বিশ্বকে স্বাগত জানিয়ে ভাষার সেতুটাই তৈরি করতে পারেনি রাশিয়া৷ আরেকটি বড় সমস্যা দূরত্ব৷ পৃথিবীর ছয় ভাগের একভাগ স্থলের দেশটির ১১ শহরে হচ্ছে বিশ্বকাপ৷ এর মধ্যে একটি ভেনু থেকে আরেক ভেনুর দূরত্ব মস্কো থেকে লন্ডনের চেয়েও বেশি৷
বিজ্ঞাপন
মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ এসেছি ১৮ জুন৷ ১৯ জুন সাতসকালে স্টেডিয়ামে গিয়ে জনে জনে এই জিজ্ঞাসা৷ বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে নতুন এই ভেনু্৷ ছবির মতো সুন্দর তা৷ ঐশ্চর্যমাখা৷ বাল্টিক সাগরের তীরঘেঁষা এই ‘ফ্লাইং সসার' আভিজাত্য ঘোষণা করছে সদম্ভে৷ কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের জন্য অ্যাক্রিডিটেশনের ঝামেলা তো মেটাতে হবে আগে৷ মস্কো থেকে বিশ্বকাপের মূল অ্যাক্রিডিটেশন এনেছি; নতুন শহরের জন্য আবার কিছু আনুষ্ঠানিকতা মেটানোর পালা৷ স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য উপভোগ বাদ দিয়ে, ঢাকায় লেখা পাঠানোর তাড়া তাড়িয়ে তাই আগে ওই খোঁজ৷ মিডিয়া অ্যাক্রিডিটেশন সেন্টার কোথায়?
যে কোনো সাধারণ স্টেডিয়ামের কর্মীদের জন্যই এ প্রশ্ন আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে না৷ অবহেলায় আঙুলের হেলনিতে দিক দেখিয়ে দেবে তারা– এই তো প্রত্যাশিত৷ আর এটি যখন বিশ্বকাপ ভেনু্, সহজ প্রশ্নের চটপট উত্তরই তো পাবার কথা৷ কিন্তু রাশিয়ায় দিন দশেক থাকার অভিজ্ঞতায় ততটা ভরসা করতে পারছিলাম না৷ আর আশঙ্কা সত্যি করে সত্যিই তো দেখি ওই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না কারো কাছে৷ যাঁকেই জিজ্ঞেস করি, প্রশ্ন শুনে মুখের রেখা যায় পাল্টে৷ যেন ক্লাস ওয়ানের শিশুকে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের প্রশ্ন করা হয়েছে৷ এ অগ্নিপরীক্ষার সামনে বড্ড অসহায় তাঁরা৷
মূল কারণ, ভাষার ব্যবধান৷ বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে দুই শহরের তিন ভেনু্তে তো যাওয়া হয়েছে৷ মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গের লুজনিকি স্টেডিয়াম, স্পার্তাক স্টেডিয়াম ও সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম৷ প্রতিবেদন তৈরির জন্য ছুটতে হয়েছে আরো কত জায়গায়৷ সর্বত্রই সবচেয়ে বড় সমস্যা ওই ভাষা৷ সিংহভাগ রুশ ইংরেজি বোঝেন না, বলেন না, জানেন না৷ বিশ্বকাপ কাভার করতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা সাংবাদিকদের সিংহভাগ আবার ইংরেজি পেরিয়ে রুশ বোঝেন না, বলেন না, জানেন না৷
রাশিয়া বিশ্বকাপের সব প্রথম
রাশিয়া বিশ্বকাপে ফেবারিটদের সাথে সমানে পাল্লা দিচ্ছে তথাকথিত ছোট দলগুলিও৷ এই ফাঁকে চলুন দেখে নেয়া যাক এই বিশ্বকাপের কিছু প্রথম...
