1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যক্ষ্মারোগ

১৯ মে ২০১২

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১ কোটি মানুষ যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়৷ মারা যায় প্রায় ৩০ লক্ষ৷ সাধারণত অল্পবয়সী ও শারীরিক দিক দিয়ে দুর্বল মানুষরাই এই অসুখে পড়ে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে তো বটেই, রাশিয়াতেও দেখা যাচ্ছে এ রোগের বিস্তৃতি৷

A doctor examines chest X-rays at a tuberculosis clinic in Gugulethu, Cape Town, South Africa, Friday, Nov. 9, 2007. South Africa reported 343,000 TB cases in 2006, of which an estimated 6,000 were multi-drug-resistant. The government says that there have been about 400 cases of XDR-TB (extremely-drug-resistant tuberculosis), but groups like Medecins Sans Frontieres say this is a big underestimate. (ddp images/AP Photo/Karin Schermbrucker)
ছবি: AP

এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত রাশিয়ার অপেক্ষাকৃত অনুন্নত পূর্বাঞ্চলে যক্ষ্মারোগের আধিক্যটা বেশি৷ জীবনযাত্রার মান ও চিকিত্সার সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে এই অঞ্চল রাশিয়ার অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে আছে৷ ভাগ্য ভাল থাকলে এখানকার অধিবাসীরা মস্কোর কেন্দ্রীয় টিবি ইন্সটিটিউটের কোনো এক ক্লিনিকে চিকিত্সা করাতে পারেন৷

যক্ষ্মার চিকিত্সায় অবহেলিত রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল

দেখা যাক এই রকমই একটি ক্লিনিকের দৃশ্য: ভবনটির সামনের দিকটা সাদা৷ প্রবেশ পথে চমত্কার চারটি পিলার৷ মস্কোর শহরতলীর এক বনাঞ্চলে অবস্থিত ক্লিনিকটি৷ যক্ষ্মায় আক্রান্ত ২৭ বছরের লারিসা এসেছেন এই ক্লিনিকে চিকিত্সা নিতে৷ শরীর দেখলে মনে হবে ১৩ বছরের এক কিশোরী, অন্যদিকে চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ৷

লারিসা জানান, ‘‘আমার মামা আমার মাকে ও আমাকে সংক্রামিত করেছেন৷ অসুখটি অনেক দিন তিনি গোপন করে রেখেছিলেন৷ কোথা থেকে তাঁর এই সংক্রমণ হয়েছিল, তা আমরা জানিনা৷ আমার মা দেড় বছর আগে মারা গেছেন৷ আমি ২০০৬ সাল থেকে ভুগছি৷''

লারিসা পশ্চিম সাইবেরিয়ার শহর টিউমেন থেকে এসেছেন৷ নিজের শহরে বেশ কটি থেরাপি নিয়েছেন এই তরুণী৷ ফুসফুসের একটি অপারেশনও হয়েছে৷ কিন্তু আরোগ্য লাভ না করায় বন্ধুদের সহায়তায় শেষ শক্তি নিয়ে মস্কোয় এসেছেন৷ মাস ছয়েক ধরে কেন্দ্রীয় টিবি ইন্সটিটিউটের এক ক্লিনিকের রোগী তিনি৷ শ্বাসপ্রশ্বাসে এখনও কষ্ট হলেও আগের চেয়ে ভাল আছেন লারিসা৷

লারিসার ভাষায়, ‘‘এখানকার নিয়ম কানুন বেশ কড়া, বিশেষ করে টিউমেনের ক্লিনিকের সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যায় এটা৷ আমাদের ক্লিনিক থেকে বের হতে দেয়া হয়না৷ ক্লিনিকের ভেতরে হাঁটাহাঁটি করার সময় মাস্ক পরতে হয় আমাদের৷ কোনো ব্যাতিক্রম করা যাবে না৷ সব ওষুধপত্রই ডাক্তার বা নার্সদের সামনে খেতে হয়৷ আমার রোগটি এখন ভালোর দিকে৷ টিউমেনে কিন্তু মারা যাওয়ার জন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল আমাকে৷ এতেই বোঝা যায়, চিকিত্সাটা সেখানে কীরকম৷''

