রাশিয়ার এঙ্গেলস শহরে সামরিক বিমানঘাঁটির তেলের ডিপোয় হামলা ইউক্রেনের। আগুন নেভাতে গিয়ে মৃত দুই।
রাশিয়ায় বিমান বাহিনীর তেলের ডিপোয় ইউক্রেনের হামলার পর আগুন নেভাতে গিয়ে দুই জনের মৃত্যু হয়। ছবি: Governor of the Saratov region Roman Busargin telegram channel/AP/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
আবার রাশিয়ার ভিতরে ঢুকে হামলা করলো ইউক্রেন। বুধবার রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই পক্ষই একে অপরের বিদ্যুৎ ও সামরিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত জায়গার উপর হামলা করেছে। বুধবার দিনের বেলায় রাশিয়ার মিসাইলের আঘাতে ইউক্রেনের ঝাপোরিজ্ঝিয়াতে ১৩ জন মারা গেছেন।
রাশিয়ার তেলের ডিপোতে কিয়েভের হামলা নিয়ে ইউক্রেনের সেনার তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তারা এঙ্গেলসে রাশিয়ার তেলের ডিপোয় আঘাত হানতে পেরেছে। তেলের ডিপোটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফলে রাশিয়ার বিমান বাহিনী বিপাকে পড়বে, তারা আর ওই জায়গা থেকে আগের মতো ইউক্রেনের শহরে ও আবাসিক এলাকায় হামলা করতে পারবে না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পরামর্শদাতা ওলেকজান্দার কামিশিন বলেছেন, ইউক্রেনে তৈরি দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
বাসিন্দারা বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন
মস্কো পরে এই আক্রমণের কথা স্বীকার করে নেয়। তারা দাবি করেছে, সারারাত ধরে তারা ইউক্রেনের ৩২টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এঙ্গলসে হামলার পর বড় ধরনের আগুন লাগে।
শহরের বাসিন্দারা সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, তারা প্রচুর বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছেন।
আঞ্চলিক গভর্নর রোমান বুসারগিন সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট কর্মী ও ব্যবস্থা আছে।
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
ছবি: Anatoliy Zhdanov/REUTERS
9 ছবি1 | 9
বুসারগিন জানিয়েছেন, দুইজন দমকলকর্মী আগুন নেভাতে গিয়ে মারা গেছেন। ইউক্রেনের ড্রোন হামলার ফলে এই আগুন লাগে। তিনি শহরে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা রাশিয়ার ৬৩টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। খেরসনে ড্রোন হামলায় দুইজন মারা গেছেন এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত ১৩
বুধবার ইউক্রেনের দক্ষিণ ঝাপোরিজ্ঝিয়াতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৩ জন বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করেছেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে বেসামরিক মানুষ রাস্তায় পড়ে আছেন। তাদের চারপাশে ধ্বংসস্তূপ।
এই আক্রমণের কয়েক মিনিট আগেই আঞ্চলিক গভর্নর ইভান ফেডোরভ মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করছে।