ছবি: Getty Images/C. Rose
প্রথম গোল
সৌদি আরবের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে প্রথম গোল দেন রাশিয়ার ইউরি গাজিনস্কি৷ সেই সূত্রে এটি রাশিয়া বিশ্বকাপেরও প্রথম গোল৷ এরপর অবশ্য সৌদি আরবকে আরো চার চারটি গোল হজম করতে হয়৷ ফলে বিশ্বকাপের প্রথম জয়ও উঠেছে রাশিয়ার ঘরেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bandic
প্রথম আত্মঘাতি গোল
মরোক্কোর বিরুদ্ধে ইরান নিজের চেষ্টায় নয়, বরং খেলার ইনজুরি টাইমের শেষ মুহূর্তে পেয়েছে আত্মঘাতী গোল৷ মরোক্কোর আজিজ বুহাদ্দুজার এই গোলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো একটি ম্যাচ জয় করতে সক্ষম হয় ইরান৷
ছবি: Reuters/D. Martinez
প্রথম হ্যাটট্রিক
বিশ্বকাপের প্রথম বড় ম্যাচে মুখোমুখি হয় স্পেন-পর্তুগাল৷ গোলের বন্যায় ভেসে যায় ম্যাচটি৷ দুই দল মিলে ৬ গোল হলেও, জয় নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেনি কেউই৷ তবে পর্তুগালের হয় তিনটি গোলই করেছেন সেনসেশনাল ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো৷ এটিই রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
প্রথম হলুদ কার্ড
এই রেকর্ডও রাশিয়ার দখলেই৷ সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রাশিয়ার আলেক্সান্ডার গোলোভিন৷
ছবি: Reuters/C. Recine
প্রথম লাল কার্ড
জাপানের বিপক্ষে ম্যাচে হার্ড ট্যাকল করায় বিশ্বকাপের প্রথম লাল কার্ড দেখেন কলম্বিয়ার কার্লোস সানচেজ৷ শুধু তাই না, তার ফাউলের কারণে একটি পেনাল্টিও পায় জাপান৷ ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতেও নেয় জাপান৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
প্রথম ভিএআর
এই বিশ্বকাপেই প্রথম চালু হয়েছে ভার্চুয়াল অ্যাসিসট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর৷ ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে জশুয়া রিডসনের ট্যাকলে অস্ট্রেলিয়ার ডিবক্সে পড়ে যান ফ্রান্সের অ্যান্টনিও গ্রিজমান৷ উরুগুয়ের রেফারি আন্দ্রেস কুনহা প্রথমে খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও পরবর্তীতে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেন ভিএআর, সিদ্ধান্ত পালটে ঘোষণা দেন পেনাল্টির৷ ম্যাচে ২-১ গোলে জয় পায় ফ্রান্স৷
ছবি: Reuters/S. Perez
প্রথম অঘটন
মোস্ট ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে জয় নিতে দেয়নি আইসল্যান্ড৷ রুখে দিয়েছে ১-১ গোলে৷ হেক্সা মিশনে আসা ব্রাজিলকেও সুইজারল্যান্ড আটকে ফেলে ১-১ গোলে৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির৷ মেক্সিকোর দারুণ গতির সামনে ১-০ গোলে হার মানতে হয় জার্মানিকে৷
ছবি: Reuters/C. Recine
7 ছবি1 | 7
ফলে যা হবার হচ্ছে তাই৷ একেবারে যাচ্ছেতাই৷ সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে গিয়ে প্রথম দিন অ্যাক্রিডিটেশন সেন্টার খুঁজেই পেলাম না আর৷ ম্যাচ দেখে, মিডিয়া সেন্টারে কাজ সেরে পরের দিন সকালে আবার একই যুদ্ধে৷ লাল-নীল জ্যাকেটের ভলান্টিয়ার ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য৷ কেউ বলে ডানে যাও, কেউ বলে বাঁয়ে৷ স্যুটেড-বুটেড এক ভদ্রলোক তো সাহায্যের জন্য নিজের গাড়িতে চড়িয়ে পুরো স্টেডিয়াম ঘুরিয়ে কাঙ্খিত গন্তব্য হিসেবে এক জায়গায় ফেলে গেলেন৷ এ ক'দিনে শেখা গোটা কয়েক শব্দের রুশ শব্দভান্ডার থেকে ‘স্পাসিভা' অর্থাত্ ‘ধন্যবাদ' জানিয়ে বিদায় দিলাম তাঁকে৷ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে বুঝি, অ্যাক্রিডিটেশন সেন্টার মনে করে আমার চেনা মিডিয়া সেন্টারেই এনে ফেলেছেন ভদ্রলোক৷
এ অবস্থা সর্বত্র৷ সব জায়গায়৷ ভাষার ব্যবধান দূর হচ্ছে না কিছুতেই৷ রাশিয়ায় বিশ্বকাপ আয়োজন হচ্ছে বলে এ দেশের সবাইকে সার্বজনীন বৈশ্বিক ভাষা ইংরেজি শেখাতে হবে, এমন হাস্যকর দাবি কেউ করবে না৷ কিন্তু ভলান্টিয়ারদের তো অন্তত কাজ চালানোর মতো ইংরেজি জানতে হবে৷ বিশ্বকাপের আয়োজনের এ জায়গায় ডাঁহা ফেল করেছে স্বাগতিকরা৷ নিজেদের উঠোনে বিশ্বকে স্বাগত জানিয়ে ভাষার সেতুটাই যে তৈরি করতে পারলো না রাশিয়া!
