রাশিয়ায়ও চাপের মুখে পুটিন কী করবেন?
১২ সেপ্টেম্বর ২০২২গোটা বিশ্ব যে ঘটনাকে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা হিসেবে জানে, রাশিয়ায় সেটিকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান' ছাড়া অন্য কিছু বলার জো নেই৷ ক্রেমলিনের সেই সাজানো ‘ন্যারেটিভ'-এর প্রকাশ্য বিরোধিতা করলেই দেশদ্রোহের দায়ে বড় শাস্তির আশঙ্কা রয়েছে৷ ইতোমধ্যেই প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখিয়ে কারাগারে স্থান পেয়েছেন অনেক সাহসি মানুষ৷ ফলে সহজে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন বেশিরভাগ দেশবাসী৷
সম্প্রতি সেই ভয় যেন কিছুটা কমতে শুরু করেছে৷ ইউক্রেনের প্রতি সংহতির কারণে নয়, বরং রাশিয়ার জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার মারাত্মক ক্ষতির অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ও সামরিক বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন কিছু জনপ্রতিনিধি ও নেতা৷ কেউ কেউ পুটিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের মামলা করার কথাও বলছেন৷ ‘অকারণে' রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে এবং জেনেশুনে দেশকে কড়া নিষেধাজ্ঞার শিকার করে পুটিন দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি করছেন বলে তাঁরা মনে করছেন৷
এমনকি কট্টর জাতীয়তাবাদীরাও রোববার ইউক্রেন যুদ্ধে জয় নিশ্চিত করতে অবিলম্বে রণকৌশল পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন৷ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বিপর্যয়ের কড়া সমালোচনা করেছেন পুটিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত চেচেন নেতা রামজান কাদিরভ৷ টেলিগ্রাম অ্যাপে প্রকাশিত প্রায় ১১ মিটিটের অডিও বার্তায় তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তরা ‘বিশেষ সামরিক অভিযান'-এ দ্রুত পরিবর্তন না করলে তিনি রুশ নেতৃত্বের কাছে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে বাধ্য হবেন৷ উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা ও গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি-র প্রাক্তন অফিসার ইগর গিরকিন বর্তমান ঘটনাবলির সঙ্গে ১৯০৫ সালে মুকদেন যুদ্ধের তুলনা করেছেন৷ উল্লেখ্য, জাপানের সঙ্গে সেই যুদ্ধে রাশিয়ার শোচনীয় পরাজয়ের পর বলশেভিক বিপ্লব ঘটেছিল৷ তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর কড়া সমালোচনা করেন৷
পুটিন ইউক্রেনে রুশ সেনেবাহিনীর ব্যর্থতা নিয়ে এখনো মুখ খোলেন নি৷ রোববার তিনি মস্কো শহরের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন উৎসব নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন৷ মস্কোর মাহাত্ম্য তুলে ধরে তিনি খুবই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷ রাশিয়ার দুর্দিনে মস্কোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসব পালন নিয়েও সমালোচনা উঠেছে৷ এমন পরিস্থিতিতে পুটিন রুশ সৈন্যদের দূরাবস্থা এবং রাশিয়ার বর্তমান সামরিক দুর্বলতা সম্পর্কে আদৌ যথেষ্ট সচেতন কিনা, সে বিষয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সামরিক বাহিনীও নীরব থাকায় অনেক মহলে বিভ্রান্তি বাড়ছে৷ ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ব্যর্থতা ঢাকতে প্রথমে কিছু ‘অজুহাত' তুলে ধরলেও তারপর মুখে কুলুপ এঁটেছেন কর্মকর্তারা৷
ইউক্রেন যুদ্ধের বিরোধীদের দমন করা অপেক্ষাকৃত সহজ হলেও রাশিয়ার নিজস্ব উগ্র জাতীয়তাবাদী শিবিরের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া পুটিনের জন্য বেশ কঠিন কাজ হবে৷ পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ ও উদারপন্থি তকমা দিয়ে তাদের জব্দ করা সম্ভব নয়৷
রাতারাতি সেনাবাহিনীকে চাঙ্গা করে তোলা খোদ ভ্লাদিমির পুটিনের পক্ষে সম্ভব নয়৷ আবার কিছু না করে হাত গুটিয়ে বসে থেকে একের পর এক পরাজয় মেনে নেওয়ার ঝুঁকিও কম নয়৷ সে ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব হারানোর আশঙ্কা বাড়তেই থাকবে৷ কোণঠাসা হয়ে পুটিনের মতো মানুষ এমন নাজুক পরিস্থিতিতে নিজের গদি বাঁচাতে কী করে বসতে পারেন, সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের হুমকি তিনি আগেই দিয়েছেন৷ এত বড় পদক্ষেপ না নিলেও কমপক্ষে ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডারে হাত দেবার ঝুঁকি নিয়ে তিনি বড় একটা ‘চমক' সৃষ্টি করার লোভ সামলাতে পারবেন কি?
এসবি/কেএম