1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাশিয়ায় বিরোধীরা যৌথ পন্থা খুঁজছে

উটে শেফার/এসি২৮ এপ্রিল ২০১৩

রুশ সরকার যেন-তেন-প্রকারেণ দেশের সুশীল সমাজকে দুর্বল করতে বদ্ধপরিকর৷ অপরদিকে বিরোধীরা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত৷ ভ্লাদিমির পুটিনের কোনো বাস্তবিক বিকল্প আপাতত চোখে পড়ছে না৷

ছবি: Kirill Kudryavtsev/AFP/GettyImages

ক্ষমতার লড়াই? না ক্ষমতা হস্তগত, কুক্ষিগত করার প্রতিযোগিতা? রাশিয়া নামক রাষ্ট্র্রে ক্ষমতা এখন কার হাতে আছে, থাকবে, কিংবা যাবে? ‘সিলোভিকি' নামধারী ক্ষমতাশীলদের হাতে – যার অর্থ সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ? নাকি বিরোধীপক্ষের এখনও কোনো আশা আছে? দু'পক্ষের অসম লড়াইতে একদিকে পুটিন রাষ্ট্রের সুসংবদ্ধ, সুসংগঠিত শক্তিরা; অন্যদিকে একটি বহুধাবিভক্ত প্রতিবাদ আন্দোলন৷ উন্নততর সমন্বয় ও সহযোগিতার কল্যাণে বিরোধীরা মাস ছয়েক আগে একটি সমন্বয় পরিষদ গঠন করেছে, যার ভূমিকা হবে একটি সামগ্রিক সংগঠন হিসেবে কাজ করা৷

সাহস আছে, কিন্তু ঐক্য নেই

একেবারে তরুণ যারা, তাদের কাম্য শুধু একটাই: একটি ‘‘পুটিনবিহীন'' ভবিষ্যৎ৷ ইসাবেলা মাগকোয়েভা প্রতিবাদ আন্দোলনে যোগদান করেন ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে, কিন্তু তার পর পরই ‘অকুপাই মস্কো' আন্দোলনের প্রবক্তা হয়ে দাঁড়ান৷ পেশায় জাপানি ভাষার শিক্ষক ইসাবেলা প্রতিবাদের গুরুত্ব সম্পর্কে কোনো দ্বিধা পোষণ করেন না: ‘‘আমরা বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছি!'' অথচ ইসাবেলার বাবা-মা রাজনীতি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামান না, যা ইসাবেলার কাছে দুর্বোধ্য, আবার দুর্বোধ্য নয়ও বটে: ‘‘আমাদের প্রজন্মে এমন অনেক তরুণ-তরুণী আছে, যারা সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে কিছু জানে না৷ আমরা আমাদের বাবা-মায়েদের প্রজন্মের মতো নই: আমরা ভয় পাই না৷ আমরা সব কিছু সম্পর্কে এতটা অবিশ্বাসী নই৷ আমাদের দেশে কোনো একটা, কিছু একটা পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি৷'' কাজেই তার নিজের প্রজন্মের ওপরই ইসাবেলার আস্থা৷

হাতে সাদা ব্যান্ড পুটিনবিরোধীদের চিহ্নছবি: picture-alliance/dpa

নির্ভয়, নিঃশঙ্ক হলেই তো শুধু চলবে না, প্রয়োজন একটি স্পষ্ট কর্মসূচির৷ এবং সেই কর্মসূচির উপাদানের কথা উঠলেই বিরোধ-প্রতিরোধের পরিবর্তে মাথা চাড়া দেয় কলহ-অন্তর্দ্বন্দ্ব৷ বিরোধীদের মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণবাদী থেকে শুরু করে খোলাবাজারের অর্থনীতির ভক্ত, এমনকি চরম দক্ষিণপন্থি জাতীয়তাবাদীরা পর্যন্ত আছে৷ জাতীয়তাবাদীদের নেতা দিমিত্রি জোমুশকিন তো রীতিমতো গর্ব করে বলে থাকেন যে, তিনি প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী বরিস নেমজোভ কিংবা বামপন্থি সের্গেই উদালচভের মতো বিশিষ্ট সরকারবিরোধীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেন৷