আর সাধারণ মানুষের কথা কী আর বলার আছে! সাহায্য করার জন্য এক পায়ে খাড়া সবাই৷ কিন্তু ভাষাটা বুঝতে হবে তো! না বোঝার কারণে উল্টাপাল্টা দিকনির্দেশনা আর পরামর্শের শিকার হচ্ছি প্রতিনিয়ত৷ আর এরই মধ্যে বুঝে গেছি, বিশ্বকাপের শেষ পর্যন্ত এ ভাগ্য মেনে নিয়েই এগুতে হবে৷
বাংলাদেশে বিশ্বকাপ উন্মাদনা শুরু হয়ে যায় বিশ্বকাপের মাসখানেক আগে থেকেই৷ দেশ ছাড়ার আগেই তো দেখে এসেছি, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকদের রোমাঞ্চ৷ বাংলার আকাশ দখল করে রেখেছিল এই দুই দেশের পতাকা৷ ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মারে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্সের পতাকাও৷ আমাদের ওই ফুটবলপাগল জনতা রাশিয়া বিশ্বকাপে এলে ভিমড়ি খেতেন নিশ্চিতভাবে৷ এখন পর্যন্ত কোনো রাড়ি, অফিস, স্থাপনার ছাদে একটি পতাকাও উড়তে দেখিনি৷ তা না হয় উড়লো না, তাই বলে বিশ্বকাপের প্রচারণাও কি থাকবে না সেভাবে! মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গের স্টেডিয়াম এবং ফ্যান জোনের বাইরে বোঝার উপায় নেই যে, এখানে বিশ্বকাপ হচ্ছে৷ মস্কো থেকে ব্রোনিৎসি গিয়েছিলাম আর্জেন্টিনার বেসক্যাম্প ঘুরে আসার জন্য৷ ওই ছোট্ট শহরেও তো লিওনেল মেসির মতো মহাতারকার উপস্থিতির প্রমাণ নেই সেভাবে৷ সে কারণে আবার ওই জনে জনে জিজ্ঞাসা; আবার ভাষার দুর্লঙ্ঘ্য দুস্তর পারাবার; আবার দিক ভুলে, এদিক-ওদিক ঘুরে তবেই প্রার্থিত জায়গায় পৌঁছানো৷
বিশ্বকাপ: শিল্পীর তুলিতে ইতিহাস
ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮-র চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে জার্মানি৷ বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, চূড়ান্ত দলে নেই লেরয় জানে৷ তবে বিশ্বকাপে এটাই প্রথম বিস্ময় নয়৷ কার্টুনিস্ট জার্মান আচ্যেল ক্যানভাসে তুলে ধরেছেন আরো কিছু বিস্ময়ের কথা৷
ছবি: Aczel / Edel Books
১৯৩০: কোনো এক সময়...
