তুরস্কে শুরু হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মুখোমুখি আলোচনা। কিন্তু সেই আলোচনায় কি কোনো ফল হবে?
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন তুরস্কে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ না নেয়ায় হতাশ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ছবি: Anna Pshemyska
বিজ্ঞাপন
ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনায় নেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
শান্তি বৈঠক কি সফল হবে?
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার সঙ্গে পুটিনের সাক্ষাৎ হওয়ার আগে শান্তি বৈঠক সফল হবে না। ২০২২-এ যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।
পুটিনের বৈঠকে না থাকার সিদ্ধান্তে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি। রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধ থামানোর সদিচ্ছা নেই বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, "পুটিনের অনুপস্থিতি অসম্মানজনক। সেই অসম্মান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান এবং ডনাল্ড ট্রাম্পকেও করা হলো।"
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছেন, শান্তি প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়ার মূল্য দিতে হবে পুটিনকে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিলেন না। ছবি: Pavel Bednyakov/AP Photo/picture alliance
থাকবেন তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা
জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডিপিএ কে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই বৈঠকে সেদেশের আধিকারিকরাও উপস্থিত থাকবেন। রাশিয়া, ইউক্রেন এবং তুরস্কের মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। আরো জানা গেছে, অ্যামেরিকা, ইউক্রেন এবং তুরস্কের মধ্যেও অপর একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেডিনস্কি জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন বলে তারা আশা করছেন। পূর্বনির্ধারিত শর্ত বাদ দিয়েই আলোচনায় আশাবাদী তারা।
ইউক্রেন এবং রাশিইয়ার মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ক্রমাগত দর কষাকষি চলছে। সহস্রাধিক মানুষ এই যুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রায় এক পঞ্চমাংশ এখন রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দখলে।
পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনকে ঠিক কতটা সহায়তা দিয়েছে?
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এর ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে বড় ধরনের সংকট তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Gent Shkullaku/IMAGO
কেন সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা?
হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথাকাটাকাটির পর তার যুক্তরাষ্ট্র সফর ভণ্ডুল হয়ে যায়৷ বিরল খনিজ আহরণে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন চুক্তিও সই হয়নি৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়, জেলেনস্কির এমন বক্তব্যের পর এক ঘোষণায় ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার কথা বলেছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Saul Loeb/AFP/Getty Images
মস্কোর দিকে ঝুঁকছে ওয়াশিংটন?
এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকেরা৷ ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধের মাধ্যমে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের তিন বছর পর ট্রাম্প মস্কোর দিকে ঝুঁকছেন বলেই ধারণা করছেন তারা৷
ছবি: Aleksander Kalka/NurPhoto/picture alliance
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার উপর প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক সক্ষমতা সরবরাহ করে৷ তবে এই সামরিক সহায়তা স্থগিতের প্রভাব যুদ্ধক্ষেত্রে পড়তে সময় লাগবে৷ ইউক্রেন এখন আগের তুলনায় মার্কিন সরবরাহের উপর কম নির্ভরশীল৷ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ইউরোপীয় অংশীদাররা এখন ইউক্রেনকে বড় ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে৷
ছবি: Xenia Polska/DW
সার্বিক সহায়তা হিসাবের চ্যালেঞ্জ
ইউরোপের দেয়া সহায়তার পরিমাণ বাস্তবে আরো অনেক বেশিও হতে পারে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ন্যাটোর সদস্য সব দেশ ইউক্রেনের প্রতি তাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ পরিমাণ প্রকাশ করে না৷ বিশেষ করে সংবেদনশীল তথ্য বিবেচনায় সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুত পরিমাণ অনেকক্ষেত্রেই গোপন রাখা হয়৷ ফলে প্রদত্ত মোট তহবিলের পরিমাণ হিসাব করাও বেশ কঠিন৷
ছবি: Wojtek Radwanski/AFP/Getty Images
সামগ্রিক আন্তর্জাতিক সাহায্য
কিল ইনস্টিটিউটের গবেষণায় স্বল্পমেয়াদী এবং বহু-বছর মেয়াদী সাহায্য, ঋণ এবং সামরিক সহায়তার প্রকাশিত তহবিলের পরিমাণ জানা যায়৷ এই গবেষণায় দেখা গেছে ইউক্রেনে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে অ্যামেরিকার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইউরোপ৷ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আর্থিক, সামরিক এবং মানবিক সহায়তায় ১৩২ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে ইউরোপ৷ অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সব মিলিয়ে সহায়তা দিয়েছে ১১৪ বিলিয়ন ইউরো৷ (১ ইউরো = প্রায় ১৩০ টাকা)
ছবি: DW
সামরিক সহায়তায় এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তায় ইউরোপ এগিয়ে থাকলেও সামরিক সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে রয়েছে৷ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সহায়তা বাবদ ৬৪ বিলিয়ন ইউরোর বেশি বরাদ্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ অন্যদিকে সামরিক বরাদ্দে ইউরোপ সহায়তা করেছে ৬২ বিলিয়ন ইউরোর কম৷ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার মধ্যে রয়েছে ট্যাংক, ব্র্যাডলি যানবাহন, হাউইটজার, হাইমার্স রকেট লঞ্চার এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা৷