মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র বলেছেন, রাশিয়ার এক আইনজীবীর সঙ্গে তাঁর আলোচনার সময় ঐ আইনজীবী হিলারি ক্লিন্টন সম্পর্কে কোনো আপসমূলক তথ্য প্রকাশ করেননি৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ঐ বৈঠক সম্পর্কে বলেন, ‘‘সত্যিকার অর্থে ওটা (বৈঠক) ছিল ২০ মিনিট অপচয়৷'' এমনকি তাঁর বাবাকে এই বৈঠক সম্পর্কে সেই সময় কিছু বলেননি বলেও মন্তব্য করেন ৩৯ বছর বয়সি ট্রাম্প জুনিয়র৷ বাবার নির্বাচনি প্রচারণার সময় তিনি অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন৷
ইমেল প্রকাশ
ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকার দেয়ার আগে তিনি তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি ই-মেল থ্রেড প্রকাশ করেন৷ ঐ ই-মেলে ক্লিন্টন সম্পর্কে রাশিয়া থেকে কিছু স্পর্শকাতর তথ্য দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল৷ মিউজিক পাবলিসিস্ট রব গোল্ডস্টোনের সঙ্গে ঐ ই-মেল আদানপ্রদান করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র৷ গোল্ডস্টোন ই-মেলে লিখেছিলেন, রাশিয়ায় থাকা তাঁর পরিচিত সূত্রের কাছে ক্লিন্টন সম্পর্কে এমন কিছু সরকারি তথ্য আছে যার ভিত্তিতে ক্লিন্টনকে অভিযুক্ত করা যেতে পারে৷ বিষয়টি তাঁর বাবার জন্য বেশ উপকারি হবে বলে ট্রাম্প জুনিয়রকে ইমেলে লিখেছিলেন গোল্টস্টোন৷
ক্লিন্টনকে হারাতে রাশিয়ার কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখে গোল্টস্টোনকে দেয়া এক ই-মেল উত্তরে ট্রাম্প জুনিয়র লিখেছিলেন, ‘‘আমি পছন্দ করছি৷''
এই ই-মেলগুলোই প্রকাশিত প্রথম কোনো তথ্যপ্রমাণ, যাতে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্প পরিবারের এক সদস্য নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষে আনার আশায় রুশ সরকারের সূত্রের কাছ থেকে তথ্য পেতে আগ্রহী ছিলেন৷ ই-মেল আদানপ্রদানের পর ২০১৬ সালের জুন মাসে রুশ আইনজীবী নাটালিয়া ভেসেলনিটস্কায়ার সঙ্গে নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে বৈঠক করেন ট্রাম্প জুনিয়র৷
ট্রাম্প জুনিয়রের ইমেল প্রকাশের পর মার্কিন গণমাধ্যমের একটি অংশ ট্রাম্প জুনিয়রের বিরুদ্ধে শপথভঙ্গের অভিযোগ আনছে৷ ডেমোক্র্যাট সেনেটর টিম কেইনও মনে করছেন যে, ট্রাম্প জুনিয়র ‘বিচারের পথে বাধা দেয়া'-র মতো অপরাধের চেয়েও বড় কিছু করেছেন৷
তবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স এসব অভিযোগকে ‘উদ্ভট' বলে মন্তব্য করেছেন৷ এর আগে তিনি ছেলের ই-মেল প্রকাশ নিয়েপ্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরএকটি বিবৃতি সাংবাদিকদের পড়ে শোনান৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমার ছেলে একজন উচ্চ গুণসম্পন্ন মানুষ এবং আমি তাঁর সচ্ছতার প্রশংসা করি৷''
জেডএইচ/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
অ্যামেরিকার ‘ফার্স্ট চিলড্রেন’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দশ বছর বয়সের ছেলে ব্যারন এখনই হোয়াইট হাউসে আসছে না৷ তবে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে অ্যামেরিকার সবচেয়ে কচি ‘ফার্স্ট চিলড্রেন’-দের মধ্যে গণ্য হবে সে৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
ব্যারন ট্রাম্প