প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে, উরুগুয়েতে৷ সেসময় মূলত উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার দলগুলো বিশ্বকাপে অংশ নেয়৷ ইউরোপ থেকে স্টিমশিপে চেপে সেই বিশ্বকাপে অংশ নিতে যায় চারটি দল৷ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে স্বাগতিক উরুগুয়ে৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৫৪: বার্ন-এ চমক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় সুইজারল্যান্ডে৷ সেবার প্রস্তুতি পর্বে হাঙ্গেরির কাছে ৮-৩ গোলে হারে জার্মানি৷ কিন্তু ফাইনালে ইতিহাস রচনা করে জার্মানরা৷ হাঙ্গেরিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে দেশটি৷ কার্টুনে জার্মান দলের ফ্রিৎস ভাল্টার (বামে) এবং প্রশিক্ষক সেপ হ্যার্বারগারকে উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের কাঁধের উপর দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৬৬: প্রথম এবং একমাত্র
যদিও ফুটবলের জন্মস্থান মনে করা হয় ইংল্যান্ডকে, তা সত্ত্বেও দেশটি বিশ্বকাপ জিতেছে মাত্র একবার - ১৯৬৬ সালে৷ সেবার নিজেদের মাটিতে জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারায় ইংলিশরা৷ খেলার ১০১ মিনিটে, অর্থাৎ অতিরিক্ত সময়ে করা এক গোল, যেটি ‘ওয়েম্বলি গোল’ হিসেবে পরিচিত, নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়ে গেছে৷ কার্টুনে ববি মুরকে বিশ্বকাপ হাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৭০: পেলের জন্য ‘থ্রি চিয়ার্স’
সেবছর তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে ব্রাজিল৷ বিংশ শতাব্দির অন্যতম ফুটবল তারকা পেলের নেতৃত্বে ফাইনালে ৪-১ গোলে ইটালিকে হারায় ব্রাজিল৷ রঙিন টিভিতে প্রচার হওয়া প্রথম বিশ্বকাপ সেটি৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৭৪: বেকেনবাওয়ার বনাম ক্রুইফ
জার্মানিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপে বেশ কিছু নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিল৷ জার্মানির তখনকার সেরা খেলোয়াড় ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ারের সঙ্গে তাঁর মতোই জনপ্রিয় নেদারল্যান্ডসের ইয়োহান ক্রুইফের লড়াই দেখতে উন্মুখ ছিলেন অনেকে৷ সেবার পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে খেলেছিল পূর্ব জার্মানি৷ ফাইনালে ২-১ গোলে নেদারল্যান্ডসকে হারায় জার্মানি৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৮৬: ঈশ্বরের হাত
সেবার ফুটবল তারকা দিয়েগো মারাদোনার দিকে নজর ছিল সবার৷ তাঁর কল্যাণে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিতেছে বটে, কিন্তু তাঁর করা একটি গোল নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে৷ ‘ঈশ্বরের হাত’ খ্যাত সেই গোলটি মারাদোনা হাত দিয়ে করেছিলেন বলেই দাবি অনেকের৷ তবে সেবার পাঁচ ইংলিশ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে মারাদোনার করা আরেক গোল ‘শতাব্দির সেরা গোল’-এর স্বীকৃতি পেয়েছে৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৯০: থুথু হামলা
ইটালিতে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে জার্মানি৷ সেবার এক ম্যাচে জার্মানির রুডি ভ্যলারের গায়ে থুথু দিয়েছিলেন ডাচ খেলোয়াড় ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড৷ সেই ঘটনার পর দুই খেলোয়াড় ধস্তাধস্তি শুরু করলে দু’জনকেই মাঠ থেকে বের করে দেয়া হয়৷
ছবি: Aczel/Edel Books
২০০৬: ক্ষিপ্ত জিদান
