ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরই নড়েচড়ে বসেছে গোটা বিশ্ব। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার নিন্দায় সোচ্চার বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। একের পর এক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, ক্রীড়াবিদ, তারকারা রাশিয়ার হামলার নিন্দায় সামিল হয়েছেন। ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো কড়া আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে। অ্যামেরিকাও একই পথে হাঁটছে। পাশাপাশি চেষ্টা চলছে, রাশিয়া যাতে দ্রুত ইউক্রেন থেকে ফিরে আসে তার জন্য।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ ফোন করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিনকে। মাক্রোঁ জানিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তাকে এই ফোন করতে বলেছিলেন। কারণ, পুটিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ফোন ধরছেন না। মাক্রোঁ জানিয়েছেন, তিনি সরাসরি, কড়াভাবে খোলাখুলি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, অবিলম্বে হামলা থামাতে হবে। রাশিয়ার সেনাকে ইউক্রেন থেকে ফিরে আসতে হবে।
মাক্রোঁ বলেছেন, এই ঘটনার ফলে ইউরোপের জীবন বদলে যাবে। এই হামলা ইউরোপের ইতিহাসে একটা টার্নিং পয়েন্ট।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেছেন, ''আমরা পুটিনকে ইউরোপের সুরক্ষা ছিন্নভিন্ন করতে দেব না।'' তিনি জানিয়েছেন, ''আমরা রাশিয়ার অর্থনীতির প্রধান ক্ষেত্রগুলিকে টার্গেট করব। তারা যাতে বাজার না পায় এবং প্রযুক্তি না পায়, সেটা নিশ্চিত করব। তাছাড়া আমরা ইইউ-তে রাশিয়ার সম্পদ ফ্রিজ করব এবং রাশিয়ার ব্যাঙ্কগুলি যাতে এখানে কোনো কাজ করতে না পারে, সেটাও নিশ্চিত করব।''
কিয়েভ-সহ অনেক শহরে আছড়ে পড়েছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। রাশিয়ার যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের একটি শহরের ছবি। আগুন জ্বলছে।
ছবি: picture alliance/dpa/Mary Ostrovska/AP
গোলার তাণ্ডব
ইউক্রেনের শহর মারিয়াপোল। রাশিয়ার কামান থেকে ছোড়া গোলার আঘাতে বাড়ি ভেঙেছে। গাড়ি নষ্ট হয়েছে। ইউক্রেনের অনেক শহরের ছবি এরকমই।
ছবি: Sergei Grits/AP/picture alliance
বোমার আঘাতে
পূর্ব ইউক্রেনের চুগুয়েভ শহরের ছবি। বোমার আঘাতে বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়েছে। তারপর সেখানে এসেছেন মানুষ। খুঁজছেন হারানো জিনিস। এবার কোথায় যাবেন, তা-ই ভাবছেন।
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
বিপন্ন মানুষ
চুগুয়েভের আরেকটি দৃশ্য। বোমার আঘাতে বাড়ি ভেঙেছে। গাড়ি আর চলার অবস্থায় নেই। তার কাছেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন এক বিপন্ন ব্যক্তি।
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
আগুন জ্বলছে
কিয়েভের কাছে রাশিয়ার হামলায় গুঁড়িয়ে গেছে বেসরকারি বাড়ি। সেখানে তখনো আগুন জ্বলছে। কিয়েভে একের পর এক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে।
ছবি: Efrem Lukatsky/AP/picture alliance
সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত
ইউক্রেনের একটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে রাশিয়া। তারপর সেখান থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া চারপাশ ঢেকে দিয়েছে।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP/picture alliance
বিমানঘাঁটি দখলের লড়াই
কিয়েভের ঠিক বাইরে একটি বিমানঘাঁটি দখল করার চেষ্টা করছে রাশিয়া। তীব্র লড়াই চলছে। তার আশপাশের এলাকায় বোমা ফেলেছে রাশিয়া। তেমনই একটি এলাকার ছবি।
ছবি: DANIEL LEAL/AFP
ধ্বংসের চেহারা
কিয়েভের বাইরে রাশিয়ার আক্রমণের পরের ছবি। চারপাশে শুধু ছড়িয়ে থাকা ধ্বংসের ছবি।
ছবি: Efrem Lukatsky/AP/picture alliance
ট্রেন ধরার জন্য
কিয়েভের মানুষ ট্রেন ধরার জন্য একটি সাবওয়েতে ছুটছেন। তারা দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চান। রাশিয়ার হামলার মুখে অসহায় বোধ করছেন তারা।
ছবি: Emilio Morenatti/AP/dpa/picture alliance
বাসে ওঠার ভিড়
বাসে করে কিয়েভ থেকে দূরে যাওয়ার জন্য মরিয়া মানুষের ভিড়।
ছবি: Emilio Morenatti/AP/dpa/picture alliance
হামলার হাত থেকে বাঁচতে
রাশিয়ার হামলার হাত থেকে বাঁচতে সাবওয়েকে নিরাপদ মনে করছেন অনেকে। সেখানেই থাকছেন তারা।
ছবি: Emilio Morenatti/AP/dpa/picture alliance
