ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই সেনা মহড়ার আয়োজন করেছে রাশিয়া। আগামী ৩০ অগাস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার পূর্ব প্রান্তে এই মহড়া হওয়ার কথা। যার নাম দেওয়া হয়েছে ভস্তক সেনা মহড়া। সেখানেই যোগ দেবে চীন। যোগ দেওয়ার কথা ভারতেরও।
বুধবার একটি বিবৃতি দিয়েচীন জানিয়েছে, রাশিয়ার আয়োজিত ওই সেনা মহড়ায় তারা যোগ দেবে। এর সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই। এই মহড়ায় যোগ দিলে চীনের সেনার কৌশলগত উন্নতি হবে বলে তারা মনে করে। এর ফলে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কও গভীর হবে।
তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে চলছে মহড়া। মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে জাপানের সমুদ্রেও।
ছবি: Huizhong Wu/AP/dpa/picture allianceমার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে এলে তার ফল ভালো হবে না বলে আগেই সতর্ক করেছিল চীন। এবার কার্যত তাইওয়ান ঘিরে ধরে তারা সামরিক মহড়া শুরু করেছে। চীনের দাবি, রুটিন সামরিক মহড়া চলছে। কিন্তু যেভাবে তারা এই মহড়া শুরু করেছে, তাতে চিন্তিত তাইপেই।
ছবি: Issei Kato/REUTERSবৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা ১২টা থেকে চীন এই মহড়া শুরু করেছে। জল, স্থল এবং আকাশে মহড়া চলছে। একের পর এক যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালীর উপর দিয়ে তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে উড়ে গেছে। যুদ্ধ জাহাজ কার্যত ঘিরে রেখেছে তাইওয়ানকে। তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে যুদ্ধজাহাজ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ছবি: Hong Wei /Xinhua/IMAGOনৌ এবং স্থলসেনা লাগাতার গোলাবারুদ ছুঁড়ছে বলে অভিযোগ। একের পর এক ব্যালেস্টিক মিসাইলও তাইওয়ান প্রণালীতে সমুদ্রের জলে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। সামান্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেই তা তাইওয়ানের মূলভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে। তাইওয়ান প্রমালী চীনের মূল ভূখণ্ড এবং তাইওয়ানকে আলাদা করেছে।
ছবি: Huizhong Wu/AP/dpa/picture allianceমহড়ায় নেমেছে চীনের স্থলসেনাও। চীন লিবারেশন আর্মি অবশ্য জানিয়েছে, এটি তাদের রুটিন মহড়া। মূল ভূখণ্ড থেকে সমুদ্র লক্ষ্য করে মিসাইল ছোঁড়া হচ্ছে।
ছবি: CCTV/AP/picture allianceঅন্যদিকে জাপানের অভিযোগ, সমুদ্রে অবস্থিত জাপানের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোনে প্রপেলড মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। বস্তুত, তাইওয়ান থেকে জাপানে গেছেন ন্যান্সি পেলোসি। তার যাত্রার অব্যবহিত পরেই ওই মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। বুঝিয়ে দিয়েছে, পেলোসির তাইওয়ান সফরের জবাবেই তারা একাজ করছে।
ছবি: Hector Retamal/AFPতাইপেই জানিয়েছে, তাইওয়ানের উপর দিয়েও মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। তাইওয়ান পার করে যা জলে গিয়ে পড়েছে। গোটা তাইওয়ানে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
ছবি: Hector Retamal/AFPসম্প্রতি তাইওয়ান সফরে গেছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার পেলোসি। গত ২৫ বছরে এই পদমর্যাদার কোনো মার্কিন রাজনীতিক তাইওয়ানে যাননি। বস্তুত, তাইওয়ানের সঙ্গে অ্যামেরিকার সুসম্পর্ক থাকলেও দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তাইওয়ান স্বশাসিত একটি অঞ্চল। চীনের একাধিপত্য তারা মেনে নেয় না। গত কয়েক বছরে চীন তাইওয়ান এবং হংকংয়ের উপর চাপ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পেলোসির তাইওয়ান সফর।
ছবি: Kyodo/dpa/picture allianceচীন আগেই জানিয়ে রেখেছিল, পেলোসি এলে তার ফল ভালো হবে না। চীনের সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে পেলোসি তাইওয়ান যান। তারপরেই ভয়াবহ সেনা মহড়া শুরু করেছে চীন। তাইওয়ানের কার্যত নাকের ডগায় একাজ করা হচ্ছে।
ছবি: EASTERN THEATRE COMMAND/REUTERS ভারতেরও এই মহড়ায় যোগ দেওয়ার কথা। যদিও বুধবার পর্যন্ত এবিষয়ে ভারতের সেনাবাহিনী বা সরকারের তরফে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ভারত রাশিয়ায় যাবে না, এমনও বলা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারত এই মহড়ায় অংশ নেবে। এছাড়াও বেলারুশ, তাজিকিস্তান, মঙ্গোলিয়া এই মহড়ায় যোগ দেবে। মোট ১৩টি ট্রেনিং ক্যাম্পে মহড়া হওয়ার কথা।
মহড়া ঘিরে দুইটি প্রশ্ন উঠেছে ভারতে। প্রথমত, ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ে রাশিয়ায় সেনা মহড়ায় যোগ দেওয়ার অর্থ কী? এর ফলে কি ভারত কূটনৈতিক অবস্থান বদল করছে বলে পশ্চিম ধরে নেবে? পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে এর ফলে কি ভারতের সম্পর্কে চিড় ধরবে? ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত কোনোপক্ষকেই সমর্থন করেনি। তবে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনেছে। যা নিয়ে অ্যামেরিকা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সরাসরি বিতর্কে যায়নি। কিন্তু সেনা মহড়ায় যোগ দিলে অ্যামেরিকার কী অবস্থান হয়, সেটাই দেখার।
এদিকে চীনের সঙ্গে লাদাখ এবং অরুণাচলে রীতিমতো সংঘাতের পরিস্থিতি। লাদাখে এখনো দুই দেশের সেনার কার্যত স্ট্যান্ড অফ চলছে। এই অবস্থায় চীন এবং ভারতের সেনা কি একসঙ্গে মহড়ায় যোগ দেবে? মোট ১৩টি ক্যাম্পে মহড়া হবে বলে রাশিয়া জানিয়েছে। তাহলে কি চীন এবং ভারতের সেনা আলাদা আলাদা ক্যাম্পে যাবে? আকাশ এবং স্থলসেনা এই মহড়ায় যোগ দেবে বলে রাশিয়া জানিয়েছে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই, দ্য হিন্দু)