সেবারের বিশ্বকাপ নিয়ে এখনো আলোচনা হয় জিনেদিন জিদানের এক আচরণের কারণে৷ জার্মানিতে অনুষ্ঠিত আসরের ফাইনালে পেনাল্টি শ্যুটআউটে ফ্রান্সকে হারায় ইটালি৷ তবে ফাইনালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল যখন ইটালির মার্কো মাতেরাৎসিকে মাথা দিয়ে ঢুস দিয়ে ফেলে দেন জিদান৷ সেই ঘটনায় জিদানের উজ্জ্বল ফুটবল কেরিয়ারের সমাপ্তি ঘটে৷
ছবি: Aczel/Edel Books
২০১০: টিকি-টাকার জয়
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতিপক্ষকে কাবু করতে টিকি-টাকা স্টাইল ব্যবহার করে স্পেন৷ এই স্টাইলের মাধ্যমে নিজের দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে পাস দিয়ে প্রতিপক্ষকে বিরক্ত ও বিভ্রান্ত করেছে স্প্যানিশরা৷ ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ জেতে তারা৷
ছবি: Aczel/Edel Books
২০১৪: ড্রিবলিংয়ের রাজা
ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপের তারকা ছিলেন লিওনেল মেসি৷ তাঁর কল্যাণে আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছিল বটে, তবে ফাইনালে হেরেছে জার্মানির কাছে৷
ছবি: Aczel / Edel Books
২০১৪: চার-তারকা দল
রিও ডি জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনালে হাজির ছিল ৭৫,০০০ দর্শক৷ ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গোল করে আর্জেন্টিনাকে হারায় জার্মানি৷ সেটা ছিল দক্ষিণ অ্যামেরিকার মাটিতে ইউরোপের কোনো দলের প্রথম বিশ্বকাপ জয়৷
ছবি: Aczel / Edel Books
২০১৮: বিতর্কিত কাপ
চলতি বছর বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ রাশিয়া৷ দেশটিতে বিশ্বকাপ আয়োজন দুর্নীতিতে জর্জরিত ফিফা’র এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত৷ ইতোমধ্যে ফ্যান-আইডির মাধ্যমে অগুনতি ফুটবল সমর্থকের গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷ এমনকি জার্মানির সরকারি কর্মকর্তাদের যারা খেলা দেখতে যাচ্ছেন, তাঁদের স্মার্টফোন থেকে যাতে রাশিয়া তথ্য চুরি করতে না পারে, সেজন্য সেসব ফোন দেশে রেখে যেতে বলেছে জার্মানি৷
ছবি: Aczel / Edel Books
ফুটবল ইতিহাস নিয়ে কমিক
বিশ্বকাপ ১৯৩০-২০১৮ শীর্ষক কমিক বইতে বিশ্বকাপের বিভিন্ন স্মরণীয় ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে৷ কমিক বইটির প্রচ্ছদে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, মানুয়েল নয়্যার, লিওনেল মেসি এবং নেইমারসহ কয়েকজন তারকাকে শিল্পীর তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Aczel / Edel Books
যার হাতে তুলি
কমিক বইটির জন্য কার্টুন এঁকেছেন আর্জেন্টিনার শিল্পী জার্মান আচ্যেল৷ তিনি কেরিয়ার শুরু হয়েছিল বুয়েনেস আইরেসে৷ সেখানে এল গ্রাফিকো স্পোর্টস ম্যাগাজিনে কাজ করতেন৷ পরবর্তীতে ২৬ বছর বয়সি এই কার্টুনিস্ট জার্মানিতে চলে আসেন এবং বর্তমানে মিউনিখে বসবাস করছেন ও ব্রিটিশ সকার ম্যাগাজিন ফোরফোরটু’তে কাজ করছেন৷
ছবি: Aczel/Edel Books
14 ছবি1 | 14
২০১৮ বিশ্বকাপের আরেকটি বড় সমস্যা দূরত্ব৷ পৃথিবীর ছয় ভাগের একভাগ স্থল নিয়ে এ দেশ রাশিয়া৷ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১১ শহরে হচ্ছে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো৷ এ এগারোর মধ্যে সবচেয়ে পশ্চিমের শহর কালিনিনগ্রাদ থেকে সবচেয়ে পুবের শহর ইয়েকাতেরিনবার্গের দূরত্ব মস্কো থেকে লন্ডনের দূরত্বের চেয়েও বেশি৷ ট্রেনে যেতে সময় লাগে ৩৬ ঘন্টা৷ সবগুলো শহরে আবার হাই স্পিড ট্রেন চলে না৷ আভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকেট পাওয়াও কঠিন৷ এক ভেনু্ থেকে আরেক ভেনু্তে যাওয়াটা তাই সমর্থকদের জন্য চাট্টিখানি কথা নয়৷ ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে যে সমস্যা ছিল না একেবারেই৷
