নির্বাচনে নাক গলানো, সাইবার আক্রমণ: ‘একটানা অনিষ্টকর আক্রমণের' উল্লেখ করে মার্কিন ট্রেজারি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে৷ এছাড়া রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো হ্যাক করেছে, বলে ওয়াশিংটনের অভিযোগ৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করে ও তার কারণ হিসেবে ‘‘রাশিয়া থেকে আসা একটানা অনিষ্টকর আক্রমণের'' কথা উল্লেখ করে৷
রাশিয়ার সর্বোচ্চ দু'টি গুপ্তচর সংস্থা, ফেডারাল নিরাপত্তা সেবা (এফএসবি) ও মুখ্য গুপ্তচরবৃত্তি পরিদফতর (জিআরইউ) এই নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় পড়েছে৷ সেই সঙ্গে রাশিয়ার তথাকথিত ইন্টারনেট গবেষণা সংস্থাকেও এই তালিকায় রাখা হয়েছে৷ বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মালার সম্প্রতি এই ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনেন৷
ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের কথা জানা গেল যেভাবে
গতবছর মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণার সময় থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ক্রেমলিনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষা চলছে৷ সম্প্রতি একাধিক তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও জানিয়েছে যে, মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে চেয়েছিল রাশিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lei
২০১৩: রাশিয়ায় ট্রাম্প
২০১৩ সালের ১৮ জুন ট্রাম্প টুইট করেন, ‘‘নভেম্বরের ৯ তারিখ মিস ইউনিভার্স প্যাজেন্ট রাশিয়ার মস্কো থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে৷ একটি বড় চুক্তি যা আমাদের দেশগুলোর মিলন ঘটাবে৷’’ পরবর্তীতে তিনি আরো লেখেন যে, ‘‘আপনাদের কি মনে হয় পুটিন (অনুষ্ঠানে) আসবে, যদি আসেন, তাহলে কি তিনি আমার নতুন বেস্ট ফ্রেন্ড হবেন?’’ সেবছর এক চ্যাট শোতে ট্রাম্প জানান যে, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর অনেক ব্যবসা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Prokofyev
সেপ্টেম্বর ২০১৫: হ্যাকিংয়ের অভিযোগ
এক এফবিআই এজেন্ট ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) এক তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা দেয়া কন্ট্রাক্টরকে জানান যে, ডিএনসি সম্ভবত হ্যাকড হয়েছে৷ ২০১৬ সালের ১৪ জুন, ডিএনসি হ্যাকিংয়ের ঘটনার কথা স্বীকার করে জানায় যে, রাশিয়ার হ্যাকাররা কাজটা করেছে৷
ছবি: picture alliance/MAXPPP/R. Brunel
জুলাই ২২, ২০১৬: আসাঞ্জ জানালেন আরো বিস্তারিত
জুলিয়ান আসাঞ্জের উইকিলিক্স ডিএনসি থেকে চুরি যাওয়া ২০,০০০ ইমেল প্রকাশ করে যাতে দেখা যায় যে সিনেটর বার্নি সেন্ডারসের চেয়ে হিলারি ক্লিন্টনকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/N. Hall
জুলাই ২৫, ২০১৬: তদন্তে এফবিআই
এফবিআই ঘোষণা দেয় যে ডিএনসি হ্যাকিংয়ের ঘটনা তদন্ত করছে সংস্থাটি৷ হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নেয়ার কারণ রয়েছে বলেও জানায় এফবিআই৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
নভেম্বর ৮, ২০১৬: জিতলেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এই খবর শুনে রাশিয়ার সংসদের আনন্দের বন্যা বয়ে যায়৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
নভেম্বর ১০, ২০১৬: রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার
রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনি ক্যাম্পেইনের যোগাযোগ ছিল বলে জানান রাশিয়ার উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই রিবাকভ৷ তবে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন একথা অস্বীকার করে৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
মার্চ ২০, ২০১৭: ট্রাম্প-ক্রিমলিন যোগাযোগ তদন্তে করছে এফবিআই
এফবিআই পরিচালক জেমস কমি ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত হাউস সিলেক্ট কমিটিকে নিশ্চিত করেন যে রাশিয়া এবং ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের মধ্যে সম্ভাব্য সম্পর্কের বিষয়ে তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/J. S. Applewhite
মে ৯, ২০১৭: কমিকে চাকুরিচ্যুত করলেন ট্রাম্প
