রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ সাউথ আফ্রিকায়। আগামী মাসে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যৌথ মহড়ায় সাউথ আফ্রিকা।
বিজ্ঞাপন
এই যৌথ সামরিক মহড়া হবে ১৭ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি। এই নৌ-মহড়ার মধ্যেই পড়বে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের প্রথম বার্ষিকী। গতবছর ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল।
সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে মস্কোর বাণিজ্যের পরিমাণ খুব বেশি নয়। কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, সাউথ আফ্রিকা প্রথম থেকেই ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া ও চীনের অবস্থানকে সমর্থন করছে।
গত তিন দশক ধরে সাউথ আফ্রিকায় ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস(এএনসি) রাশিয়াকে সমর্থন করে আসছে। এর আগে রাশিয়া বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বরাবর এএনসি-কে সমর্থন ও সাহায্য করেছে।
তবে সাউথ আফ্রিকার ঘোষিত অবস্থান হলো, তারা নিরপেক্ষ। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলির কাছে ভূ-রাজনৈতিক কারণে সাউথ আফ্রিকা অত্যন্ত গুরুত্বূপূর্ণ দেশ। আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার জন্য তারা সাউথ আফ্রিকাকে পাশে পেতে চায়। রাশিয়াও চীনের সঙ্গে যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়ায় তারা সাউথ আফ্রিকার সমালোচনা শুরু হয়েছে। সাউথ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী নালেদি পান্ডোর বলেছেন, বন্ধুদের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া সাউথ আফ্রিকা করেই থাকে। এটা নতুন কিছু নয়।
রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার দুটি বিমানঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন৷ এই হামলা কি যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার এঙ্গেলস ও ডিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে৷ দূরবর্তী এলাকায় হামলা চালাতে এই দুটি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে রাশিয়া৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
বিশ্লেষকরা বিস্মিত
দুটি বিমানঘাঁটিরই অবস্থান ক্রেমলিন থেকে দূরে৷ তাই সেখানে ইউক্রেনের হামলা চালানোর ক্ষমতা বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে৷ জার্মানির বুন্ডেসভেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাঙ্ক সাউয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিক্রিয়া না দেখানোর বিষয়টি বিস্ময়কর - এটা হতে পারে যে, রাশিয়ার এত ভেতরে এমন হামলা হতে পারে, সেটা রাশিয়া ভাবেনি৷’’
ছবি: MAXAR/REUTERS
হামলা সম্পর্কে রাশিয়ার বক্তব্য
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইউক্রেনের ড্রোনগুলো ভূপতিত করা হয়েছে৷ এবং তাদের টুকরোর আঘাতে দুটি রুশ যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তবে অনলাইনে প্রকাশিত ব্যক্তিগত সার্ভিলেন্স ক্যামেরায় তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, আকাশে কোনো বিস্ফোরণ হয়নি, বরং ভূমিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
কোন ড্রোন?
রাশিয়া বলছে, হামলার কাজে ১৯৭০-এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি পর্যবেক্ষণকারী ড্রোন টিইউ-১৪১ (ছবিতে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে) ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে কিয়েভের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, পাবলিক-প্রাইভেট যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় ইউক্রেনের তৈরি নতুন ড্রোন দিয়ে ঐ হামলা করা হয়েছে৷
ছবি: Zeljko Hladika/PIXSELL/picture alliance
ইউক্রেনের বক্তব্য
ড্রোন তৈরির কর্মসূচি বিষয়ে ইউক্রেন নীরবতা অনুসরণ করছে৷ তবে ৮ ডিসেম্বর ফেসবুক পোস্টে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ জানান, ‘‘অতীতে আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য বছরে এক-দুটি ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হত৷ তবে গত ৩০ দিনে সাতটি নতুন ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
‘প্রতীকী গুরুত্বের চেয়েও বেশি’
রাশিয়ার এত ভেতরে ইউক্রেনের হামলা চালানোর সক্ষমতার বিষয়টি শুধু প্রতীকী অর্থে নয়, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞ ওলেগ কাটকভ বলেন, ‘‘রাশিয়ার এখন তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় মোতায়েন করতে হবে, কিংবা তাদের যুদ্ধবিমানগুলো আরও দূরে নিয়ে যেতে হবে৷ সেক্ষেত্রে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে, যা খরচ বাড়াবে৷’’
ছবি: Sergei Savostyanov/ITAR/TASS/imago
পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সংকেত?
