ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, লুহানস্ক দখল করে নেয়ার পর রাশিয়ার সেনা এখন পূর্ব দনেৎস্কের এলাকাগুলি দখল করতে চাইছে।
বিজ্ঞাপন
একদিন আগেই রাশিয়ার সেনা লুহানস্কের ইসেচানস্ক দখল করেছিল। ইউক্রেনও জানিয়েছিল, তাদের সেনা শহর ছেড়ে চলে এসেছে। ইসেচানস্ক দখল করার পর লুহানস্ক পুরোপুরি রাশিয়ার দখলে চলে গেছে। এবার তারা লুহানস্কের পাশের এলাকা দনেৎস্ক দখলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার রাতের ভিডিও ভাষণে বলেছেন, ''গত ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতির বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইউক্রেনের সেনা দিনের পর দিন রাশিয়ার অগ্রগতিকে থামিয়ে দিয়েছে। তাদের পিছু হটতে বাধ্য করেছে। এবার তাদের ছত্রখান করতে হবে। কাজটা কঠিন। এর জন্য সময় ও অতিমানবিক প্রয়াস দরকার। এর কোনো বিকল্প নেই।''
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান বলেছেন, ''রাশিয়ার সেনা এখন দনেৎস্কের সিভারেস্ক, ফেরোভিকাও বাখমাট শহরের দিকে নজর দিয়েছে।''
ইউক্রেন ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন পাশে পাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র?
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সৌদি আরবকে উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সফল হয়নি৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও সহায়তা চেয়ে পায়নি যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু কেন?
সৌদি যুবরাজ কথা বলতে চাননি?
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেলের মূল্য বেড়ে গেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল৷ কিন্তু সালমান তার সঙ্গে কথা বলতে চাননি বলে সেই সময় জানা গিয়েছিল৷ যদিও মার্কিন প্রশাসন এই খবর অস্বীকার করেছিল৷ এর কিছুদিন পরই রাশিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন সালমান৷
আরব আমিরাতও কথা শোনেনি
রাশিয়ার ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের সুপারইয়ট ও সম্পদ লুকাতে না পারেন সেই অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সেই অনুরোধ শোনেনি আরব আমিরাত৷ ছবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক রুশ ধনীর ইয়ট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Kamran Jebreili/AP/picture alliance
জাতিসংঘে সহায়তা দিতে অনিচ্ছুক
ইউক্রেন দখলের বিরোধিতা ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন রেজুলেশন পাস করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সমর্থন প্রয়োজন৷ কিন্তু সেই সমর্থন দিতে মধ্যপ্রাচ্যকে অনিচ্ছুক দেখা গেছে৷
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
কারণ কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র নিজে তেল উৎপাদন শুরুর পর তাদের কাছে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব কিছুটা কমে গিয়েছিল৷ সে কারণে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ৷ মার্কিন সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যারন ডি. মিলার বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের অংশীদাররা বুঝতে পেরেছিল যে তাদের এখন কম গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ সে কারণে তারা অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছে৷’’
ছবি: Kirill Kukhmar/TASS/dpa/picture alliance
চীনা বিনিয়োগ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক চীন৷ মোট তেল আমদানির ৪৭ শতাংশ করা হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে৷ এছাড়া সৌদি আরবের ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচিতে সহায়তা করছে চীন৷ ইরাকের তেলক্ষেত্র কিনে নেয়া এবং অবকাঠামোতেও বিনিয়োগ করছে চীন৷ ছবিতে গতবছর বাগদাদে চালু হওয়া চীনা ভাষা শিক্ষার একটি ক্লাস দেখা যাচ্ছে৷
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন৷ আর প্রেসিডেন্ট বাইডেন জুলাই মাসে সৌদি আরব যাচ্ছেন৷
ছবি: REUTERS
6 ছবি1 | 6
লুহানস্কের ইউক্রেনীয় গভর্নর জানিয়েছেন, ''স্লোভিয়ানস্ক, থেকে বাখমুট পর্যন্ত পুরো এলাকা ইউক্রেনের সেনার দখলে আছে। রাশিয়া এখন সমানে স্লোভিয়ানস্কে গোলা ফেলছে।''
আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন লুহানস্ককে স্বাধীন করার জন্য রাশিয়ার সেনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের পুনর্গঠন
ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইউক্রেনের পুনর্গঠনে সাহায্য করবে ইইউ। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিন পর্বের রিকভারি পরিকল্পনার জন্য ইউক্রেনের ৭৫০ বিলিয়ান ডলার দরকার।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
তুরস্ক কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার একটি পণ্যবাহী জাহাজ আটকে দিয়েছে। কারণ, ইউক্রেনের অভিযোগ ছিল, তাদের কাছ থেকে দানাশষ্য চুরি করে জাহাজে করে পাঠানো হচ্ছিল। তুরস্ক এই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।