদিত হবার পর এখন তা গেছে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে৷ জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিগমার গাব্রিয়েল ও অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্রিস্টিয়ান ক্যার্ন বলেছেন, এই বিলের ফলে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ ব্যাহত হবে ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মার্কিন সরবরাহকারীরা সুবিধা পাবে৷
রাশিয়া থেকে বালটিক সাগর হয়ে জার্মানিতে সরাসরি প্রাকৃতিক গ্যাস আনার ‘নর্ড স্ট্রিম ২' পাইপলাইন প্রকল্পটির উপর এই বিলের প্রভাব পড়তে পারে৷ এ আশঙ্কা থেকেই জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার এই অসন্তোষ৷
বিশ্বে যে ২০ জন মানুষের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি
এই বিশ্বে এখন প্রায় ৭৪০ কোটি মানুষের বাস৷ এত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাবান ২০ জন মানুষ৷ ২০১৮ সালের তালিকায় কে কে আছেন, সেটা অনুমান করতে পারেন? দেখুন ফোর্বস ম্যাগাজিন কোন ২০ জনকে বেছে নিয়েছে৷
শি জিনপিং
চীনের প্রেসিডেন্ট এবং কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক
ছবি: Getty Images/Rolex dela Pena
20 ছবি1 | 20
ঐ পাইপলাইন প্রকল্পে রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ও ইউরোপের বিভিন্ন জ্বালানি সংস্থা তাদের মধ্যে জার্মানির ভিন্টারশাল ও অস্ট্রিয়ার ওএমভি কোম্পানি সংশ্লিষ্ট৷
‘‘ইউরোপের জ্বালানি সরবরাহ ইউরোপের ব্যাপার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কে নেই!'' – লিখেছেন গাব্রিয়েল ও ক্যার্ন৷
যুক্তরাষ্ট্রেও কর্মরত ইউরোপীয় কোম্পানিগুলিকে তারা ‘নর্ড স্ট্রিম ২' প্রকল্পে অংশ নিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ভয় দেখানো হয়েছে, যা ‘ইউরোপীয়-মার্কিন সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ নতুন ও অতীব নেতিবাচক মাত্রা আনছে' বলে মন্তব্য করেছেন দুই রাজনীতিক৷
‘‘লক্ষণীয় অকপটতার সঙ্গে বিলটিতে তার সারমর্ম বর্ণনা করা হয়েছে: যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বিক্রয় ও ইউরোপের বাজার থেকে রুশ প্রাকৃতিক গ্যাসকে ধীরে ধীরে বহিষ্কার করা,'' লিখেছেন ক্যার্ন ও গাব্রিয়েল৷ প্রসঙ্গত, গাব্রিয়েল ইতিপূর্বে বার্লিনের জোট সরকারের অর্থনীতি মন্ত্রী ছিলেন৷
দু'বছর আগে ইউরোপের বালটিক দেশগুলি ‘নর্ড স্ট্রিম ২' প্রকল্প সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে, কেননা, ঐ পাইপলাইন সমুদ্রবক্ষে বসানো হবে ও বালটিক দেশগুলির রাজ্যাঞ্চলের ভিতর দিয়ে যাবে না৷
ট্রাম্প ও রাশিয়াকে নিরস্ত করাই এই বিলের উদ্দেশ্য?
