রাজধানী কিয়েভ থেকে ক্রমশ কমছে রাশিয়ার সেনা। পূর্ব ইউক্রেন কি রাশিয়া দখল নিতে চায়?
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে রাশিয়ার সেনা। লড়াইও তীব্র হয়েছে। এই অঞ্চলেই তারা দুইটি জায়গাকে স্বাধীন বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল লড়াই শুরুর ঠিক আগে। অ্যামেরিকার ধারণা, পূর্ব ইউক্রেনের এই লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হবে।
গত মঙ্গলবার তুরস্কে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হয়। সেখানে রাশিয়া জানায়, রাজধানী কিয়েভ-সহ একাধিক জায়গা থেকে রাশিয়া ক্রমশ সেনা সরিয়ে নেবে। বস্তুত, এই প্রতিশ্রুতির পর ধীরে হলেও রাশিয়ার সেনা পশ্চিম ইউক্রেন থেকে সরতে শুরু করেছে। যদিও পেন্টাগনের আশঙ্কা, এটা রাশিয়ার কৌশলও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ইউক্রেনে নতুন করে সেনা বাড়াতে শুরু করেছে রাশিয়া।
ইউক্রেনে ইউক্রেনীয় ‘শরণার্থীদের’ জন্য রেস্তোরাঁ
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে প্রায় ৪০ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়েছেন৷ যারা পারেননি তারা রয়েছেন মহাসমস্যায়৷ নিজভূমে শরণার্থী, এমন অনেক মানুষকে বিনে পয়সায় খাওয়াচ্ছেন ইউক্রেনের এক মাস্টারশেফ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
ছুরি হাতে ক্লোপোটেঙ্কোর ‘যুদ্ধ’
ইউক্রেনে নারী, শিশু এবং ষাটোর্ধ পুরুষ ছাড়া সবার জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক৷সেই নিয়মে ইয়েভগেন ক্লোপোটেঙ্কোকেও হয়ত হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হতো৷ কিন্তু তারকা মাস্টারশেফ হাতে অস্ত্র না নিয়ে নিয়েছেন ছুরি৷ তার কথায়, ‘‘ আসলে বুঝতে পেরেছিলাম, বন্দুক হাতে আমি খুব একটা দক্ষ না হলেও ছুরির যুদ্ধে আমি খুব ভালো যোদ্ধা৷’’ সেই ছুরি অবশ্য মানুষ হত্যায় নয়, মানুষের খাবার তৈরিতে কাজে লাগে৷
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
‘তাদের’
কিয়েভ যখন রাশিয়ার বোমাহামলায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, ক্লোপোটেঙ্কো চলে যান লভিভে৷ সেখানে পোল্যান্ডে যেতে ইচ্ছুক অসংখ্য ইউক্রেনীয়ের ভিড়৷ অনেকেরই খাবার জোটে না৷ ক্লোপোটেঙ্কোর মনে হলো তাদের জন্য কিছু করা দরকার৷ সঙ্গে সঙ্গেই খুলে ফেললেন রেস্তোরাঁ৷ রেস্তোরাঁর নাম ‘ইশনি’, ইউক্রেনীয় এই শব্দের অর্থ কি জানেন? তাদের! হ্যাঁ, তাদের কথা ভেবে ‘তাদের’ নামেই রেস্তোরাঁ খুলেছেন ক্লোপোটেঙ্কো৷
ছবি: Joseph Campbell/REUTERS
তাদের জন্য বিশেষ অফার
ইউক্রেনের যেসব মানুষ নিজের শহর, বাড়ি ছেড়ে লভিভে এসেছেন, এসে সীমানা পেরিয়ে পাশের দেশে পোল্যান্ডে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন, নিজের রেস্তোরাঁয় তাদের জন্য বিনা মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা রেখেছেন ক্লোপোটেঙ্কো৷
ছবি: DW
তারকা ক্লোপোটেঙ্কো