সারা পৃথিবী থেকে আসা ফুটবলসমর্থকদের জন্য রাশিয়ার আবহাওয়াও বড় সমস্যা৷ বড্ড গোলমেলে তা৷ এই রোদ, এই বৃষ্টি৷ এই গরম, এই কনকনে শীত৷ রাশিয়ান গ্রীষ্মে এদেশের অধিবাসীরা রয়েছে বেশ আয়েশে৷ ফুটবলের অতিথিদের বেলায় তা বলা যাবে না কোনোমতেই৷
বর্ণবাদের সমস্যার সঙ্গে রাশিয়ার স্টেডিয়ামগুলোর লড়াইয়ের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ৷ প্রতিপক্ষের কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়দের ব্যঙ্গ করা, তাঁদের উদ্দেশ্যে বাঁদরের মতো ডাকা, কলা ছুঁড়ে দেবার মতো ঘটনা অগুনতি৷ ২০১৩ সালে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এখানে খেলতে এসে এমন ঘটনার শিকার হয়ে ইয়া ইয়া তোরে বলেছিলেন, ‘‘এমনটা চলতে থাকলে কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলাররা এ বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারে৷'' জল অতোদূর গড়ায়নি৷ আর এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে বর্ণবাদ নিয়ে বড়সড় সোরগোলও হয়নি৷ টেররিজম-হুলিগানিজম নিয়েও ঝামেলা হয়নি খুব৷ কিন্তু টুর্নামেন্টের মোটে প্রথম সপ্তাহটি তো গেল৷ সামনের তিন সপ্তাহে তেমন কিছু যে হবে না, সে গ্যারান্টি দেবে কে!আশঙ্কা তুলে রেখে আশায় না হয় বুক বাঁধি৷ কিন্তু ভাষা নিয়ে আশাবাদী হতে পারছি না মোটেও৷ স্টেডিয়ামে, মেট্রোয়, উবারে, রেস্টুরেন্টে, মার্কেটে, সুপারশপে সামনের তিন সপ্তাহেও রুশ ভাষার সঙ্গে ইংরেজির দড়ি টানাটানি চলবে৷ নতুন ভেনু্তে গিয়ে অ্যাক্রিডিটেশন সেন্টার খুঁজে পেতে আবার দু'দিন লাগলে এবার আর অবাক হবো না!
রাশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর কয়েকটি গন্তব্যস্থল
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া৷ ইউরোপ, এশিয়া– দুই মহাদেশ জুড়েই আছে দেশটি৷ ফলে বৈচিত্র্যের শেষ নেই৷ আছে সমৃদ্ধ ইতিহাসও৷
ছবি: picture-alliance/ZB/C. Welz
মস্কো ক্রেমলিন
ক্রেমলিন শব্দের অর্থ দুর্গ৷ রাশিয়ার অনেক শহরে এর দেখা পাওয়া যায়৷ তবে সবচেয়ে বিখ্যাত অবশ্যই রাজধানী মস্কোর ক্রেমলিন৷ অতীতে গ্র্যান্ড ডিউক, পরে সোভিয়েত সরকার আর এখন পুটিন সেখানে থেকে দেশ শাসন করছেন৷ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ক্রেমলিনের নাম আছে৷ আছে রেড স্কয়্যারের নামও৷
ছবি: Fotolia/irinabal18
শহর মস্কো
মস্কোতে গেলে একদিকে যেমন অভিজাত আর উঁচু, বিলাসবহুল আবাসিক ভবনের দেখা পাওয়া যাবে, তেমনি দারিদ্র্যও চোখে পড়বে৷ কমিউনিজম আর ক্যাপিটালিজম, ধনি আর গরিব, উঁচু ভবন আর সোভিয়েত আমলের মনুমেন্ট৷ এসব কারণেই মস্কো ঘুরতে যাওয়া বেশ উত্তেজনার একটি বিষয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Sputnik/V. Astapkovich
সেন্ট পিটার্সবার্গ
প্রায় দুই শতাব্দী সময়কাল ধরে রাশিয়ার মতো বিশাল দেশ পরিচালিত হয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে৷ নেভা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর পর্যটকদের জন্য এক বড় আকর্ষণ৷ বিশ্বখ্যাত মিউজিয়াম অ্যার্মিটাজ, রাশিয়ার ভার্সাই বলে খ্যাত পিটার্সহফ (ছবি), রুশ শাসকদের সরকারি বাসভবন উইন্টার প্যালেস ইত্যাদি আছে সেখানে৷
ছবি: DW/S. Savchenko
গোল্ডেন রিং
মস্কোর উত্তর-পূর্বের আটটি শহর মিলে এই রিং গঠিত৷ রাশিয়ার ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এসব শহর৷ আজও সেখানে গেলে অপূর্ব সব গির্জার দেখা পাওয়া যায়৷ ছবিতে সার্গিয়েভ পোসাদ শহরের ট্রিনিটি গির্জা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/TASS/S. Bobylev
