রুশ সাংবাদিক ইভান গোলুনভকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগও প্রত্যাহার করে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ একই সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তার করা কর্মকর্তাদেরও করা হয়েছে বরখাস্ত৷
ছবি: Reuters/S. Zhumatov
বিজ্ঞাপন
গোলুনভের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে মাদকসেবন সংক্রান্ত অভিযোগ আনা হয়৷ তবে তা প্রমাণিত হয়নি বলে জানিয়েছেন এক মন্ত্রী৷
রুশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্লাডিমির কোলোকোল্টসেভ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পেশা নির্বিশেষে নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব৷' আজই (মঙ্গলবার) তাঁকে মুক্তি দেয়া হবে, তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিয়োগও তুলে নেয়া হবে৷''
কলোকোল্টসেভ গোলুনভেকে হয়রানির পালটা পদক্ষেপ নেয়ারও ঘোষণা দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পশ্চিম মস্কোর পুলিশ প্রধান মেজর জেনারেল আন্দ্রেই পুশকভ এবং মস্কো পুলিশের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল ইউরি ডেভিয়াটকিনকে বরখাস্ত করার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাডিমির পুটিনকে অনুরোধ করবো৷''
গোলুনভ মেডুৎসা নামের একটি অনলাইন পত্রিকার হয়ে সাংবাদিকতা করেন৷ মূলত স্থানীয় বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে কাজ করেন তিনি৷ গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মাদক সংক্রান্ত অভিযোগে তাঁকে মস্কোতে গ্রেপ্তার করা হয়৷
গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টা পরও গোলুনভকে কোনো উকিলের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি৷ এসময় পুলিশ হেফাজতে তাঁকে মারধর করার অভিযোগও ওঠে৷ এরপর গোলুনভকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই ঘটনাকে ‘সাজানো' বলে উল্লেখ করে৷
এই ঘটনার প্রতিবাদে রাশিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম একসঙ্গে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাঁর মুক্তি দাবি করে৷ নাগরিকরাও বিভিন্নভাবে এর প্রতিবাদ জানান৷
রুশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য এই ঘটনাকে দুঃখজনক বলে স্বীকার করেছেন৷ রুশ প্রশাসনের তৃতীয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ভেলেন্টিনা মাটভিয়েঙ্কো গোলুনভের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে খুব ‘খারাপ উদাহরণ' বলে উল্লেখ করেছেন৷
মাটভিয়েঙ্কো বলেন, ‘‘এই তদন্ত নিয়েই মানুষের মনে অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে৷ তদন্তকারীরা হয় অপেশাদার আচরণ করেছেন, অথবা ইচ্ছেকৃত ভুল৷ এই মুহূর্তে এটাকে কি বলা উচিত, বুঝতে পারছি না৷''
এডিকে/ (এএফপি, ডিপিএ)
দেশে দেশে সাংবাদিক নির্যাতন
বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনা বেড়েই চলছে৷ এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ১০ ঘটনা নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/J. Thys
হত্যা
রাজনৈতিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রসী কর্মকাণ্ড বিষয়ে সোচ্চার মেক্সিকোর সাংবাদিক মিরোস্লাভা ব্রিচ ভেলডুসিয়া গত মার্চ মাসে খুন হয়৷ জানা যায়, এ ধরণের সামাজিক অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই হুমকি দেয়া হচ্ছিল তাঁকে৷
ছবি: EPA
অষ্টমবারের মতো গ্রেপ্তার!
অষ্টমবারের মতো গ্রেপ্তার হলেন ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা৷ গত শুক্রবার ফিলিপাইনের ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয় তাঁকে৷ পরে জামিনে মুক্ত হন তিনি৷ তার আগে, মানহানির অভিযোগ এনে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আটক করা হয়েছিল তাঁকে৷ গত সপ্তাহে মারিয়া রেসার বিরুদ্ধে বিদেশি গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলা দায়ের করে সরকার৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
একদিনেই বিচারের রায়!
