ন্যাটো মিশন স্থগিত করেছে রাশিয়া৷ পাশাপাশি ক্রেমলিন মস্কোতে ন্যাটোর লিয়াজোঁ কার্যালয়ও বন্ধ করে দিচ্ছে৷ সামরিক জোটটিতে থাকা রাশিয়ার আট সদস্যকে ন্যাটো বহিষ্কার করার পর এই ঘোষণা দিল ক্রেমলিন৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ সোমবার জানিয়েছেন যে ন্যাটোতে তার দেশের মিশন স্থগিত করা হচ্ছে৷
তিনি বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে সামরিক জোটটির মিশন থেকে আট রুশ কর্মকর্তাকে বহিস্কার করার প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷''
ন্যাটো অবশ্য বলছে, বহিস্কৃতরা আসলে অঘোষিত রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা৷ আর এই বহিস্কারের অর্থ হচ্ছে ন্যাটোর ব্রাসেলস কার্যালয়ে কর্মরত রুশ দলের অর্ধেক সদস্য আর সেখানে কাজ করতে পারবেন না৷
জার্মানির ন্যাটো মিশন
ন্যাটোতে পশ্চিম জার্মানির অন্তর্ভূক্তির পর থেকে ট্রান্স-আটলান্টিক জোটের বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছে বার্লিন৷ আর ১৯৯০ সাল থেকে জার্মানির সেনাবাহিনী বুন্ডেসভেয়ার নিজেদের ‘আওতাভুক্ত নয়’, এমন জায়গায়ও কাজ করেছে৷
ছবি: S. Gallup/Getty Images
ন্যাটোতে জার্মানির ভূমিকা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি ১৯৫৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দেয়৷ তবে, দুই জার্মানির পুর্নমিলনের আগ অবধি নিজেদের ‘আওতাভুক্ত নয়’ এমন এলাকাতে ন্যাটোর নেতৃত্বে মিশনে যায়নি জার্মানি৷ ১৯৯০ সালের পর থেকে বিশ্বের নানাপ্রান্তে শান্তিরক্ষা থেকে প্রতিরক্ষা অবধি নানা পর্যায়ে ন্যাটোর মিশনে অংশ নিয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
বসনিয়া: জার্মানির প্রথম ন্যাটো মিশন
জার্মানি ১৯৯৫ সালে প্রথম ‘নিজেদের আওতাভুক্ত নয়’ এমন এলাকায় ন্যাটোর নেতৃত্বে শান্তি রক্ষায় সেনা মোতায়েন করে৷ দেশটির নাম বসনিয়া হ্যারৎসেগোভিনা৷ বসনিয়া যুদ্ধের সময় সেখানে নিরাপত্তা প্রদানে ভূমিকা পালন করে জার্মান সেনারা৷ ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর ষাট হাজারের বেশি সেনা সেসময় বসনিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Delic
কসভোয় শান্তি রক্ষা
কসভোতে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনের শুরু থেকে সাড়ে আট হাজারের মতো জার্মান সেনা সেখানে মোতায়েন করা হয়৷ ১৯৯৯ সালে ন্যাটো সার্বিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বিমান হামলাও চালিয়েছিল, কেননা, সেই সময় তারা সংখ্যালঘু আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তাদের বেসামরিক সমর্থকদের উপর দমনপীড়ন চালাচ্ছিল৷ এখনও সাড়ে পাঁচশ’র মতো বুন্ডেসভেয়ারের সেনা দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaj
এজিয়ান সি-তে টহল
জার্মানি ২০১৬ সালে কমব্যাট সাপোর্ট শিপ ‘বন’-কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থিত ন্যাটো মিশনের আওয়তায় এজিয়ান সি-তে মোতায়েন করে৷ অভিবাসী সংকটের সময় গ্রিক এবং তুর্কি সমুদ্রসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ছিল এই মিশনের অংশ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Schreiber
এক দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে
জার্মান সংসদ ২০০৩ সালে আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বাহিনীতে সেনা পাঠানোর পক্ষে মত দেয়৷ ফলে জার্মানি ন্যাটো বাহিনীতে তৃতীয় বৃহত্তম সেনা পাঠানো দেশে পরিনত হয়৷ এই মিশনে পঞ্চাশ জনের বেশি জার্মান নিহত হয়েছে৷ এখনো প্রায় হাজারখানেকের মতো সেনা সেদেশে মোতায়েন রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A.Niedringhaus
লিথুয়ানিয়ায় জার্মান ট্যাংক
বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে ন্যাটোর উপস্থিতি বাড়ানোর অংশ হিসেবে বুন্ডেসভেয়ারের সাড়ে চারশ’ সেনা ২০১৭ সালে লিথুয়ানিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছে৷ ন্যাটোর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই উপস্থিতিকে শক্তিশালী করছে জার্মানির সর্বাধুনিক ট্যাংক৷ তাছাড়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তত বাহিনীর নেতৃত্বেও রয়েছে জার্মানি, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kul
নেতৃত্ব গ্রহণ
২০১৯ সালে ন্যাটোর বহুজাতিক ‘ভেরি হাই রেডিনেস জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স (ভিজেটিএফ)’-এর নেতৃত্ব দেবে জার্মানি৷ জোটটির পূর্বাংশে রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের জবাব দিতে এই ব়্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্স তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: S. Gallup/Getty Images
7 ছবি1 | 7
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ইচ্ছাকৃতভাবে ন্যাটো এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমাদের কার্যত মৌলিত কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও নেই৷ আর ন্যাটোর উদ্যোগের প্রতিক্রিয়াতে আমরা ন্যাটোতে আমাদের স্থায়ী মিশনের ও প্রধান সামরিক দূতের কর্মকাণ্ড স্থগিত করছি৷''
রাশিয়ার এই ঘোষণার জবাবে ন্যাটোর এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আমরা গণমাধ্যমে রুশ মন্ত্রী লাভরভের বক্তব্য দেখেছি, তবে তিনি যেসব ইস্যু উত্থাপন করেছেন সেসম্পর্কে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা পাইনি৷''
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে ন্যাটো মিশন স্থগিত করার রুশ সিদ্ধান্তের কারণে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক আরো জটিল হয়ে পড়বে৷
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখন ক্রমান্বয়ে স্বীকার করতে হবে যে রাশিয়া সম্ভবত আর সহযোগিতা করতে চাচ্ছে না৷''
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মস্কো ক্রাইমীয় উপদ্বীপ দখল করে নিলে রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যকার ব্যবহারিক সহযোগিতা স্থগিত হয়ে যায়৷ তাসত্ত্বেও দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের পথ খোলা রেখেছিল যাতে উচ্চ পর্যায়ের সামরিক সহযোগিতা সহজ হয়৷ এছাড়া ইউক্রেনে দেশটির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডসহ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন, ন্যাটোর আকাশসীমা লঙ্ঘন, সমুদ্রপথে ন্যাটোর জাহাজগুলো হেনস্থার ঘটনাসহ নানা কারণে পশ্চিমাদের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে৷