রাশিয়ার একটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সরকার-বিরোধী সংবাদপত্রের সম্পাদক জানিয়েছেন, তিনি নিরাপত্তার জন্য তাঁর সাংবাদিকদের হাতে কম প্রাণঘাতী অস্ত্র তুলে দেবেন৷ সাংবাদিকরা সেগুলো ব্যবহারের প্রশিক্ষণও পাবেন৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি রাশিয়ায় ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর হামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘নভায়া গাজিয়েটা’ পত্রিকার সম্পাদক দিমিত্রি মুরাটভ৷
চলতি সপ্তাহের শুরুতে রাশিয়ার সরকার-বিরোধী এক বেতার ‘ইকো অফ মস্কো’র ৩২ বছর বয়সি উপস্থাপিকাকে ছুরি দিয়ে আহত করা হয়৷ রেডিওর কার্যালয়ে ঢুকে এই হামলা চালান ৪৮ বছর বয়সি এক ব্যক্তি৷ তবে তিনি আগে থেকে টাটইয়ানা ফেলগেনহাউয়ার নামের ঐ উপস্থাপিকাকে চিনতেন না, বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদের সময় হামলাকারী জানিয়েছেন, ফেলগেনহাউয়ার তাঁকে ‘টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ’ এর সাহায্যে যৌন হয়রানি করেছেন৷
নিরপেক্ষ রুশ সাংবাদিকদের ধারণা, সরকারপন্থি ব্যক্তিরা হয়ত হামলাকারীর মতিবিভ্রমকে কাজে লাগিয়ে তাঁকে ফেলগেনহাউয়ারের উপর হামলা চালানোকে উৎসাহিত করেছেন৷
নভায়া গাজিয়েটা-র সম্পাদক দিমিত্রি মুরাটভ ‘ইকো অফ মস্কো’কে বুধবার জানান, ‘‘আমি নিউজরুমকে অস্ত্র দিব৷ আমরা সাংবাদিকদের আরও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিব, যার বিস্তারিত আমি বলতে চাই না৷ আমরা রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি করব৷ এছাড়া আমার আর অন্য কোনো উপায় নেই৷’’
মুরাটভ বলেন, তিনি সাংবাদিকদের জন্য ‘ট্রমাটিক ওয়েপন’ কিনবেন৷ এ ধরনের অস্ত্রে রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়৷ আত্ম-প্রতিরক্ষার জন্য এই অস্ত্র কার্যকরী৷ যদিও কখনও কখনও তা প্রাণঘাতীও হতে পারে৷
উল্লেখ্য, নভায়া গাজিয়েটা ও ইকো অফ মস্কো দুটোই ক্রেমলিন-বিরোধী শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম৷
নভায়া গাজিয়েটা-র বিশেষ প্রতিনিধি পাভেল কানিজিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তিনি প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে রাজি আছেন৷ অপরাধীরা যখন জানবেন, নভায়া গাজিয়েটার সাংবাদিকদের কাছে অস্ত্র আছে তখন তা আরেক রকম প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করবে, মনে করেন তিনি৷
এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, বিদ্যমান আইন মেনে নভায়া গাজিয়েটা সাংবাদিকদের অস্ত্র দিলে সমস্যা নেই৷
গত দুই দশকে নভায়া গাজিয়েটার বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে হয়ত হত্যা করা হয়েছে, নয়ত তাঁদের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে৷
জেডএইচ/এসবি (এএফপি, এপি)
পুটিনের বিরুদ্ধে লড়তে চান টিভি তারকা সবচাক
২০১৮ সালে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন রিয়েলিটি টিভি তারকা ও সাংবাদিক কেসেনিয়া সবচাক৷
ছবি: Imago/Russian Look
টিভি তারকা
৩৬ বছর বয়সি কেসেনিয়া সবচাক রিয়েলিটি শো ‘বিগ ব্রাদার’-এর রুশ সংস্করণ ‘ডোম ২’ এর উপস্থাপিকা হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন৷ এরপর ‘দ্য গুড লাইফ অফ এ ব্লন্ড’ নামে নিজের একটি রিয়েলিটি শো-তে অংশ নেন৷
ছবি: Imago
রাশিয়ার প্যারিস হিল্টন!
গ্ল্যামার জগতের ব্যক্তি হলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ সহজ ছিল৷ নারী বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘গ্ল্যামার’-এর রুশ সংস্করণের কাভারে তাঁকে দেখা গেছে৷ তাঁকে অনেকে ‘রাশিয়ার প্যারিস হিল্টন’ বলে আখ্যায়িত করেন৷
ছবি: Imago/Russian Look
পুটিনের বস-এর মেয়ে
সবচাকের বাবা সেন্ট পিটার্সবার্গের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ছিলেন৷ সেই সময় তাঁর ডেপুটি হিসেবে কাজ করেছেন রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ সবচাকের মা’ও একজন রাজনীতিবিদ৷ তিনি রাশিয়ার বর্তমান সংসদের উচ্চকক্ষের একজন সদস্য৷
ছবি: picture alliance/dpa/Tass/S. Konkov
নির্বাচন করার ঘোষণা
রুশ এক দৈনিকে লেখা চিঠিতে ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷ ‘‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমার অংশ নেয়া দেশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া হতে পারে,’’ চিঠিতে লিখেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Photoagency Interpress
ক্রেমলিনের প্রার্থী?
সেপ্টেম্বর মাসে ক্রেমলিন সূত্রের বরাত দিয়ে এক রুশ দৈনিক জানায়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার সময় পুটিনের জন্য একজন নারী প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে যে কয়জন সম্ভাব্য নারীর নাম প্রতিবেদনে এসেছিল তার মধ্যে সবচাকও আছেন৷ তাই তিনি যখন প্রার্থীতা ঘোষণা করেন, তখন বিতর্ক তৈরি হয়৷
ছবি: Imago
সবচাকের প্রত্যাখ্যান
ঐ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সবচাক বলেন, দেশের প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর কোনো সংযোগ নেই৷ তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, সম্প্রতি পুটিনের সঙ্গে সবচাকের একটি বৈঠক হয়েছে৷ ক্রেমলিনের মুখপাত্র অবশ্য এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
ছবি: Imago
বিরোধী কর্মী
২০১১ সালে রাশিয়ায় সংসদ নির্বাচনের আগে যে সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সবচাক (ছবিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে)৷ সেই সময় তাঁর কাজ দিয়ে তিনি তাঁর সৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন বলে ডিডাব্লিউকে জানান সবচাক৷ বিক্ষোভের সময় তাঁর চাওয়া ছিল, স্বাধীন গণমাধ্যম ও বিচারব্যবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তারপর...
২০১২ সালের বিক্ষোভের পর সবচাক রাজনীতি বিষয়ক বিভিন্ন টক শো উপস্থাপনা শুরু করেন৷ বিরোধীদের মতবাদ তুলে ধরা এক টিভি চ্যানেলে তাঁর একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে৷ এছাড়া বর্তমানে একটি ফ্যাশন ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন৷
ছবি: Imago
সরকার মনোনীত বিরোধী প্রার্থী?
২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বিলিওনেয়ার মিখাইল প্রখোরভ৷ সরকারবিরোধীদের রাজনৈতিক হতাশা অন্যদিকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টায় ক্রেমলিনই প্রখরভকে নির্বাচনে এনেছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন৷ ২০১৮-র নির্বাচনে সবচাকও সেই ভূমিকায় আবির্ভূত হবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে৷