চলতি সপ্তাহে ইউক্রেন সংকট নিয়ে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে৷ তবে আশান্বিত হওয়ার মতো কোনো খবর পাওয়া যায়নি৷ বৃহস্পতিবার ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার (ওএসসিই) সঙ্গে বৈঠক করে রাশিয়া৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে সোমবার মার্কিন প্রতিনিধি দল ও বুধবার ন্যাটোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল রাশিয়ার প্রতিনিধি দল৷
ইউরোপের নিরাপত্তা নীতি এবং ইউক্রেন ও জর্জিয়ার মতো প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর সম্ভাব্য ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে ঘুরেফিরে সেই এক পথে আলোচনা হয়েছে৷ ২০০৮ সালে ন্যাটো উভয় দেশকে ব্লকে যোগদানের সম্ভাবনার প্রস্তাব দিয়েছিল — তবে তারিখ ঠিক না করেই৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের হুঁশিয়ারি, পশ্চিমের দেশগুলো এভাবে চলতে থাকলে রাশিয়া ‘সামরিক-প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা’ অবলম্বন করবে৷
ইউক্রেন সংকট নিয়ে উত্তেজনা একটুও কমেনি৷ ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা ও ইউরোপের অন্য দেশগুলি৷ ওয়াশিংটন ও ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত মিত্রদের কাছ থেকে সামরিক বিস্তৃতি না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে মস্কো৷ যদিও তা খারিজ করা হয়েছে৷ তবে ওয়াশিংটন মস্কোকে এ নিয়ে লিখিত বিবৃতি দেয়নি৷
রাশিয়া-ন্যাটো বৈঠকেও মেলেনি সমাধানসূত্র
ইউক্রেন সংকট সেই তিমিরেই। ন্যাটোর বৈঠকেও সমাধানসূত্র মেলেনি। রাশিয়ার সঙ্গে আরো আলোচনার প্রস্তাব ন্যাটো সদস্যদের।
ছবি: Benoit Doppagne/dpa/picture alliance
ঐতিহাসিক বৈঠক
২০১৯ সালে শেষবার ন্যাটোর দেশগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল রাশিয়া। বুধবার ফের তারা ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়। এদিন ন্যাটোর ৩০টি সদস্য দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন রাশিয়ার প্রতিনিধিরা।
ছবি: Olivier Hoslet/AFP
অধরা সমাধানসূত্র
ন্যাটো প্রধান জেন স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সহজে তার সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রথম আলোচনায় তা মিললেও আরো আলোচনার পরিসর তৈরি হয়েছে।
অ্যামেরিকা-সহ ন্যাটোর অভিযোগ, ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে রাশিয়া। বিপুল পরিমাণ সেনা মজুত করা হয়েছে সেখানে। রাশিয়ার বক্তব্য, আত্মরক্ষার্থেই তারা সে কাজ করেছে। ইউক্রেনের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ইউক্রেনের ভিতরে রাশিয়া সেনা মোতায়েন করেছে।
অ্যামেরিকা-সহ একাধিক পশ্চিমা দেশের দাবি, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হোক। রাশিয়া এর ঘোর বিরোধী। ন্যাটোর বৈঠকে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইউক্রেনকে সদস্যপদ দিলে ফলাফল ভালো হবে না।
ছবি: Nick Connolly/DW
বৈঠকের আলোচনা
স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সদস্যপদ, রাশিয়ার সেনা মজুত সব বিষয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। দুইপক্ষ একটি বিষয়ে সহমত হয়েছে। অস্ত্রের ব্যবহার কমাতে হবে। মিসাইলের ব্যবহার কমাতে হবে। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানসূত্র খুঁজতে হবে।
ছবি: Andriy Dubchak/AP Photo/picture alliance
অ্যামেরিকার প্রতিক্রিয়া
এদিনের বৈঠকের পর অ্যামেরিকার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাশিয়া নিজের অবস্থানে অনড়। কিন্তু রাশিয়ার দাবি কাছে মাথা নত করা হবে না। আরো আলোচনার পক্ষে মত দিয়েছে অ্যামেরিকা।
সোভিয়েত আমলে ইউক্রেন ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। পরবর্তী সময়ে তা রাশিয়া থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং নতুন রাষ্ট্র তৈরি করে। সেই সময় থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের বিতর্ক। বিত্রক আরো বাড়ে গত দশকে ক্রাইমিয়া রাশিয়া দখল করার পর। ইউক্রেনের দাবি, অবৈধভাবে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করেছে। অ্যামেরিকা এবং ন্যাটোর অধিকাংশ দেশ ইউক্রেনের সমর্থনে কথা বলেছে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
তীব্র সংঘাত
এই পরিস্থিতিতে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলির। জো বাইডেন এবং ভ্লাদিমির পুটিন একাধিক বৈঠক করেছেন। এবং একে অপরকে সতর্ক করেছেন। হুমকি পাল্টা হুমকির ঘটনা ঘটছে প্রায় রোজই। তারই মধ্যে ব্রাসেলসে ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন সকলে।
9 ছবি1 | 9
পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ ইয়েফহেন মাখদা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সবথেকে খারাপ পরিস্থিতি আঁচ করে এই মুহূর্তে প্রস্তুত থাকা উচিত ইউক্রেনের৷ ইউক্রেনের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উলোদিমির ওহরিস্কো পশ্চিমের দেশগুলির থেকে অস্ত্র চেয়েছেন৷ রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার লুকাশেভিচ ন্যাটোকে জানিয়েছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার নির্দিষ্ট কিছু শর্ত মানতে হবে৷
ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল ইয়েন্স স্টলটেনব্যার্গ ডয়চ ভেলের ব্রাসেলসের প্রতিনিধি টেরি শুলৎসকে জানান, প্রায় দু বছর পর ন্যাটোর মিত্রগোষ্ঠীগুলি রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল৷ আলোচনা জটিল পর্যায়ে গিয়েছে৷ ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে৷ রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় গেলেও ইউরোপের নিরাপত্তার সঙ্গে কোনওরকম আপস করা যাবে না৷ অ্যামেরিকাও নিশ্চিত করেছে আপসের জন্য কোনওরকম বৈঠক নয়৷ ইউরোপের ২৮টি মিত্রগোষ্ঠী ছিল বৈঠকে৷ হয় ন্যাটোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে নইলে সরাসরি দ্বন্দ্বের পথে যেতে হবে রাশিয়াকে, স্পষ্ট করেন ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল৷
রোমান গোঞ্চারেঙ্কো, আলেকজান্ডার সাভিত্স্কি, টেরি শুলৎস/আরকেসি