ইউক্রেনের মানুষদের কাছে শেফ ক্লোপোটেঙ্কো আগে থেকেই খুব পরিচিত নাম৷ দেশবাসী তাকে প্রথম চেনে জাতীয় পর্যায়ের ‘মাস্টারশেফ’ প্রতিযোগিতায় জয়ী হবার পর৷ তারপর ইউক্রেনের লাল রঙের মূলা আর বাঁধাকপির স্যুপ ‘বোর্শ’-কে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেওয়ার দাবিতে ক্যাম্পেইন শুরু করেও একবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এসেছিলেন ইয়েভগেন ক্লোপোটেঙ্কো৷
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
ওলেনা সেভেরিনোভার কৃতজ্ঞতা
ওলেনা সেভেরিনোভা দনেৎস্ক থেকে লভিভে এসে খুব বিপদে পড়েছিলেন৷ কিন্তু ‘ইশনি’, অর্থাৎ ‘তাদের’ নামের রেস্তোরাঁটি খাওয়ার চিন্তা একেবারে দূর করে দেয়৷ সেখানে ক্লোপোটেঙ্কোর ‘ছুরির জাদুর’ খাবার খেয়ে ৭৩ বছর বয়সি নারী ভীষণ মুগ্ধ এবং কৃতজ্ঞ৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ওলেনা বললেন, ‘‘সে (ক্লোপোটেঙ্কো) আমাদের বিনা পয়সায় খাইয়েছে৷ আমাদের জীবন রক্ষায় সরাসরি ভূমিকা রাখার জন্য তাকেসহ সবাইকে ধন্যবাদ৷’’
ছবি: Alkis Konstantinidis/REUTERS
5 ছবি1 | 5
ডনবাস রাজনীতি
পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলটি কি রাশিয়া নিজেদের দখলে নিয়ে নিতে চাইছে? নতুন করে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখলের সময় ডনবাস অঞ্চলেও রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের তীব্র লড়াই হয়েছিল। বস্তুত, এই অঞ্চলে রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ইউক্রেনের সংঘাত চলছে অনেকদিন ধরেই। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের কিছুদিন আগে এই অঞ্চলে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। রাশিয়া তাদের সমর্থনও করে। ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির একাংশ রাশিয়ার সঙ্গে মিশেও যেতে চায়। অ্যামেরিকার গোয়েন্দাদের ধারণা, এবার ওই অঞ্চলগুলি রাশিয়া নিজেদের কব্জায় নিয়ে নিতে চাইছে।
অভিনব উপায়ে ইউক্রেন রক্ষার যুদ্ধে সাধারণ মানুষদের সহায়তা
ইউক্রেনীয়দের কাছে যুদ্ধটা যেন রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে জনযুদ্ধ৷ তাই নানা পেশার মানুষ এগিয়ে এসেছেন সৈনিকদের সহায়তায়৷ অস্ত্র না ধরেও যুদ্ধের ময়দানে থাকছেন তারা৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Pavlo Palamarchuk/REUTERS
শিল্পীর তৈরি ‘চেক হেজহগ’
হাঙ্গেরি সীমান্তের কাছের শহর উঝোরোদ-এ নিজের ওয়ার্কশপে কাজ করছেন ভলোদোমির কোলেসনিকভ৷ যুদ্ধের আগে নানা ধরনের ধাতু দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করতেন৷ এখন নিজের যাবতীয় দক্ষতা কাজে লাগাচ্ছেন ‘চেক হেজহগ’ তৈরির কাজে৷ চেক হেজহগ ধাতু দিয়ে তৈরি টি বা এল আকৃতির এমন এক কাঠামো, যা অল্প বা মাঝারি শক্তির ট্যাঙ্কের পথরোধে ভূমিকা রাখে৷
ছবি: Hudak/Ukrinform/abaca/picture alliance
ওয়েল্ডার বানাচ্ছেন চুলা
ওয়েল্ডার ইয়ান পোত্রোহোশ এবং তার সহকর্মীরা এমন ধাতব পাত দিয়ে তৈরি করছেন সহজে বহণ করা যায় এমন সব ছোট ছোট স্টোভ বা চুলা৷ সব চুলা যায় ইউক্রেনের নানা প্রান্তে যুদ্ধরত সৈনিকদের কাছে৷