যক্ষ্মার জীবাণুছবি: picture-alliance/dpa

বিশেষ করে নিম্নবিত্তের মানুষরাই যক্ষ্মাক্রান্ত হয়

রাশিয়ার বিশেষ করে উরাল পর্বতমালার পূর্বাঞ্চলে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা বেশি, চিকিত্সার মানও খারাপ৷ বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার তথ্য অনুযায়ী রাশিয়ায় ২০১০ সালে যক্ষ্মাক্রান্তের হার ছিল প্রতি এক লাখে ১০০ জন, জার্মানিতে সেই বছর এক লাখে মাত্র পাঁচ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়৷ এই রোগে মৃত্যুর হার জার্মানিতে ০.২৫ শতাংশ, রাশিয়ায় ১৮ শতাংশ৷

ক্লিনিকের মহামারি ও পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান ভিক্টর পুংগো এর কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘‘রাশিয়ার সামাজিক অবস্থা সব দিক দিয়ে আদর্শিক, এই কথা মোটেও বলা যাবে না৷ উন্নত দেশগুলির মত সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারলেই কেবল যক্ষ্মারোগের ক্ষেত্রে দুরবস্থার পরিবর্তন হবে৷ যক্ষ্মাক্রান্তদের তিন ভাগের দুই ভাগই নিম্নবিত্তের মানুষ৷ টিবির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য পেতে হলে জীবনযাত্রার মানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে ৮৫ শতাংশ, আর ১৫ শতাংশ চিকিত্সা ক্ষেত্রে৷ অবশ্য উচ্চবিত্তের মানুষরাও যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন না তা বলা যায় না, তবে তুলনামূলকভাবে কম৷''

এইচআইভি আক্রান্তদের ঝুঁকি বেশি

৯০ এর দশকে সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর চারিদিকে বিশৃঙ্খলা ও দারিদ্র্য মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়৷ যক্ষ্মায় আক্রান্তেরও সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি পায়৷ ইদানীং অবশ্য কিছুটা ইতিবাচক হাওয়া বইছে সেখানে৷ রুশ সরকার যক্ষ্মা মহামারির বিপদটা বুঝতে পেরে এ ক্ষেত্রে আগের চেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে৷ তবে একটি বিষয় অবস্থাকে জটিল করে তুলছে, আর তা হল এইচআইভি'তে সংক্রমণের উঁচু হার৷ এই ভাইরাসে আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে যায় বলে টিবিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়৷ এ ছাড়া রাশিয়ায় যক্ষ্মা রোগীদের অনেকে এমন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন, যে গুলিকে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক কাবু করতে পারছে না৷ সাধারণত এমনটি হয়ে থাকে, নিয়মিত ওষুধ না খেলে৷ তা সে অজ্ঞতা, অবহেলা ওষুধপত্র না পাওয়া, যে কারণেই হোক না কেন৷

মাইক্রোবায়োলজি গবেষণাগারের প্রধান লারিসা চেরনোউসোভা এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের খুঁজে বের করতে হয়, যক্ষ্মা রোগীদের .কোন কোন ওষুধ সাহায্য করতে পারে৷ এই কারণে আমরা এই গবেষণাগারটি পেয়েছি৷ আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে আমরা দ্রত যক্ষ্মার জীবাণু ও তার প্রতিরোধ শক্তি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারি৷ তারপর সঠিক ওষুধটি নির্ণয় করতে পারি৷''

গবেষণাগারটি মস্কোর যক্ষ্মা ইন্সটিটিউটের সেলারে অবস্থিত৷ রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে যক্ষারোগটি এখনও অবহেলিত৷ এই সমস্যাটি জার্মানি ও পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশেও এসে পড়তে পারে৷ যক্ষ্মার প্রকোপ এই সব দেশ থেকে প্রায় দূর হলেও রাশিয়ার সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ার ফলে এই রোগে সংক্রমণের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পাচ্ছে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