রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা খুবই কঠিন বলে মনে করেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া এরকম কোনো প্রস্তাবও দেয়নি।
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী সিএনএন-কে জানিয়েছেন, রাশিয়া যদি তাদের সস্তায় তেল দিতে চায় এবং এই তেল কেনার ক্ষেত্রে যদি কোনো নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে না হয়, তাহলে তিনি ওই প্রস্তাব বিবেচনা করবেন। সিএনএনের অ্যাঙ্কার বেকি অ্যান্ডারসনের প্রশ্ন ছিল, ভারত যদি রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনতে পারে, তাহলে পাকিস্তান কেন পারবে না? তখন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
একইসঙ্গে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল বলেছেন, তার মনে হয় না, পাকিস্তানের ব্যাংকের পক্ষে রাশিয়ার থেকে তেল কেনার ব্যবস্থা করা সম্ভব। তিনি জানিয়েছেন, মস্কো এরকম কোনো প্রস্তাব পাকিস্তানকে দেয়নি। আগের সরকার রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য চিঠি লিখেছিল। কিন্তু রাশিয়া তার কোনো জবাব দেয়নি।
পাক অর্থমন্ত্রীর মতে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে তাদের কাছ থেকে তেল কেনা খুবই কঠিন বলে তিনি মনে করেন।
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা যেভাবে কমাবে ইউরোপ
২০২৭ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর থেকে তাদের জ্বালানির নির্ভরতা শূন্যে নামিয়ে আনতে চাইছে৷ গত বুধবার এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় এই জোট৷
ছবি: Jean-Francois Badias/AP/picture alliance
রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা
এখন পর্যন্ত রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ ভাগ গ্যাস ও ২৭ ভাগ তেলের চাহিদা মেটাচ্ছে৷ ইউরোপজুড়ে এই জ্বালানি ঘর গরম রাখতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং শিল্পে ব্যবহৃত হয়৷ এতটা নির্ভরশীলতা হুট করে কমানো সম্ভব নয়৷ তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ইউরোপকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে৷ অবশ্য এই নির্ভরশীলতা কাটাতে অন্তত আরো পাঁচ বছর প্রয়োজন৷
ছবি: Kremlin Pool/ZUMAPRESS/picture alliance
নবায়নযোগ্যে ভরসা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল৷ কিন্তু ইউরোপীয় কমিশন সেই পরিকল্পনাকে আরো ত্বরান্বিত করতে চাইছে এখন৷ আগের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্যের পরিকল্পনাকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করতে চাইছে তারা৷ ২০২০ সালের হিসেবে, তাদের ২২ শতাংশ জ্বালানি আসে বায়ু, সৌর ও জৈবশক্তি থেকে৷
ছবি: picture alliance / Zoonar
আইনে পরিবর্তন
লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইউরোপীয় কমিশন আইনে পরিবর্তন আনার ঘোষণাও দিয়েছে৷ কড়া বিধিনিষেধের কারণে অনেক প্রকল্প পাস হতে সময় লাগে৷ সেগুলো কিছুটা শিথিলের উদ্যোগ নেয়া হবে৷ এছাড়া বড় বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলোর ওপর সৌর প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করার নিয়মও করা হবে৷
ছবি: Philip Reynaers/BELGA/dpa/picture alliance
জ্বালানি সাশ্রয়
কমিশন ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি সাশ্রয়ও ১৩ ভাগ কমাতে চায়৷ আগের প্রস্তাবে তা ছিল ৯ শতাংশ৷ এর জন্য অনেক ভবনকে সংস্কার করা হবে, যেন সেগুলোতে কম জ্বালানি খরচ হয়৷ তাদের হিসেব বলছে, মানুষ চাইলে নিজ উদ্যোগে তাদের জ্বালানি খরচ কমাতে পারে৷ এতে করে অন্তত পাঁচ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা কমানো সম্ভব৷
ছবি: David McNew/Getty Images
গ্যাসের নতুন অবকাঠামো
ইউরোপ রাশিয়া থেকে বছরে ১৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আমদানি করে থাকে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও জ্বালানি সাশ্রয় করে এর বিকল্প তৈরি সম্ভব৷ কিন্তু স্বল্পমেয়াদে ইউরোপ এখন সেই গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজছে৷ সেক্ষেত্রে হাইড্রোজেন গ্যাস এর বিকল্প হতে পারে৷ কিন্তু এর অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে৷ কারণ যে-কোনো সময় রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বিপদ তৈরি হবে, যেমনটি তারা পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ার ক্ষেত্রে করেছে৷
ছবি: Joerg Boethling/imago images
অর্থায়ন
সবমিলিয়ে জ্বালানি খাতে ২০২৭ সালের মধ্যে ২১০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করতে চায় ইইউ৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৩০০ বিলিয়ন হবে৷ এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ৮৬ বিলিয়ন, হাইড্রোজেন অবকাঠামোর জন্য ২৭ বিলিয়ন ইউরো, ২৯ বিলিয়ন ইউরো বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নয়নে ও ৫৬ বিলিয়ন ইউরো জ্বালানি সাশ্রয় অবকাঠামো ও হিট পাম্প তৈরিতে খরচ হবে৷
ছবি: Christoph Hardt/Geisler-Fotopress/picture alliance
6 ছবি1 | 6
রয়টার্স অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, বর্তমানে রাশিয়ার উপর যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি আছে, তাতে, অন্য দেশগুলির মস্কো থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করেন, ভবিষ্যতে আরো নিষেধাজ্ঞা জারি করে এই তেল কেনার বিষয়টিতে কড়াকড়ি করা হতে পারে।
ইমরান খানের দলের নেতা শিরিন মাজারি বলেছেন, অর্থমন্ত্রী প্রকৃত অবস্থার কথা জানেন না। রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। মন্ত্রী ভারতকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। আসলে অ্যামেরিকার ভয়ে তিনি তেল কিনছেন না।
অ্যামেরিকা এখন অশোধিত তেল আমদানি করতে অসুবিধায় পড়েছে। সূত্রকে উদ্ধৃত করে দ্য ডন জানাচ্ছে, পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম ডিভিশন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছে, তেল আমদানি করতে অসুবিধা হচ্ছে। কারণ, বিদেশি ব্যাংকগুলি অয়েল মার্কেটিং কোম্পানিগুলিকে লেটার অফ ক্রেডিট দিচ্ছে না।