এক মাস আগেও সাশো হোরোন্দি সারাদিন শুধু ব্যাকপ্যাক বা ব্যাকপ্যাকের সরঞ্জাম বানাতেন৷ এখন পিঠে ঝোলানোর ব্যাগ না বানিয়ে ইউক্রেনের সৈনিকদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য বানাচ্ছেন বুলেটপ্রুফ ভেস্ট৷
ছবি: Pavlo Palamarchuk/REUTERS
ওডেসা নগর রক্ষায় জনতা
কৃষ্ণসাগরের তীরের ওডেসা ইউক্রেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী৷ রাশিয়ার হামলায় এ শহর যাতে ধংস না হয় তার ব্যবস্থা করতে মরিয়া নগরবাসী৷ ওপরের ছবিতে ভিক্টর যেমন বালুর বস্তা কাঁধে নিয়ে যাচ্ছেন সেভাবেই কাঁধে করে শত শত বস্তা নিয়ে সমুদ্রসৈকতে সারি সারি করে রাখছেন তারা৷ এভাবে প্রতিরোধ-প্রাচীর গড়েও যদি প্রিয় নগরকে রক্ষা করা যায়!
ছবি: /Nacho Doce/REUTERS
গির্জায় বসে ক্যামোফ্লেজ তৈরি
ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্কের এক গির্জায় কিছু মানুষ জড়ো হন প্রতিদিন৷ সবাই মিলে ক্যামোফ্লেজ নেট, অর্থাৎ রুশ সেনাদের চোখে ধুলা দেয়ার জন্য বিশেষ ধরনের জাল তৈরি করেন তারা৷ ছবিতে জাল তৈরিতে ব্যস্ত এক নারী৷
ছবি: Yuriy Rylchuk/REUTERS
বিশ্ববিদ্যালয়ও এখন জাল তৈরির কারখানা
ইউক্রেনের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লভিভ পলিটেকনিক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি৷ সেখানেও সৈনিকদের জন্য ক্যামোফ্লেজ নেট বোনা হয় প্রতিদিন৷
ছবি: Pavlo Palamarchuk/REUTERS
6 ছবি1 | 6
পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা এএফপি সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, রাশিয়া দ্রুত ওই অঞ্চল নিজেদের দখলে নেওয়ার জন্য প্রচুর সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেন সহজে নিজেদের জায়গা ছাড়বে না। ফলে খুব দ্রুত এই লড়াইয়ের মীমাংসা হবে না। যুদ্ধ দীর্ঘস্থানীয় হবে।
জেলেনস্কির বক্তব্য
দৈনিক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে গুলি করে মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কারণ, দেশরক্ষার শপথ নিয়ে তারা দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছিল। রাশিয়ার কাছে খবর পৌঁছে দিচ্ছিল। জেলেনস্কির কথায়, ''ওই দুই ব্যক্তির বিচার করার সময় আমার হাতে ছিল না। বিশ্বাসঘাতকের যা শাস্তি হওয়া উচিত, তারা তা-ই পেয়েছে।''
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, দেশের দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকের অবস্থা ভয়াবহ। নতুন করে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে ওই অঞ্চলের সেনা। মারিউপলও ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার সেনা। ডনবাস অঞ্চলের অবস্থাও একইরকম। কিন্তু ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা জারি রাখার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জানিয়েছে, ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে অসুবিধা নেই। সেই অবস্থান থেকেই তারা পরবর্তী আলোচনা শুরু করতে চায়।