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানোর অভিযোগে ভিয়েতনামের নারী সাংবাদিক ট্রান থি গা’র বিচার করা হয়৷ বিচারের রায় একদিনেই দেয়া হয়েছে এবং এতে তাঁকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ সরকারের দুর্নীতি ও পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ভিডিও প্রতিবেদন করেছিলেন থি গা৷
ছবি: Reuters
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নয় বছর ধরে কারাগারে বন্দি আছেন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কিরগিজস্তানের সাংবাদিক আজিমজন আসকারভ৷ মানবাধিকারের বিষয়ে তাঁর করা কিছু প্রতিবেদন রুষ্ট করে দেশটির সরকারকে৷
ছবি: Sherzod Askarov
বিব্রতকর অবস্থায় ভারতীয় সাংবাদিক
ভারতীয় নারী সাংবাদিক রানা আইয়ুব দেশটির বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে কাজ করেন৷ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তিনি৷ তাঁর ছবি ফটোশপ করে পর্নোগ্রাফি বানিয়ে তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ সাথে দেয়া হচ্ছে তাঁর মোবাইল নম্বরও৷
ছবি: Marie Claire South Africa
আইনি সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে না
ডিসেম্বর মাসে নিকারাগুয়ার পুলিশ দেশটির ‘১০০% নেটিসিয়াস’ নামে টেলিভিশন চ্যানেলে হানা দিয়ে মিগুয়েল মুরা ও লুসিয়া পিনেডা উবেনা নামের দুই সাংবাদিককে আটক করে৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়৷ মামলা চলছে তাঁদের বিরুদ্ধে, তবে যথাযথ আইনি সহযোগিতা পাননি এ দুই সাংবাদিক৷ (ছবিতে মিগুয়েল মুরাকে দেখা যাচ্ছে)
ছবি: 100% Noticias
গ্রেপ্তারের হুমকি
আটকে থাকা সহকর্মীদের মুক্তির জন্য লড়াই করে যাওয়া দক্ষিণ সুদানের জুবা মনিটর সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক আন্না নিমিরানো প্রতিনিয়তই গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে থাকেন৷ সহকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এ লড়াইয়ের জন্য তাঁকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়ার পাশাপাশি পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দিচ্ছে সরকার৷
ছবি: IWMF
বিচার ছাড়াই আটকে থাকা
মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চলে সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত এক পরিবারের ছবি তোলার অপরাধে আটক করা হয় দেশটির সাংবাদিক আমাডে আবুবাকারকে৷ গত জানুয়ারি মাসে আটক হওয়া এ সাংবাদিককে এখনও বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি৷ (ছবিতে মোজাম্বিকের গণমাধ্যমকর্মীদের দেখা যাচ্ছে)
ছবি: DW/A. Sebastiao
অপহরণের শিকার
অপহরণ, নজরদারি ও মানসিক নির্যাতনসহ সব অত্যাচারই সহ্য করতে হয়েছে কলম্বিয়ার প্রবীণ অনুসন্ধানী সাংবাদিক ক্লাউডিয়া ডুকুকে৷ ক্লাউডিয়াকে নির্যাতনের অপরাধে সরকারের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তকাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত৷
ছবি: DW
কারাগারে নির্যাতন
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সুদান সরকার দেশটির আল-তায়ার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ওসমান মারঘানিকে আটক করে৷ আটক অবস্থায় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে বলে জানা যায়৷ কেন তাঁকে আটক করা হয়েছে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বলেননি কর্তৃপক্ষ৷ আটক হওয়ার আগে, দেশটির সরকারবিরোধী আন্দোলন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shalzy
বাকস্বাধীনতা রক্ষায় ডয়চে ভেলে
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে সোচ্চার ডয়চে ভেলে৷ এরই অংশ হিসেবে ‘ওয়ান ফ্রি প্রেস কোয়ালিশন’ নামে গণমাধ্যম উন্নয়ন বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে ডয়চে ভেলে৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে প্রতিমাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়ান ফ্রি প্রেস কোয়ালিশন৷ সাংবাদিক নির্যাতনের ১০টি ঘটনা নিয়ে এপ্রিলের এ সংখ্যাটি প্রকাশ করেছে তারা৷