রাশিয়া ইউরোপ সম্পর্কের উন্নতির কথা বললেন গর্বাচভ
১১ নভেম্বর ২০০৯রাশিয়ার ব্যাপারে ইউরোপের মধ্যে, বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে কোথাও একটা ভয় রয়ে গেছে৷ কিন্তু ইউরোপ যদি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক মধুর করে না তুলতে পারে, সেক্ষেত্রে সেরকম পরিস্থিতি ইউরোপের জন্য খুব একটা সুখকর হবে না৷ বিশেষত ইউরোপের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রাশিয়ার অংশবিশেষের জোর ভূমিকা রয়েছে৷ মন্তব্য প্রাক্তন রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের৷
বার্লিনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ীদের দশম সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রাক্তন রুশ প্রেসিডেন্ট গর্বাচভের এই মন্তব্য বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷ ইউরোপ এবং রাশিয়ার পারস্পরিক সম্পর্কের গতি সাম্প্রতিক অতীতে তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য নয়৷ রাজনৈতিক এবং অবশ্যই কূটনৈতিক স্তরে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবসময় যে খুব মধুর থেকেছে তাও বলা যায় না৷ গত বছরেও রাশিয়া জর্জিয়া যুদ্ধকে ঘিরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে রাশিয়ার চাপানউতোর বেশ উত্তেজনাকর অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল৷ তার আগে এবং পরে ন্যাটোর পূর্ব ইউরোপে সম্প্রসারণ নিয়ে বহুবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাশিয়া৷
বার্লিন প্রাচীরের পতনের বিশতম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা গর্বাচভ আপাতত জার্মানিতে৷ মঙ্গলবারের সম্মানজনক সান্ধ্য অনুষ্ঠানে তিনি ছাড়াও বক্তা হিসেবে হাজির ছিলেন প্রাক্তন পোলিশ প্রেসিডেন্ট লেচ ওয়ালেসা, ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডি ক্লার্ক এবং বাংলাদেশের নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস৷ অনুষ্ঠানের আর এক প্রধান বক্তা ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট হোসে মানুয়েল বারোসো গর্বাচভের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন একটু অন্যরকম ভাষায়৷ বারোসো বলেন, রাশিয়ার কাছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রত্যাশার কথা৷ বলেছেন, একটি শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্য এবং উন্নত রাশিয়াকে দেখতে চায় ইউরোপ৷ যে রাশিয়ায় আইনের অনুশাসন এবং মানবাধিকার অবশ্যই সুনিশ্চিত হবে৷
বস্তুত, রাশিয়ার অভ্যন্তরের এই আইনের অনুশাসন আর মানবাধিকার প্রসঙ্গ নিয়ে অতীতে বহুবারই সরব হয়েছে ইউরোপ৷ যে কারণে যে বিষয়কে ঘিরে এই আলোচনাসভা, তার প্রতিই বোধহয় ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন একদিকে রাশিয়ার তরফে গর্বাচভ আর অন্যদিকে ইউরোপের তরফে বারোসো৷ বার্লিনের মেয়র ক্লাউস ভেভরউইট এই আলোচনাসভার আহ্বায়ক হিসেবে এর বিষয় নির্দ্ধারিত করেন ‘ব্রেকিং ডাউন নিউ ওয়ালস' বা নতুন দেওয়াল ভেঙে ফেলার আহ্বান৷ অবশ্যই বার্লিন প্রচীর পতনের বিশতম বর্ষপূর্তির আলোকেই এই বিষয় নির্বাচন৷ সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে বিষয়টি অবশ্যই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক৷ এবং অন্যদিক থেকে ইঙ্গিতবহ আর তাত্পর্যপূর্ণ৷ কারণ রাশিয়া আর ইউরোপের পারস্পরিক সম্পর্কের এমন খোলাখুলি মূল্যায়ন আর প্রয়োজনীয়তার পদক্ষেপ নিতে পেরেছে আলোচনার প্রথম সন্ধ্যা৷ আর তাতে অংশ নিয়েছেন গর্বাচভের মত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব৷ ১৯৮৯ সালের নয়ই নভেম্বর বার্লিনের কুখ্যাত প্রাচীর ভেঙে ফেলার নেপথ্যের কারিগরদের মধ্যে তিনি যে অন্যতম ছিলেন, তাতেও কোন সন্দেহ নেই কারওই৷ গত নয়ই নভেম্বর সন্ধ্যার জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে সেকথা বলে গর্বাচভকে আলাদা করে ধন্যবাদ জানাতে তাই ভোলেন নি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও৷ সুতরাং এখন দেখার বিষয়, রাশিয়া ইউরোপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টান কোনদিকে যায় গর্বাচভের এই বক্তৃতার পর৷
প্রতিবেদন- সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা- হোসাইন আব্দুল হাই