11 ছবি1 | 11
জার্মানির চ্যান্সেলার শলৎস বলেছেন, ''কোনো কারণ ও যুক্তি ছাড়াই রাশিয়া এই হামলা করেছে। পুটিন বড় ভুল করলেন। রাশিয়াকে তার মূল্য দিতে হবে।''
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, তারা ইউক্রেনের পাশে আছেন। তার বিশ্বাস, ''রাশিয়া কিছুতেই ইউক্রেন দখল করতে পারবে না। ইউক্রেন স্বাধীন থাকবে। পুটিনের এই বর্বরোচিত কাজ যাতে ব্যর্থ হয় তার জন্য আমরা কূটনৈতিক, আর্থিক, রাজনৈতিক এবং দরকার হলে সামরিক দিক থেকে চেষ্টা করব।''
এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিক্রিয়া
জাপান জানিয়েছে, তারা পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাশিয়ার আগ্রাসনের মোকাবিলা করবে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তারাও রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন। তারা চান, শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান হোক।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণ সমাধান চান। ইউক্রেনে যা হয়েছে, তা তারা আর দেখতে চান না।
রাশিয়া-ইউক্রেন, কার কত শক্তি
তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। একনজরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সামরিক শক্তি।
ছবি: Carlos Barria/REUTERS
যুদ্ধরত সেনা
ইউক্রেনের হাতে আছে দুই লাখ যুদ্ধরত সেনা। যারা সরাসরি লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে। রাশিয়ার হাতে আছে আট লাখ ৫০ হাজার যুদ্ধরত সেনা। যারা যে কোনো সময় লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। এদেরই একটি অংশ এখন লড়াইয়ের ময়দানে আছে।
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
সংরক্ষিত সেনা
ইউক্রেনের হাতে সংরক্ষিত বা রিজার্ভড ব্যাটেলিয়ন আছে আড়াই লাখ। যারা প্রয়োজনে লড়াইয়ের ময়দানে নামবে। রাশিয়ার হাতেও সংরক্ষিত সেনার সংখ্যা আড়াই লাখ।
ছবি: Aris Messinis/AFP
প্যারামিলিটারি বাহিনী
রাশিয়ার প্যারামিলিটারি বাহিনীর সংখ্যা আড়াই লাখ। এর বাইরে স্পেশাল ফোর্স আছে। যারা ইউক্রেন হামলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইউক্রেনের প্যারামিলিটারি বাহিনীর সংখ্যা মাত্র ৫০ হাজার।
ইউক্রেনের হাতে সাজোয়া গাড়ি বা আর্মার্ড ভেহিক্যালের সংখ্যা ১২ হাজার ৩০৩। রাশিয়ার হাতে এই ধরনের গাড়ির সংখ্যা ৩০ হাজার ১২২। বস্তুত, সম্পূর্ণ বুলেটপ্রুফ এই গাড়িগুলিতে করেই সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছায়। এর সাহায্যে প্রতিপক্ষের উপর আঘাতও হানা যায়।
ইউক্রেনের হাতে ফাইটার জেট বা যুদ্ধবিমান আছে ৬৯টি। রাশিয়ার কাছে সেখানে ফাইটারের সংখ্যা ৭৭২।
ছবি: Erik Romanenko/Tass/imago images
যুদ্ধের হেলিকপ্টার
যুদ্ধ করার মতো হেলিকপ্টার ইউক্রেনের কাছে আছে মাত্র ৩৪টি। রাশিয়ার কাছে সেখানে এই হেলিকপ্টারের সংখ্যা ৫৪৪। ইউক্রেন হামলার প্রথম দিন রাশিয়া এই হেলিকপ্টার প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করেছে। হেলিকপ্টারের সাহায্যে বোমা ফেলা হয়েছে। গুলি চালানো হয়েছে।
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
এবং নৌবহর
নৌবহরেও রাশিয়ার থেকে অনেক পিছিয়ে আছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৩৮টি। রাশিয়ার হাতে সেখানে ৬০৫টি যুদ্ধজাহাজ। কৃষ্ণসাগরে যার অনেকগুলিকে স্ট্যান্ডবাই করে রাখা হয়েছে।
ছবি: Iranian Army/AP Photo/picture alliance
পরমাণু শক্তি
ইউক্রেনের হাতে একটিও পরমাণু অস্ত্র নেই। অন্যদিকে রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম পরমাণু শক্তিধর দেশ। ছয় হাজার ২৫৫টি পরমাণু অস্ত্র আছে তাদের হাতে।
ছবি: AP Photo/picture-alliance
10 ছবি1 | 10
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়ার হামলার জন্য ন্যাটোর উসকানিকেই দায়ী করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, এখন এই লড়াই শেষ করার জন্য রাজনৈতিক প্রয়াস নিতে হবে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা ইউক্রেন ছেড়ে আসা সব মানুষকে আশ্রয় দিতে তৈরি। তারা ইউক্রেনের মানুষের জন্য মানবিক সাহায্য করবে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্ব জুড়েই লেখক, শিল্পী, ক্রীড়াবিদরা রাশিয়ার হামলার প্রতিবাদ করছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের একটাই আবেদন, অবিলম্বে হামলা শেষ হোক। রাশিয়ার সেনা ইউক্রেন ছেড়ে দেশে ফিরুক।