আগামী মে মাসে রাশিয়ায় যাওয়ার কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। যোগ দেওয়ার কথা জাতীয় প্যারেডে।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ায় জাতীয় কুচকাওয়াজে অংশ নেবে ভারত। উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করলেন রুশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি টোটারভ।
৯ মে রাশিয়ায় জাতীয় প্যারেড বা কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। রুশ সেনারা তাতে অংশ নেন। প্রদর্শিত হয় রুশ সামরিক শক্তি। সাধারণত প্রতি বছরই পৃথিবীর কোনও না কোনও দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে তাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে এই প্রথম তাতে অংশ নেবেন মোদী। টোটারভ একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ভারতীয় সেনাদের একটি প্রতিনিধি দলও ওই কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন। এ এক বিরল ঘটনা।
বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে এখন ভারতের সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক মধুর। ডনাল্ড ট্রাম্প এবং মোদীর সম্পর্ক বহুল আলোচিত। বস্তুত, অ্যামেরিকার সঙ্গে এই সম্পর্কের ফলও পাচ্ছেন মোদী। ভারতে তাঁর সরকার একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বিশ্ব, বিশেষত অ্যামেরিকা তা নিয়ে কার্যত কোনও মন্তব্য করছে না। বরং ভারত সরকারের পাশেই দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকার শত্রুতা পুরনো। মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রতি যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতেও অ্যামেরিকা এবং রাশিয়া ভিন্ন মেরুতে। তুরস্ক এবং সিরিয়ার বিষয়েও চিত্রটি একই রকম। জাতিসঙ্ঘে দু'দেশের লড়াই নতুন কিছু নয়। এমন পরিস্থিতিতে মোদী কি পুতিন এবং ট্রাম্প দু'জনের সঙ্গেই ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে চাইছেন?
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতি আগ্রহী কেন ভারত?
ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ‘এস-৪০০ মিশাইল ডিফেন্স সিস্টেম’ কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত৷ রুশ প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় পাঁচ দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Malgavko
মজবুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
গত সপ্তাহে ‘মিশাইল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’-এ স্বাক্ষর করার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এক যৌথ বিবৃতিতে নতুন দিল্লি এবং মস্কোর মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমশ আরো মজবুত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন৷ চলতি বছর মোদী এবং পুটিনের এই নিয়ে তৃতীয়বার সাক্ষাৎ হলো৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Y. Kadobnov
এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম আসলে কী?
রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০০ সার্ফেস-টু-এয়ার মিশাইল ডিফেন্স সিস্টেম মূলত ধেয়ে আসা ‘ব্যালেস্টিক মিশাইল’ প্রতিরোধ করে৷ এটাকে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আধুনিক এবং মোক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Malgavko
ভারতের আগ্রহ
মূলত চীন এবং পাকিস্তান থেকে কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের দিকে নিক্ষেপ করা হলে, তা যাতে প্রতিরোধ সম্ভব হয়, সেজন্য এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করতে চাচ্ছে ভারতের সামরিক বাহিনী৷ এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে ভারতের পক্ষে অনেক দূরে অবস্থান করা যুদ্ধবিমান, এমনকি রাডার সোনার সিস্টেম সনাক্ত করতে অক্ষম বিমানও ধ্বংস করে দিতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo
আরো চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায়
রাশিয়ার কাছ থেকে চারটি ‘ক্রিভেক-ক্লাস ফ্রিগেট’ কেনারও পরিকল্পনা করছে ভারত৷ এগুলোর মধ্যে দু’টি যুদ্ধজাহাজ গোয়ার শিপইয়ার্ডে জোড়া দেয়া হবে৷ অন্য দু’টো একেবারে তৈরি অবস্থায় রাশিয়া থেকে আনা হবে৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
মার্কিন সতর্কবার্তা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, যেসব দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা খাতের জন্য সমরাস্ত্র কিনবে, সেসব দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে৷ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় সিএএটিএসএ আইন গতবছর অনুমোদন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
মার্কিন সমরাস্ত্রও কেনে ভারত
শীতল যুদ্ধের সময় ভারতের সামরিক সমরাস্ত্রের আশি শতাংশই এসেছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে৷ তবে নব্বইয়ের দশক থেকে আরো কয়েকটি উৎস থেকে সমরাস্ত্র কিনতে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ গত দশ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পনের বিলিয়ন মূল্যমানের সমরাস্ত্র কিনেছে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
ভারত কি ছাড় পাবে?
রাশিয়ার কাছ থেকে ‘এস-৪০০ মিশাইল সিস্টেম’ কেনায় চীনের সামরিক বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ যদিও ভারত আশা করছে, মার্কিন মিত্র দেশ হিসেবে তাদের এ ধরনের নিষেধজ্ঞায় পড়তে হবে না, তবে ট্রাম্প প্রশাসন ছাড় দেয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Dufour
7 ছবি1 | 7
ঐতিহাসিক ভাবে সেই সোভিয়েত আমল থেকেই ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভাল। জওহরলাল নেহরু কিংবা ইন্দিরা গাঁন্ধীরা বরাবরই রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। কিন্তু মোদী কী ভাবে রাশিয়া এবং অ্যামেরিকা দু'জনের সঙ্গেই সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, মোদীর এই পদক্ষেপ ভারতীয় পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।