কিয়েভের নতুন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রুশ ভাষীরা আন্দোলন করছে৷ দক্ষিণাঞ্চলীয় উপদ্বীপ ক্রাইমিয়াতে কিছু অস্ত্রধারী মানুষ স্থানীয় সরকারি ভবনে ইউক্রেনের পতাকা সরিয়ে রাশিয়ার পতাকা টানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ওলেক্সান্দর তুরচিনভকে রুশ সেনাদের হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, তারা যদি ক্রাইমিয়া অঞ্চলে নৌ-ঘাঁটি ত্যাগ করে তবে তা সেনা-আগ্রাসন হিসেবে গণ্য হবে৷ রাশিয়ার একটা বিশাল নৌ-ঘাঁটি রয়েছে ক্রাইমিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে৷ গত দুই দশকে ধরে দু'দেশের মধ্যে অঞ্চলটি ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
বুধবার রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এবং বেশিরভাগ ইউনিটকে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷ প্রস্তুত রয়েছে দেড় লাখ সেনা, ৮৮০টি ট্যাংক, ৯০টি বিমান এবং ৮০টি জাহাজ৷ রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউক্রেনের নিকটবর্তী কৃষ্ণ সাগরে নিজের নৌ-ঘাঁটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ তবে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর উদ্দেশ্যে তাদের এই প্রস্তুতি নয়, নিজেদের প্রতিরক্ষার খাতিরেই তারা এটা করছে৷ ইউক্রেনের নতুন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুটিন৷ ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের রুশ ভাষাভাষিরা হুমকির মুখে রয়েছে বলে দাবি করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ৷
ইয়ানুকোভিচের পলায়ন, টিমোশেঙ্কোর মুক্তি
কখনো কখনো সময়ের পরিবর্তন দেখে অবাক হতে হয়৷ ইউক্রেনের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ এখন পলাতক আর তাঁর প্রতিপক্ষ টিমোশেঙ্কো কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ক্ষমতায় ফেরার অপেক্ষায়৷ এই নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ভীষণ ক্লান্ত, তাতে কী!
কারাগারে আড়াই বছর কাটিয়ে ইউলিয়া টিমোশেঙ্কো ভীষণ ক্লান্ত৷ তবে বড় কথা হলো, গত শনিবার থেকে তিনি মুক্ত৷ তাঁর রাজনৈতিক শত্রু বলে পরিচিত ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা হারানোর পরপরই রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে পালিয়েছেন৷ প্রায় একই সময়ে মুক্ত জীবনের আস্বাদ পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী টিমোশেঙ্কো ফিরেছেন কিয়েভে৷ কে বলবে কয়েকদিন আগেও পিঠের প্রচণ্ড ব্যথা সইতে না পেরে খারকিভের হাসপাতালে ভর্ত্তি হতে হয়েছিল তাঁকে!
ছবি: Reuters
ঐতিহাসিক সংসদ অধিবেশন
গণবিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের আসন এমনিতেই টলে গিয়েছিল৷ তাই ইউক্রেনের সংসদ ভেরহোভনা রাডায় বিরুদ্ধে অভিসংশনের প্রস্তাব পাশ হওয়ায় পালানো ছাড়া উপায় ছিল না তাঁর৷ একই অধিবেশনে কারাবন্দী টিমোশেঙ্কোকে মুক্তি দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়৷ ঐতিহাসিক এ অধিবেশনে ইউক্রেনের সংসদ সদস্যরা আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনও চূড়ান্ত করেছেন৷ আগামী ২৫শে মে নির্বাচন হবে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে৷
ছবি: Reuters
সংগ্রামমুখর কয়েকটি বছর
নিজের মুক্তির দাবি আদায়ের জন্য এতদিন চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি ৫৩ বছর বয়সি টিমোশেঙ্কো৷ কারাগারে অনশন ধর্মঘট করেছেন বেশ কয়েকবার৷ পরিবারের সদস্যরা তাঁর পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছেন দেশে-বিদেশে৷ কারাগারে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন টিমোশেঙ্কো৷ অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিতে হয়েছিল বার্লিনের শারিটে হাসপাতাল থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাজনৈতিক সুবিচার
গত কয়েকবছর ধরে ইউক্রেন সরকার এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সম্পর্কের মাঝে কাঁটা হয়ে ছিলেন ইউলিয়া টিমোশেঙ্কো৷ দু’দফা ক্ষমতায় ছিলেন তিনি৷ তখন ইউক্রেনকে ইইউ-র অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছেন অবিরাম৷ সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ ইইউ-র সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষর না করায় দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, সেই চুক্তির শর্তের মধ্যে টিমোশেঙ্কোর মুক্তির বিষয়টিরও উল্লেখ ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রাসবুর্গের ভর্ৎসনা
