এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ সে কারণেও এমানুয়েল মাক্রোঁর জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখা বড় এক চ্যালেঞ্জ৷ সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই রাশিয়ায় যাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট৷
বিজ্ঞাপন
এমানুয়েল মাক্রোঁ মস্কো যাচ্ছেন আজ (সোমবার)৷ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য- রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে আলোচনা করে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের আশঙ্কা কমানো৷ আলোচনা যে সাময়িকভাবে ফলপ্রসূ হবে সে বিষয়ে মাক্রোঁ যথেষ্ট আশাবাদী, কারণ, তিনি মনে করেন, আলোচনার আরেক অর্থ ‘সময় কেনা’, কেননা, আলোচনার সময় স্বাভাবিকভাবে কোনো পক্ষ যুদ্ধে জড়ায় না৷ তাছাড়া পুটিন যে এখন ইউরোপীয় দেশগুলোরসঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় আগের মতো অত অনাগ্রহী নন, সেই বিষয়টিও আশাবাদী করেছে মাক্রোঁকে৷ কয়েকদিন আগেও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কার্যত শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনকেই স্বীকার করছিলেন পুটিন৷ এখন তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনায় রাজি৷
এ কারণে সোমবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-ইয়েভস লা দ্রিয়ান এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক যাচ্ছেন কিয়েভে৷ তাদের এ সফরের উদ্দেশ্য ইউক্রেনকে আবার আশ্বস্ত করা যে, চলমান সংকটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাশে আছে৷ তারা সফর শেষ করলেই কিয়েভে যাবেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ নবনির্বাচিত জার্মান চ্যান্সেলর কিয়েভে যাবেন আগামী সপ্তাহে৷ কিয়েভ থেকে মস্কোতেও যাবেন তিনি৷ ফরাসি প্রেসিডেন্টের মতো তার মস্কো সফরের মূল উদ্দেশ্য রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রশমনে ভূমিকা রাখা৷
আগামী এপ্রিলে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ অন্যদিকে কাউন্সিল অব ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি ফ্রান্স৷ তাই আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ইউক্রেন ইস্যুকেও খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন এমানুয়েল মাক্রোঁ৷
বারবারা ভেসেল/ এসিবি
ভ্লাদিমির পুটিন: গোয়েন্দা থেকে প্রেসিডেন্ট
পড়াশোনা শেষে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ এরপর কয়েক বছরের মধ্যেই রাজনীতির শীর্ষে চলে আসতে সক্ষম হন তিনি৷
জন্ম ১৯৫২ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে৷ ১৯৭৫ সালে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে সাবেক সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল নিজ শহর লেনিনগ্রাদে (পরবর্তীতে নাম হয় সেন্ট পিটার্সবার্গ) বিদেশি নাগরিক ও কনস্যুলেটের কর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা৷ এরপর বদলি হন পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে৷ বার্লিন প্রাচীর পতনের পর তিনি কেজিবির অনেক ফাইল পুড়িয়ে ফেলেন বলে জানা যায়৷
বামে তরুণ পুটিনকে দেখতে পাচ্ছেন? ছবিতে যে ব্যক্তিকে এক নারীর সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম আনাতোলি সবচাক৷ তিনিই প্রথম পুটিনকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন, নিজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন পুটিনকে৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
উল্কার বেগে উত্থান
খুব দ্রুতই সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো চলে গিয়েছিলেন পুটিন৷ ১৯৯৭ সালে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিন তাঁকে নিজের প্রশাসনে মাঝ পর্যায়ের এক পদে নিয়োগ দেন৷ এই পদটি আসলে ছিল গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পদ, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
বন্ধুর মৃত্যু
২০০০ সালে সবচাকের মৃত্যু পুটিনকে আবেগে আক্রান্ত করেছিল৷ কারণ, যাঁরা পুটিনকে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তিনি৷ সবচাকের মৃত্যুর বছরখানেক আগে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রতারণার অভিযোগ নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাতিল করেছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Chirikov
অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট
২০০০ সালের জুনে ইয়েলিৎসিন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুটিন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন৷ এরপর যখন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রশাসনে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ কিন্তু অভিযোগ যিনি এনেছিলেন, সেই সাংসদ মারিনা সালিয়েকে শেষ পর্যন্ত শহর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
রাজনৈতিক সঙ্গী
সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দু’বার দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে আর তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব ছিল না পুটিনের৷ তাই সেই সময় তিনি তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন দিয়েছিলেন৷ আর নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন৷ সেবারই সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় আর প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল চার থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়৷ এরপর ২০১২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট হন পুটিন৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
চতুর্থবার প্রেসিডেন্ট
১৮ মার্চ, ২০১৮ রবিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও জয়লাভ করেন পুটিন৷ ফলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকছেন তিনি৷ ২০৩০ সালেও তিনি প্রার্থী হবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে পুটিন সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘১০০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করে যাবার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই৷’’