রাশিয়ার সঙ্গে অবৈধ যোগাযোগের অভিযোগ ডাহা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিলেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস৷ ট্রাম্প প্রশাসনের এই মন্ত্রী সংসদীয় কমিটির সামনে মুখে কুলুপ এঁটে রইলেন৷
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে একাধিক তদন্ত চলছে৷ বিশেষ করে প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর টিমের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের সম্ভাবনার বিষয়টি বেশ গুরুতর৷ মার্কিন সেনেটের এক কমিটির সদস্যরা অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে জেরা করে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করার আশা করছিলেন৷ কিন্তু মঙ্গলবার কমিটির সামনে সেশনস যতটা সম্ভব মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন৷
সংসদ সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সেশনস সত্য উন্মোচনের যাবতীয় প্রচেষ্টা বানচাল করে দিলেন৷ কখনো তিনি সরাসরি প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন, কখনো বললেন তিনি ঠিক মনে করতে পারছেন না৷ আর রাশিয়ার সঙ্গে নিজের অবৈধ যোগাযোগের অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিলেন তিনি৷
অ্যাটর্নি জেনারেল সেশনস কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে সরাসরি অস্বীকার করেন৷ যেমন এফবিআই-এর তৎকালীন প্রধান জেমস কোমি যেভাবে ট্রাম্প টিমের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের অভিযোগের তদন্ত করছেন, সে বিষয়ে তিনি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো আলোচনা করেছিলেন কি না, তা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেননি তিনি৷ উল্লেখ্য, এর পরেই কোমি বরখাস্ত হন৷ চাপের মুখে সেশনস বলেন, তিনি বিচার মন্ত্রণালয়ের নীতি মেনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ৷
সেশনস এ যাত্রা রেহাই পেলেও তাঁর রক্ষণাত্মক ভূমিকার ফলে আবার অভিযোগ উঠছে যে, সামগ্রিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি গোপন রাখতে চাইছে৷ ডেমোক্র্যাটিক দলের সংসদ সদস্য অ্যাডাম শিফ এ অবস্থায় কংগ্রেসকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবার আহ্বান জানান৷
ওয়াশিংটনে সর্ষের মধ্যেই যখন ভূত
উইকিলিক্স অথবা অন্য কোনো ‘বেসরকারি’ সংগঠন নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক গোপন বিষয় ফাঁস করে দিচ্ছে হোয়াইট হাউস বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলিরই ভিতরের মানুষ৷ ট্রাম্প ক্রোধে ফুঁসলেও তার উৎস খুঁজে পাচ্ছেন না৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
টেলিফোন সংলাপ
ক্ষমতায় আসার পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু বিদেশি শীর্ষ নেতার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ আলোচনা করেছিলেন৷ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বেশ কিছু বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেন৷ সেই খবর সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷
কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে ট্রাম্প-এর রোষের শিকার হয়েছিলেন ওবামা আমলের অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটস৷ তিনিই রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প টিমের যোগাযোগ নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করেছিলেন বলে ট্রাম্প সন্দেহ করেন৷
ছবি: Reuters/L. Buckman
রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ওভাল অফিসে আলোচনার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইএস সম্পর্কে এমন গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন, যা ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও অজানা ছিল৷ সেই তথ্য ফাঁসের ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/Tass/Alexander Shcherbak
এফবিআই মেমো
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে আলোচনার পর তার বিস্তারিত বিবরণ লিখে রাখতেন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর প্রাক্তন প্রধান জেমস কোমি৷ তাঁকে বরখাস্ত করার পর সেই ‘মেমো’-র অস্তিত্ব ও বিবরণ ফাঁস হওয়ায় জোরালো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Harrer
পোপনীয়তা ও স্বতঃস্ফূর্ততা
হোয়াইট হাউসের কর্মী ও উপদেষ্টারা ট্রাম্প-এর অনেক সিদ্ধান্ত আগেভাগে জানতে পারেন না৷ ফলে তার ব্যাখ্যাও দিতে পারেন না৷ ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, যে তাঁর দ্রুত চিন্তার সঙ্গে তারা তাল মিলিয়ে চলতে পারে না৷ এমন ‘অরাজকতা’-র ফলে তথ্য-ফাঁসের ঘটনা ঘনঘন ঘটছে বলে অনেকে মনে করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik
অন্তর্ঘাতের অভিযোগ
ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা এই সব তথ্য ফাঁসের ঘটনার মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্রের কালো ছায়া দেখছেন৷ অনির্বাচিত আমলারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ আন্দোলনকে হেয় করতে এমন অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে বলে রক্ষণশীল মহলে অভিযোগ উঠছে৷ এই সব ‘লিক’-এর উৎস খুঁজে বার করতে গোয়েন্দা সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যমকে চ্যালেঞ্জ করছে তারা৷