কালিনিনগ্রাদ
এটি রাশিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমের শহর৷ মূল ভূখন্ড থেকে একেবারে পৃথক এই শহর পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মাঝে অবস্থিত৷ ১৯৪৫ সালের আগে নাম ছিল ক্যোনিগসব্যার্গ৷ শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত মানুষ জার্মান দার্শনিক এমানুয়েল কান্ট৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শহরটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ ছবিতে পুনর্নির্মাণ করা চতুর্দশ শতকের ক্যোনিগসব্যার্গ ক্যাথিড্রাল দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Brandt
ক্যামচাতকা
রাশিয়ার সবচেয়ে পূর্বে ক্যামচাতকা উপত্যকা অবস্থিত৷ একসময় সেখানে যাওয়ার অনুমতি ছিল না৷ ক্যামচাতকায় আছে প্রায় ৩০০ আগ্নেয়গিরি, যার অনেকগুলোই সক্রিয়৷ আছে প্রায় ১০ হাজার বাদামি ভল্লুক, যাদের প্রিয় খাবার স্যামন মাছ৷
ছবি: picture-alliance/Udo Bernhart
ভল্গা নদী
প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘ৷ ভল্গা নিয়ে অনেক গান আর কবিতা লিখা হয়েছে৷ পর্যটকদের জন্য ভল্গায় ক্রুজের ব্যবস্থা আছে৷ সেখান থেকে নদীর পাড়ের ছোট, বড় শহরগুলো দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Metelitsa
ভল্গোগ্রাদ
পূর্ব নাম স্ট্যালিনগ্রাদ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অন্যতম বড় যুদ্ধটি হয়েছিল সেখানে৷ মারা গিয়েছিল প্রায় সাত লক্ষ মানুষ৷ তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যেই ৮০ মিটার উঁচু ‘মাদার হোম’ স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশ্বযুদ্ধে একেবারে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরটি পরে পুনরায় সোভিয়েত স্টাইলে গড়ে তোলা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলওয়ে
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলপথ৷ ৯,২৮৮ কিলোমিটার! মস্কো থেকে ভ্লাদিভস্তক যেতে সময় লাগে সাত থেকে নয় দিন৷ সাধারণ ট্রেন ছাড়াও আছে বিশেষ ট্রেন৷ বিশাল রাশিয়ার বেশিরভাগ অংশের বৈশিষ্ট্য বুঝতে অনেক পর্যটক এই দীর্ঘ সময়ের রেলযাত্রা বেছে নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Maxim
সাইবেরিয়া
রাশিয়ার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকা জুড়ে আছে সাইবেরিয়া৷ যেখানে ইউরোপের শেষ আর এশিয়ার শুরু, অর্থাৎ উরাল পর্বতমালা থেকে সাইবেরিয়ার শুরু৷ তুন্দ্রা আর তৈগা বনাঞ্চলের দেখা পাওয়া যাবে সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans/A. Zvoznikov
বৈকাল হ্রদ
বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও গভীর স্বাদু পানির হ্রদ এটি৷ ৬৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৪৮ কিলোমিটার প্রশস্ত আর ১,৬৩৭ মিটার গভীর৷ সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এটি অবস্থিত৷ হাইকিংয়ের জন্য বৈকাল হ্রদ বিখ্যাত৷ কিন্তু সম্ভবত সাঁতারের জন্য নয়, কারণ, সেখানে পানির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মাত্র ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস!
ছবি: picture-alliance/TASS/V. Smirnov
সোচি
ব্ল্যাক সি’র পাড়ে অবস্থিত সোচিকে রাশিয়ার গ্রীষ্মকালীন রাজধানী বলা যায়৷ কারণ, গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সেখানকার পানির তাপমাত্রা থাকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