ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য আরো একটি ধাক্কা৷ যুক্তরাষ্ট্রে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের ব্যাপারে ভুল তথ্য প্রদানের দায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন মাইকেল ফ্লিন৷
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প প্রশাসনের ‘উত্তরণ' পর্যায়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একাধিক বার ফোনে কথা বলেন মাইকেল ফ্লিন৷ কিন্তু ওইসব টেলিফোনালাপের বিষয় সম্পর্কে তিনি দৃশ্যত ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের ‘অসম্পূর্ণ তথ্য' দিয়েছেন বলে ফ্লিন তাঁর পদত্যাগপত্রে স্বীকার করেছেন৷
‘‘দুঃখের বিষয়, ঘটনাবলীর ক্ষিপ্রতার কারণে, আমি অজ্ঞানতাবশে ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ও অন্যান্যদের রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার ফোনালাপ সম্পর্কে অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়েছি,'' তাঁর চিঠিতে লেখেন ফ্লিন৷
রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপের বিষয় নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ও বিতর্ক শুরু হয়ে যাবার পর মাইকেল ফ্লিন স্বীকার করেন যে, তিনি হয়তো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, যদিও তা শতকরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করে বলা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়৷
‘ওয়াশিংটন পোস্ট' পত্রিকা গত সপ্তাহে জানায় যে, ফ্লিন ২৯শে ডিসেম্বর তারিখে রুশ রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে মস্কোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন৷ ঠিক সেই দিনই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নির্দেশ দেন৷ ফ্লিন-কিসলিয়াক ফোনালাপগুলির আড়ি-পাতা অনুলিপি থেকে দেখা যায় যে, ফ্লিন রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন৷ মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা প্রথম এই আড়ি-পাতা অনুলিপিগুলির খবর দেন৷
ট্রাম্পের প্রথম সাতদিনের নির্বাহী আদেশ ও নির্দেশ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের সাতদিনের মধ্যেই ডজন খানেক নির্বাহী পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার মধ্যে ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ ও ‘মেমোরান্ডাম’, দুই’ই আছে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
অভিবাসন
শুক্রবারের একটি নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প সাতটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেন ও সিরীয় উদ্বাস্তু গ্রহণ অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখেন৷
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo/K. Willens
ওবামাকেয়ার
শপথগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তাঁর প্রথম এক্সিকিউটিভ অর্ডারে স্বাক্ষর করেন৷ আদেশটির ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল ওবামার ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর ‘‘অনাবশ্যক অর্থনৈতিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক বোঝা’’ হ্রাস করা৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার
বুধবার ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পরিদর্শন করার অবকাশে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি (মন্ত্রীকে) ‘‘অবিলম্বে দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর একটি প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা, নকশা ও নির্মাণকার্য শুরু করার’’ যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Torres
‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটিজ’
বুধবার ট্রাম্প আরো একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করেন, যা অনুযায়ী যে সব ‘অভয়াশ্রমের’ শহর বেআইনি অভিবাসীদের নথিবদ্ধ বা বহিষ্কার করে না, তাদের ফেডারাল অনুদান বাতিল করা হবে৷
ছবি: AP
দু’টি তেলের পাইপলাইনের অনুমতি
তাঁর কর্মকালের দ্বিতীয় দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’টি আদেশের মাধ্যমে দু’টি বিতর্কিত পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে বলেছেন৷ কি-স্টোন এক্সএল পাইপলাইনটি যাবে ক্যানাডা থেকে গাল্ফ কোস্টে মার্কিন রিফাইনারিগুলি অবধি: প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৫ সালে এই পাইপলাইন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখেন৷ ডাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইনটি ইন্ডিয়ান উপজাতিদের এলাকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে ব্যাপক বিক্ষোভের অবতারণা ঘটে৷
ছবি: REUTERS/L. Jackson
গর্ভপাত সংক্রান্ত ‘গ্লোবাল গ্যাগ রুল’
‘বিশ্বের মুখ চেপে ধরার নীতি’ হিসেবে পরিচিত এই নীতি প্রথম বাস্তবায়িত হয় ১৯৮৪ সালে, প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আমলে৷ মেক্সিকো সিটি পলিসি নামেও পরিচিত এই নীতি অনুযায়ী যে সব বিদেশি এনজিও গর্ভপাত সংক্রান্ত পরামর্শ বা সাহায্য দেয়, তাদের ফেডারাল সাহায্য না পাবার কথা৷ ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞা পুনরায় সক্রিয় করেছেন৷
ছবি: AP
টিটিপ থেকে পশ্চাদপসারণ
তাঁর কর্মকালের তৃতীয় দিনে (সোমবার) ট্রাম্প একটি মেমোরান্ডামের মাধ্যমে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তি থেকে স্থায়ীভাবে পশ্চাদপসারণ করার নির্দেশ দেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
7 ছবি1 | 7
ফ্লিনের এই ফোনালাপ সম্ভবত তথাকথিত ‘লোগান অ্যাক্ট' বা লোগান আইন লঙ্ঘণ করেছে৷ ঐ আইন অনুযায়ী বেসরকারি নাগরিকরা বিদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কূটনীতিতে সংশ্লিষ্ট হতে পারেন না৷ যদিও ফ্লিন সম্ভবত ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভুল ধারণা দেবার কারণেই বিদায় নিতে বাধ্য হলেন বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত৷
সোমবার জানা যায় যে, আইন বিভাগ ট্রাম্প প্রশাসনকে বেশ কয়েক সপ্তাহ আগেই সাবধান করে দিয়েছিল যে, ফ্লিন তাঁর টেলিফোনালাপের প্রকৃতি ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের সঠিক বিবরণ দেননি৷ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস সংবাদ সংস্থা বিভিন্ন সূত্র থেকে এ খবর জানতে পারে৷
তৎকালীন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েট্স বলেন যে, এই ফোনালাপের কারণে ফ্লিনকে ব্ল্যাকমেল করাও সম্ভব হতে পারে৷
ট্রাম্প অবসরপ্রাপ্ত লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলগকে অস্থায়ী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেছেন৷