শুধু গাছ কাটার কারণে নয়, অগ্নিকাণ্ড ও পোকার উপদ্রবেও বিশ্বের অনেক প্রান্তে বনজঙ্গল লোপ পাচ্ছে৷ রাশিয়ার এক নারী সেই প্রবণতা রুখতে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করছেন৷ মানুষকে সচেতন করারও চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
রুশ জলবায়ু তহবিলের প্রেসিডেন্ট মারিয়ানা মুন্টিয়ানু একেবারে তৃণমূল স্তরে বৃক্ষরোপণ থেকে শুরু করে প্রচার অভিযানের মাধ্যমে রাশিয়ার বনাঞ্চল সংরক্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ পাইন গাছের চারা লাগানোর কর্মসূচির অংশগ্রহণকারীদের তিনি হাতেনাতে কৌশল শেখান৷ মারিয়ানা বলেন, ‘‘কাজটা খুব সহজ৷ চারাগাছ গর্তে বসাতে হবে৷ তার উপর মাটি ফেলে দেখতে হবে, সেটি ভালোভাবে বসেছে কিনা৷ সবশেষে টেনে দেখতে হবে, উপড়ে যাবে কিনা৷ ব্যস, খুব ভালো৷''
এই কর্মসূচির আওতায় মস্কো শহরের কাছে এক দিনে মাটিতে প্রায় ৮,০০০ চারা লাগানো হয়েছে৷ অদূর ভবিষ্যতেই সেখানে সুস্থ ও শক্তিশালী জঙ্গল সৃষ্টি হবে৷ সেই জঙ্গলের সবরকম বিপর্যয় প্রতিরোধ করার মতো শক্তি থাকবে৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক স্বেচ্ছাসেবী মারিয়ানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন৷ তিনি প্রায়ই মানুষকে এমন বৃক্ষরোপণের কাজে আমন্ত্রণ জানান৷
কারণ রাশিয়ায় অরণ্যের অবস্থা ভালো নয়৷ ঘনঘন অগ্নিকাণ্ডের ফলে বিশাল এলাকার বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে৷ বার্ক বিটল পোকার উপদ্রবেও গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে৷ বিশ্বের অন্য কোনো দেশে রাশিয়ার মতো এত বেশি জঙ্গল নেই৷ দেশের প্রায় অর্ধেকই বনাঞ্চল৷ মারিয়ানা মুন্টিয়ানু বলেন, ‘‘২০১০ সাল থেকে আমি এই কাজ করছি৷ সে সময়ে গোটা দেশে বড় আকারের অগ্নিকাণ্ড দেখা যেতো৷ একটি ছবিতে দেখেছিলাম, বিশাল গাছগুলি কীভাবে বাতাসের ধাক্কায় মাঠের উপর দিয়ে সরে গেল৷ দেশলাইকাঠির মতো গাছ ভেঙে গেল৷''
সাত বছর আগে মারিয়ানা মস্কোয় এসে নিজস্ব পরিবেশ সংগঠন গড়ে তোলেন৷ তিনি নিজে অবশ্য বড় শহরের জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন নি৷ বরং শৈশবে গ্রামের অভিজ্ঞতা তাঁর উপর বড় প্রভাব রেখেছে৷ মারিয়ানা বলেন, ‘‘আমি প্রকৃতি, বনজঙ্গল বড় ভালোবাসি৷ শিশু বয়সে গ্রামে দাদির বাড়িতে সবসময়ে গরমের ছুটি কাটিয়েছি৷ জঙ্গলের ধারেই দাদির বাড়ি ছিল৷ সপ্তাহে বেশ কয়েকবার আমরা বেরি ও মাশরুম সংগ্রহ করতাম৷''
৩১ বছর বয়সি মারিয়ানা মস্কোয় নিজের বাসায় বিশ্রাম নেবার সময়েও নিজের লক্ষ্যের কথা ভাবেন৷ বেশ কিছুকাল ধরে শুধু বৃক্ষরোপণের মধ্যে তাঁর কাজ সীমাবদ্ধ নেই৷ আরও মানুষের কাছে পৌঁছতে তিনি রাশিয়ার অন্যান্য পরিবেশ অ্যাকটিভিস্টদের সঙ্গে নিজস্ব এক পডকাস্ট পরিষেবা চালান৷
তিনি স্মার্টফোনের জন্য ‘প্লান্ট দ্য ফরেস্ট' নামের এক গেমও তৈরি করেছেন৷ এভাবে বনজঙ্গল সম্পর্কে উৎসাহ জাগাতে চান তিনি৷ বৃক্ষরোপণের জন্য চাঁদা তোলাও তাঁর লক্ষ্য৷ সেই গেম সম্পর্কে মারিয়ানা বলেন, ‘‘গেমারকে পয়েন্ট সংগ্রহ করতে হয়৷ সেই পয়েন্ট দিয়ে সে একটি জঙ্গল গড়ে তুলতে পারে৷ বনজঙ্গল সম্পর্কে উদাসীন না থেকে বনায়নের কাজে সহায়তা করতে ইউজারদের উদ্বুদ্ধ করাই হলো লক্ষ্য৷''
নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মারিয়ানা গত বছর ‘ইয়ং চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ' নামের জাতিসংঘের পরিবেশ পুরস্কার পেয়েছেন৷
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাহাড়ি বনাঞ্চল
হবিগঞ্জে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাহাড়ি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য৷ সুন্দরবনের পরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনভূমিও এটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
শুরুর কথা
প্রায় ১,৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এই বনভূমি বিস্তার লাভ করতে শুরু করে ১৯৪০ সালের দিকে৷ তবে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৮২ সালে৷ পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বনটি সম্প্রসারণ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাহাড়-টিলার সমন্বয়