সেনেটে যে দুই সেনেটর এই বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন তাঁরা হলেন, রিপাবলিকান ব়্যান্ড পল ও স্বতন্ত্র বার্নি স্যান্ডার্স৷ সূচনায় বিলটি উত্থাপন করা হয় ইরানের বিরুদ্ধে নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপের উদ্দেশ্যে৷ কিন্তু শেষমেশ তাতে উভয় দলের অনুমোদিত রাশিয়া সংক্রান্ত সংশোধনটি যোগ করা হয়৷
যে সাত দেশ সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করে
শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপ্রি আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে অস্ত্র বিক্রিতে এক নম্বর অবস্থানে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ক্রেতা এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ৷
ছবি: picture-alliance/empics
০১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করা দেশটি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ গত পাঁচ বছরে বিক্রি হওয়ায় অস্ত্রের ৩৩ শতাংশ সরবরাহ করেছে সেদেশ৷ গত কয়েক বছরে দেশটির অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে৷ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তুরস্ক এ সব অস্ত্রের মূল ক্রেতা৷
ছবি: Reuters
০২. রাশিয়া
বিশ্বের অপর পরাশক্তি রাশিয়ার দখলে আছে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারের ২৫ শতাংশ৷ দেশটিতে উৎপাদিত অস্ত্রের মূল ক্রেতা ভারত৷ চীন এবং ভিয়েতনামও রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনছে নিয়মিত৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/Belcher
০৩. চীন
পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কাছাকাছি না হলেও তিন নম্বরে অবস্থান করছে চীন৷ বিশ্বের অস্ত্র বাজারের ৫ দশমিক নয় শতাংশ তাদের দখলে৷ ক্রেতা পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার৷
ছবি: AP
০৪. ফ্রান্স
চীনের পরেই ফ্রান্সের অবস্থান, গত কয়েক বছরে বিক্রি হওয়া অস্ত্রের ৫ দশমিক ছয় শতাংশ তৈরি করেছে সেদেশে৷ তবে লক্ষণীয় হলো, ফ্রান্সের অস্ত্র রপ্তানির পরিমান আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে৷ মূলত মরক্কো, চীন এবং মিশর সেদেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করে৷
ছবি: Reuters/ECPAD
০৫. জার্মানি
জার্মানির অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ সিপ্রির হিসেবে গত দশকের তুলনায় অনেক কমেছে৷ বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারের ৪ দশমিক সাত শতাংশ তাদের দখলে আছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং গ্রিস জার্মানির মূল ক্রেতা৷
ছবি: Ralph Orlowski/Getty Images
০৬. যুক্তরাজ্য
অস্ত্র বিক্রির বাজারে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ষষ্ঠ, সংখ্যার হিসেবে ৪ দশকিম পাঁচ শতাংশ৷ মূলত সৌদি আরব, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাজ্য থেকে অস্ত্র আমদানি করে৷
ছবি: Reuters
০৭. স্পেন
স্পেনের দখলে আছে অস্ত্র বাণিজ্যের ৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ৷ অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব এবং তুরস্ক অস্ত্র আমদানি করে স্পেন থেকে৷
ছবি: AP
7 ছবি1 | 7
সেনেটের সর্বোচ্চ ডেমোক্র্যাট চাক শুমার বলেছেন, ‘রাশিয়াকে আমাদের নির্বাচনে নাক গলানো' থেকে নিরস্ত করা এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ভবিষ্যতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শিথিল করতে চান, সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা মার্কিন কংগ্রেসের হাতে রাখা ছিল এই সংযোজনের উদ্দেশ্য৷
‘‘যে কারণেই হোক, প্রেসিডেন্ট এককভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করতে পারেন, এই ধারণাটা এই আইনের ফলে বানচাল হলো,'' বলেছেন শুমার৷
‘‘আজ মার্কিন সেনেট বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব জাহির করেছে,'' বলেছেন সেনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান বব কর্কার৷
হোয়াইট হাউস পরে একটি বিবৃতিতে বলেছে যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা যথেষ্ট কার্যকরি হচ্ছে৷
আইন হতে অনেক বাকি
রুশ অর্থনীতির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ এই বিলের প্রকোপে পড়বে, যেমন, খনিজ সম্পদ, শিপিং অথবা রেলওয়ে৷ রুশ সরকারের হয়ে যে সব হ্যাকার সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে, তাদেরও শাস্তি দেওয়া হবে৷ বিল আইনে পরিণত হওয়ার আগে তা হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে অনুমোদিত ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্ত্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে৷
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং তেহরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে মার্কিন সেনেটের এই বিলে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে – বিশেষ করে রেভলিউশনারি গার্ডদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, প্রতিষ্ঠানটি সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত৷