কমিকে দেয়া ইস্তফা পত্রে ট্রাম্প লিখেছিলেন: ‘‘যদি আমি এটার প্রশংসা করি যে, আপনি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে জানিয়েছেন যে, আমাকে নিয়ে কোন তদন্ত হচ্ছে না, তাসত্ত্বেও আমি জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে একমত হয়েছি যে, আপনি এফবিআই কার্যকরভাবে পরিচালনায় সক্ষম নন৷’’
ছবি: Reuters/J. Ernst/K. Lamarque
সেপ্টেম্বর ২০১৭: সিনেট কমিটির সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প জুনিয়র
ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিকে জানান যে, বিদেশি কোনো সরকারের সঙ্গে কোনো আঁতাত করেননি তিনি৷ কমিটির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ২০১৬ সালের জুনে ট্রাম্প জুনিয়র এবং তাঁর ভগ্নিপতি জেরড কুশনার ও ক্যাম্পেইন ম্যানেজার পাউল মানাফোর্টের সঙ্গে রাশিয়ান আইনজীবী নাটালিয়া ভেসেলনিৎসকায়ার সাক্ষাতের বিষয়ে আলোচনা হয়৷
ফেসবুক, টুইটার এবং গুগল মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়া এ সব প্লাটফর্মের অপব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে৷ কোম্পানি তিনটি নভেম্বরে সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির মুখোমুখি হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lei
10 ছবি1 | 10
এফএসবি-র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণ হিসেবে ঐ সংস্থার তরফে ‘‘সাইবার নিরাপত্তা, কূটনীতি, সামরিক বাহিনী ও হোয়াইট হাউসে কর্মরত বিভিন্ন কর্মচারী সহ'' বহু মার্কিন কর্মকর্তার উপর সাইবার নজরদারির কথা বলা হয়েছে৷
জিআরইউ, ও সংস্থাটির একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো যে, তারা ‘‘সাইবার চালিত গতিবিধির মাধ্যমে ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ'' করেছেন৷ এছাড়া ২০১৭ সালের জুন মাসে ইউরোপের বিভিন্ন ব্যবসা সংস্থার উপর ‘নটপেটিয়া' সাইবার আক্রমণের জন্যও জিআরইউ দায়ি ছিল, বলে মার্কিন ট্রেজারির অভিযোগ৷
ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি ও তার সঙ্গে যুক্ত ১৩ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তারা মার্কিন ভোটারদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে ভুয়ো অনলাইন আইডি ব্যবহার করে হাজার হাজার অনলাইন বিজ্ঞাপন পোস্ট করেছেন৷
বর্তমানেও মার্কিন বিদ্যুৎ সরবরাহ গ্রিড হ্যাক করার যে চেষ্টা চলেছে, তার জন্য একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি বা অর্থমন্ত্রী স্টিভ মেনুশিন বলেছেন, ‘‘(মার্কিন) প্রশাসন ক্ষতিকর রুশ সাইবার গতিবিধির মুখোমুখি হচ্ছে ও পাল্টা জবাব দিচ্ছে৷'' ক্ষতিকর রুশ সাইবার গতিবিধির দৃষ্টান্ত হিসেবে মেনুশিন মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, ধ্বংসাত্মক সাইবার আক্রমণ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টার কথা বলেছেন৷
ট্রেজারির এই নতুন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বিশেষ তাৎপর্য পাচ্ছে এই কারণে যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এযাবৎ নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করতে গড়িমসি করেছেন৷
রুশ প্রতিক্রিয়া
রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন যে, মস্কো এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামালেও, ইতিমধ্যেই ‘‘একটি প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি নিতে'' শুরু করেছে৷ রিয়াবকভের মতে আগামী সপ্তাহান্তে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গেও এই মার্কিন পদক্ষেপের সংযোগ আছে: ‘‘(এই পদক্ষেপ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও স্বভাবতই আমাদের নির্বাচনি নির্ঘণ্টের সঙ্গে যুক্ত,'' বলেছেন রিয়াবকভ৷
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বা স্বদেশ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, বছর খানেক আগে রুশ হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু শক্তি, বিমান পরিবহণ, পানি সরবরাহ, পূর্ত ও শিল্পোৎপাদন ইত্যাদি সেক্টরগুলি হ্যাক করার চেষ্টা শুরু করে৷ এক্ষেত্রে তারা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির প্রশাসনিক ও ইউজার অ্যাকাউন্টগুলিতে ঢোকার প্রচেষ্টা করে, বলে এফবিআই ও অপরাপর জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি সংস্থা ইতিপূর্বে জানিয়েছে৷
দৃশ্যত রুশ হ্যাকাররা একক কোম্পানিগুলির ওয়েবসাইটে ঢুকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে – যেমন কোম্পানির কর্মচারীদের ছবি এনলার্জ করলে, ছবির পটভূমিতে কারখানার নিয়ন্ত্রণ প্রণালীর খুঁটিনাটি দেখা সম্ভব৷