সিলেট বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের চারটি বিটের (কালেঙ্গা, রেমা, ছনবাড়ী আর রশিদপুর) মধ্যে রেমা, কালেঙ্গা আর ছনবাড়ীর বিস্তীর্ণ জঙ্গল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গঠিত৷ বেশ কয়েকটি পাহাড়-টিলার সমন্বয়ে গঠিত এ বনাঞ্চল৷ এখানকার পাহাড়গুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৭ মিটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিরল প্রজাতির কাঠবিড়ালি
দেখছেন মালায়ন বড় কাঠবিড়ালিকে৷ রামকোটা বা বড় কাঠবিড়ালি নামেও এটি পরিচিত৷ পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালির মধ্যে বিরল প্রজাতির এই কাঠবিড়ালির একমাত্র বসবাস এই বনেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুখপোড়া হনুমান
এদের নাম ক্যাপড লিফ মাঙ্কি বা মুখপোড়া হনুমান৷ এছাড়াও ‘ফেরে’স লিফ মাঙ্কি’ বা চশমা হনুমান আর বিরল উল্লুকও আছে এই অভয়ারণ্যে৷
ছবি: DW/M. Mamun
আছে কুলু বানর
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ‘নর্দান পিগ টেইলড ম্যাকেক’ বা কুলু বানরও দেখতে পাওয়া যায়৷ এছাড়াও আছে বিরল প্রজাতির স্লো লরিজ বা লজ্জাবতী বানর৷
ছবি: DW/M. Mamun
পর্যবেক্ষণ টাওয়ার
অভয়ারণ্যের ভেতরে একটি টিলার উপরে আছে ছয়তলা পর্যবেক্ষণ বুরুজ৷ এই টাওয়ারের উপরে উঠলে বনের বিস্তীর্ণ সীমানা খালি চোখে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
জলাশয়
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের ভেতরে আছে বেশ কিছু জলাশয়৷ শুকনো মৌসুমে বনের ভেতরের পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে গেলেও এসব জলাশয়ের জল বন্যপ্রাণীদের তেষ্টা মেটায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
গাছপালা সমৃদ্ধ
নানান গাছপালায় সমৃদ্ধ রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য৷ ৬৩৮ প্রজাতির বিভিন্ন রকম গাছপালা আর লতাগুল্ম পাওয়া যায় সেখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
তিনটি ট্রেইল
রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমের একটি ট্রেইলে বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী৷ এরকম তিনটি ট্রেইল ঘুরে প্রাণ-প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতিপ্রেমীরা৷ আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার তিনটি ট্রেইলই ছবির মতো সুন্দর আর সাজানো৷
ছবি: DW/M. Mamun
দামি প্রাণি
নাম ‘সাউথ এশিয়ান জায়ান্ট হাউস গেকো’ বা তক্ষক৷ গিরগিটি প্রজাতির ছোট্ট এই প্রাণীটি দেশি চিকিৎসায় বহুল ব্যবহার হয় বলে পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে এই গিরগিটিটি খুব চড়ামূল্যে বিক্রি ও পাচার হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাস
কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মানুষের বাস আছে রেমা-কালেঙ্গা বনে৷ ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি হলেও সাঁওতাল ও উড়ং জণগোষ্ঠীর লোকজনও আছেন সেখানে৷
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ‘গ্রেটার র্যাকেট টেইলড দ্রোঙ্গো’ বা বড় ভিমরাজ৷ এই অভয়ারণ্যে আছে প্রায় ১৬৫ প্রজাতির নানান পাখি৷
ছবি: DW/M. Mamun
কেমন দেখতে?
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ‘ব্ল্যাক ক্রেস্টেড বুলবুল’ বা কালো ঝুটি বুলবুলি পাখি৷ এই অভয়ারণ্যের আরো উল্লেখযোগ্য পাখি হলো ভিমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙ্গা, ঈগল, চিল ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
থাকার ব্যবস্থা
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের পাশেই আছে নিসর্গ তরফ হিল রিসোর্ট৷ সেখানে পর্যটকদের জন্য কম খরচে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে৷ এছাড়া বনের ভেতরে বন বিশ্রামাগারও আছে৷ তবে সেখানে অবস্থান করতে হলে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি
রেমা-কালেঙ্গা বনের ভেতরে আছে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ নায়েক আব্দুল মান্নান বীর উত্তমের সমাধি৷ ৩ নং সেক্টরের এই যোদ্ধা ১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে এখানেই শহিদ হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন
শহিদ নায়েক আব্দুল মান্নান বীর উত্তমের সমাধির পাশেই বিশাল সেগুন গাছটির শরীরজুড়ে এখনো দেখা মেলে হানাদারদের সেদিনের গুলির চিহ্ন৷