ইউক্রেন অনেকদিন ধরে পশ্চিমের কাছে দূরে হামলা করার অস্ত্র চাইছে৷ যুক্তরাষ্ট্র দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম ‘হাইমার্স’ ব্যবস্থা দিলেও রাশিয়ার ভয়ে সেটির সীমা কমিয়ে দিয়েছে৷ ফলে শুধু রাশিয়া অধিৃকত এলাকায় সেটি ব্যবহার করা যাবে৷ ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেসন্সের উলরিকে ফ্রাঙ্কে মনে করছেন, রাশিয়ায় হামলা চালিয়ে ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্বকে এই সংকেত দিয়েছে যে, তাদের ছাড়াও তারা হামলা করতে সক্ষম৷
ছবি: Roman Koksarov/AP/picture alliance
7 ছবি1 | 7
প্রেসিডেন্টের দাবি
সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এর আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, সাউথ আফ্রিকা একটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে চলেছে। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ এই দাবি মানতে নারাজ।
প্রধান বিরোধী দলের নেতা ড্যারেন বার্গম্যান জানিয়েছেন, এটা এখন স্পষ্ট, সাউথ আফ্রিকা রাশিয়াকেই সমর্থন করছে।
জোহানেসবার্গের সংগঠন ডেমোক্রেসি ওয়ার্কস ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ চেয়ারপার্সন উইলিয়াম গুমেড জানিয়েছেন, সাউথ আফ্রিকা যে অবস্থান নিয়েছে তা মানা যায় না। কারণ সংবিধানে বলা আছে, সরকারকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানবাধিকারের বিষয়টি সমর্থন করতে হবে।
লাভরভের সফর
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া-আফ্রিকার দেশগুলির শীর্ষ-সম্মেলনের আগে ছয়মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার সাউথ আফ্রিকা সফর করছেন লাভরভ। এই শীর্ষবৈঠক আগামী জুলাইতে হওয়ার কথা।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে
ডনবাস অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর অন্য কয়েকটি ইউক্রেনীয় শহর দখলে রাশিয়া নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে৷ অন্যদিকে ইউক্রেনও ডনবাস পুনরুদ্ধারে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে৷ ছবিঘরে থাকছে যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনের কিছু ছবি৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো...
খারকিভকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া৷ তবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলটি নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া ইউক্রেনও৷ খারকিভের ফ্রন্টলাইনে রুশ সৈন্যদের লক্ষ্য করে মর্টার নিক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
পর্যাপ্ত সরবরাহ কি আছে?
দিনের পর দিন রাশিয়া আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে৷ অ্যামেরিকাসহ ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে নিয়মিতই সরবরাহ হচ্ছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ৷ তবে তা অব্যাহত না থাকলে রুশ সৈন্যদের ঠেকিয়ে রাখতে বেশ বেগ পেতে হবে ইউক্রেনকে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক সৈন্য গাড়িতে রাখা মর্টার নিয়ে যাচ্ছেন রুশ সৈন্যদের ঠেকিয়ে রাখার অংশ হিসাবে৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
বেসামরিক স্থাপনাও রক্ষা পাচ্ছে না
ছবিটি ইউক্রেনের মাইকোলাইভ শহরের৷ রাশিয়ার বোমা হামলায় একটি স্কুল ধ্বংস হয়েছে৷ তবে ইউক্রেনের সৈন্যরা এখনো শহরটি রাশিয়ার সৈন্যদের দখলে চলে যাওয়া থেকে ঠেকিয়ে রেখেছেন৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
মেরামত চলছে...
ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক শহরে একটি ট্যাংকের ওপর এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ বোমার আঘাতে নষ্ট হওয়া ট্যাংক মেরামত করছেন তার সহকর্মী৷ রুশ সৈন্যরা খারকিভ দখলে নিলেও পরবর্তীতে ইউক্রেনের পালটা আক্রমণে দখল হারায় রাশিয়া৷ তবে এখনো এর দখল নিয়ে দুই পক্ষে ব্যাপক লড়াই চলছে৷
ছবি: Clodagh Kilcoyne/REUTERS
মুখোমুখি লড়াই
কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী মাইকোলাইভ অঞ্চলে লড়াই তীব্র হয়েছে৷ ইউক্রেনের সৈন্য মাইকোলা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন৷ অদূরে অবস্থান করছে রুশ সৈন্যরা৷ তাদের ঠেকিয়ে রাখতে একে-৪৭ হাতে পাহারা দিচ্ছেন মাইকোলা৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
মাতৃভূমি রক্ষার লড়াই
আরেক ইউক্রেনীয় সৈন্য ভালেরি একে-৪৭ হাতে পরিখার মধ্যে বসে রয়েছেন৷ তবে সতর্ক প্রহরার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে অন্যদিকেও নজর থাকছে তাদের৷ ফ্রন্টলাইনেই এক কুকুরকে দেখে ভালেরির হৃদয় আর্দ্র হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
পালটা আক্রমণ
ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঝাপোরিজঝিয়া রয়েছে রাশিয়ার দখলে৷ এর নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার৷ শহরটি পুনর্দখলের জন্য লড়াই করছে ইউক্রেনের সৈন্যরা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে গাড়িতে মোতায়েন করা হাওয়িৎজার এফএইচ-৭০ প্রস্তুত করতে৷
ছবি: REUTERS
7 ছবি1 | 7
এদিকে সাউথ আফ্রিকায় নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তারা যেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দশ দফা শান্তি প্রস্তাব সমর্থন করে। গত নভেম্বরে জি২০ বৈঠকে এই শান্তিপ্রস্তাব দিয়েছিলেন জেলেনস্কি।
জেলেনস্কি ইউক্রেনের সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছেন, কিন্তু এখনো কোনো সাফল্য পাননি। আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ এই বিরোধে কারো পক্ষ নিতে দ্বিধাবোধ করছে। মানবাধিকার কাউন্সিলে রাশিয়ার সদস্যপদ খারিজ করা নিয়ে ভোটাভুটিতে আফ্রিকার ৫৪টি দেশের মধ্যে মাত্র ১০টি দেশ অংশ নিয়েছিল। নয়টি দেশ বিরোধিতা করে এবং বাকিরা ভোটে অংশ নেয়নি।
২০১৬ থেকে ২০২০-র মধ্যে আফ্রিকার দেশগুলি যত অস্ত্র কিনেছে, তার মধ্যে ১৮ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। স্টকহোমের ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বার্ষিক পর্য়ালোচনায় এই তথ্য সামনে এসেছে।