জার্মানির সবুজরা হল আদর্শ

সর্ষের মধ্যেই ভূত, অর্থাৎ সমন্বয় পরিষদেও ঘোঁট এবং কোঁদল৷ পরিষদের পরিবেশ সংরক্ষণবাদী সদস্য ইয়েভগেনিয়া চিরিকোভা পরিষেদের মুখপাত্র আলেক্সেই নাভালনির সমালোচনা করে বলেছেন, নাভালনি স্বয়ং বহুরূপীর মতো হামেহাল তাঁর অবস্থান পাল্টে থাকেন৷ অপরদিকে ইউরোপ ও জার্মানিতে সবুজদের ব্যাপারে ইয়েভগেনিয়ার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা-তে তিনি মুগ্ধ: ‘‘সে অভিজ্ঞতা আমাকে প্রেরণা দিয়েছে, কেননা রাশিয়ায় ঐ ধরনের কিছু নেই৷ যেমন জার্মানিতে আছে৷ সেখানে আমি দেখেছি, মানুষজন সত্যিই তাদের ধ্যানধারণার জন্য লড়ে, পথে নামে, আন্দোলন করে৷ নীচ থেকে, তৃণমূল থেকে, ওপরমহলের নির্দেশে নয়৷'' সেটাই তাঁকে রাশিয়াতেও অনুরূপ প্রচেষ্টা করার সাহস দিয়েছে৷

খিমকি বন আন্দোলন ছিল একটা মাইলস্টোনছবি: DW

দেশের অধিকাংশ মানুষের যে সাহস এখনো পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি৷ ইতিমধ্যে সেন্ট পিটার্সবার্গ ও মস্কো ছাড়া অন্যান্য শহরেও প্রতিবাদের ঢেউ পৌঁছেছে, কিন্তু মধ্যবিত্ত পর্যায়ভুক্ত মানুষেরা তা থেকে সন্তর্পণে গা বাঁচিয়ে চলেছেন৷ ৩৫ থেকে ৪০ বছর যাদের বয়স, তারা কাজ ও পরিবার নিয়েই ব্যস্ত৷ সময়ের অভাব, সরকারি খামখেয়ালিপনার ভীতি, সরকারি ‘‘ব্ল্যাক লিস্টে'' নাম ওঠার ভীতি, এ সব মিলিয়ে তারা প্রতিবাদ কি আন্দোলন থেকে দূরে থাকে৷ মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটা বড় অংশ তাদের কষ্টার্জিত অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কোনোরকমের ঝুঁকিতে ফেলতে রাজি নয়৷

সরকারের নিত্যনতুন প্যাঁচ, ফন্দিফিকির

আনাস্তাসিয়া মেশারিয়াকোভা তাঁর দুই সন্তানকে একাই প্রতিপালন করেন৷ মস্কোয় তাঁর দু-দু'টো রেস্তোরাঁ ভালোই চলেছে৷ তাঁর বক্তব্য: ‘‘আমি শুধু একটাই চাই: আমাদের দেশে যেন আইন সত্যিই মেনে চলা হয়৷ কোন আদর্শ? বামপন্থি, দক্ষিণপন্থি, উদারপন্থি না সামাজিক গণতন্ত্রি? সত্যি কথা বলতে কি, তা-তে আমার কিছু এসে যায় না৷'' নাগরিক অধিকার সীমিত করার ফলেও কি মধ্যবিত্ত শ্রেণি নির্বিকার থাকবে? ‘‘দশ বছর আগে আমরা রাজনীতি নিয়ে কথাই বলতাম না,'' বললেন আনাস্তাসিয়া৷ ‘‘আজ সেটা অন্য৷ আজ আমরা যখন বন্ধুবান্ধব মিলে গল্প করি, তখন রাজনীতি নিয়েও মাঝেমধ্যে কথা হয় বৈকি৷''

বিরোধীদের প্রায়ই সরকারের রোষানলে পড়তে হয়ছবি: Reuters

রুশ সরকার ও প্রশাসন আনাস্তাসিয়ার মতো মানুষদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে চায়৷ সেজন্য বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় ও কঠিন দণ্ড, জনসমাবেশের অধিকার সীমিত করা, এমনকি মস্কোর যে সব চত্বরে বিক্ষোভ হবার সম্ভাবনা আছে, সেখানে পৌর কর্তৃপক্ষের খোঁড়াখুঁড়ি, সব পন্থাই অবলম্বন করা হয়েছে৷ নতুন আইন করে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, যেখানে রুশ এনজিও'গুলির বিরুদ্ধে বিদেশের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা অতি সহজ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে যদি তারা কোনো বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে৷

পুটিন প্রশাসনের যাবতীয় চাপ ও নিপীড়ন সত্ত্বেও বিরোধীরা অন্তত একটি মূলমন্ত্রে অটল রয়েছে: তারা রাশিয়ার জন্য কোনো ‘‘বিশেষ বিকাশধারা'' চায় না, কোনো ‘‘বিশেষ পথ'' প্রয়োজনীয় বলে মনে করে না৷ রাশিয়া হল একটি ইউরোপীয় দেশ এবং পশ্চিমি সভ্যতার অঙ্গ, এই হলো তাদের বক্তব্য৷ তার অর্থ এই নয় যে, রাশিয়াকে কোনো বিশেষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কিংবা সামরিক জোটে যোগ দিতে হবে৷ কিন্তু আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও একটি সক্ষম রাষ্ট্রের দাবি তো তারা নিশ্চয় জানাতে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