টিমোশেঙ্কোকে কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে ইউক্রেনের আদালত শুধু যে ইইউ-র সমালোচনার শিকার হয়েছে, তা কিন্তু নয়৷ ২০১৩ সালে এক ঘোষণায় স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত জানায়, ইউক্রেনের আদালত টিমোশেঙ্কোর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে৷ ঘোষণায় আরো বলা হয়, টিমোশেঙ্কোকে অযৌক্তিকভাবে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত৷
ছবি: Patrick Hertzog/AFP/Getty Images
ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত
২০১১ সালের আগস্ট মাসে টিমোশেঙ্কোকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় তাঁকে৷ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাশিয়ার গ্যাস কম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করার কারণে এই শাস্তি দিয়েছিল আদালত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রতীকী ব্যক্তিত্ব
ইউক্রেনের অনেক মানুষের কাছে টিমোশেঙ্কো দশ বছর আগের ‘কমলা বিপ্লব’-এর প্রতীকী ব্যক্তিত্ব৷ গণতন্ত্র মুক্তির সেই আন্দোলনে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল৷ সেই সুবাদে দু-দুবার প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
ভালো-মন্দে মেশানো অতীত
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বে টিমোশেঙ্কোর এখনো খুব সমাদর৷ তবে বিনুনি কাটা চুলের এই রাজনৈতিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হবার পর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি৷ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: SERGEI SUPINSKY/AFP/Getty Images
বিক্ষোভেও তিনি ছিলেন
ইউক্রেনের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে ছিল টিমোশেঙ্কোর ছবি৷ কারামুক্তির পর টিমোশেঙ্কো ফিরেছেন কিয়েভে৷ ফিরেই জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন৷ ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে শাস্তি পাওয়া টিমোশেঙ্কো তাই আবার ক্ষমতায় ফেরার অপেক্ষায়৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চলে স্থানীয় সরকারি ভবনগুলোর দখলে নেয় রুশপন্থিরা৷ পুলিশকে হঠিয়ে ভবনে রুশ পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে তারা৷ যে মানুষগুলো পার্লামেন্ট ভবন দখল করেছে তারা এখনো কোনো দাবি দাওয়া জানায়নি৷ তবে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে জবাবে তারা তাদের দিকে ফ্ল্যাশ গ্রেনেড ছুড়ে দেয়৷ তাদের গায়ে কালো ও কমলা রঙের রিবন জড়ানো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার জয়ের প্রতীক ছিল এটি এবং তারা একটি প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে যেখানে লেখা ‘ক্রাইমিয়া ইজ রাশিয়া'৷
রাশিয়াপন্থি ম্যাক্সিম নামে এক ব্যক্তি সংবাদ সংস্থা এপিকে জানিয়েছে, তিনি এবং তাঁর দলের অন্যান্যরা ক্রাইমিয়ার রাজধানীর সিমফেরোপল-এর পার্লামেন্ট ভবনে গিয়ে সেখানে শান্তভাবে অবস্থান নেন এবং ব্যারিকেড তৈরি করেন৷ কিন্তু ভোর ৫টার দিকে অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ৫০-৬০ জন ব্যক্তি পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে গোলাগুলি শুরু করে৷ তারা বলে, ‘‘আমরা তোমাদের সাথে আছি৷'' এরপর তারা গুলি ছুড়তে থাকে এবং সব দরজা ভেঙে ফেলে৷ তাদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা সংগঠিত দলের সদস্য৷ পুলিশদের তাড়িয়ে তারা ভবনের দখল নেয়৷ তারা আসলেই কে কেউ জানে না৷
বৃহস্পতিবার এক ফেইসবুক বার্তায় ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর্সেন আভাকভ বলেছেন, অবরুদ্ধ পার্লামেন্ট ভবনের আশপাশের এলাকা পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে৷
ওদিকে ইউক্রেনকে নিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে লড়াই শুরু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, ইউক্রেন বিষয়ে কোনো পক্ষেরই হার-জিতের কিছু নেই৷ বরং সবাই ইউক্রেনকে সমর্থনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ৷ মঙ্গলবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগের সঙ্গে ইউক্রেন বিষয়ে বৈঠকের পর কেরি এ সব কথা বলেন৷
প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের পদত্যাগসহ আরো কয়েকটি দাবিতে গত নভেম্বর থেকে ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভে বিক্ষোভ চলছে৷ তবে গত সপ্তাহে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে রক্তাক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ তিন দিনের বিক্ষোভে অন্তত ১০০ মানুষ নিহত হয়েছে৷
এই সহিংসতার পর ক্ষমতাচ্যুত হন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ৷ তিনি গত রবিবার তিনি রাজধানী কিয়েভ ত্যাগ করে কোথায় গেছেন – সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি৷