অ্যামেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্টের পাঁচ সন্তান, তাদের মধ্যে একমাত্র ১০ বছর বয়সি ব্যারনই হয়ত বাবা-মায়ের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে থাকবে, কেননা তার অন্য ভাই-বোনেরা অনেক বড়৷ বলতে কি, কেনেডি আমল যাবৎ ব্যারনই হবে প্রথম পুত্রসন্তান, যে হোয়াইট হাউসে বাস করবে৷ জানা গেছে, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ও ব্যারন স্কুলের বছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিউ ইয়র্কেই থাকবেন৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
মালিয়া আর সাশা ওবামা
ওবামাদের দুই কন্যা গত আট বছর ধরে হোয়াইট হাউসেই থেকেছে৷ ১৮ বছর বয়সের মালিয়া কলেজে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে ও ‘হোয়াইট হাউস ছাড়তে ব্যগ্র’, বলেছেন তার বাবা৷
ছবি: picture alliance/dpa/ISP/O. Douli
বার্বারা বুশ ও জেনা বুশ হাগর
প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ও লরা বুশের যমজ কন্যারা কোনোকালেই ১৬০০ নম্বর পেনসিলভানিয়া অ্যাভেনিউতে থাকেননি৷ তাঁদের বাবা যখন প্রেসিডেন্ট হন, তখন দু’জনেই কলেজে পড়েন৷ কিন্তু তাঁদের দাদু জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ যখন অ্যামেরিকার ৪১তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তাঁরা হোয়াইট হাউসে অনেক সময় কাটান৷ বার্বারা এখন গ্লোবাল হেল্থ কোর-এর কর্মী; জেনা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন৷
এমি কার্টার-এর পর বিল আর হিলারি ক্লিন্টনের কন্যা চেলসি ছিলেন হোয়াইট হাউসে প্রথম শিশু৷ ‘‘হোয়াইট হাউসে থাকাটা যে কতটা অসাধারণ, তা আমি কোনোদিন ভুলিনি’’, একবার একটি সাক্ষাৎকারে বলেন চেলসি৷ ১৭ বছর বয়সে চেলসি হোয়াইট হাউস ছেড়ে কলেজে যান৷ বর্তমানে তিনি ক্লিন্টন ফাউন্ডেশনে কাজ করেন৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
এমি কার্টার
জিমি আর রোজালিন কার্টারের চার সন্তান, কিন্তু তাঁদের মধ্যে শুধু এমি প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে থেকেছেন, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল অবধি৷ কার্টার যখন প্রেসিডেন্ট হন, তখন এমির বয়স নয়৷ ষাটের দশকের গোড়ায় কেনেডির পুত্র-কন্যাদের পর এমিই ছিলেন হোয়াইট হাউসে প্রথম কমবয়সি শিশু৷ এককালে রাজনৈতিক প্রতিবাদে সক্রিয় অংশ নিতেন এমি, কিন্তু ১৯৯৬ সালে বিবাহ করার পর লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/Hulton Archive
ক্যারোলাইন কেনেডি
১৯৬১ সালে জন এফ কেনেডি যখন প্রেসিডেন্ট হন, তখন ক্যারোলাইনের বয়স ছিল তিন, জন জুনিয়র একেবারেই শিশু৷ জন জুনিয়র একটি বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৯৯৯ সালে৷ ক্যারোলাইন কেনেডি আজ পেশায় উকিল, বিবাহিত ও তিন সন্তানের জননী৷ ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল অবধি তিনি জাপানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/Y. Honma/Jiji Press
কেনেডির দুই সন্তান
দু’বছরের বেশি সময় ধরে ক্যারোলাইন আর জন হোয়াইট হাউসে ঘুরে বেরিয়েছে, প্রতিদিন সকালে বাবাকে পায়ে হেঁটে ওভাল অফিসে পৌঁছে দিয়েছে, ওভাল অফিসে খেলাও করেছে৷ হোয়াইট হাউসের লনে তার ম্যাকারোনি নামের ঘোড়ার ওপর চড়ত ক্যারোলাইন – সে ছিল মিডিয়ার ডার্লিং৷ অন্যান্য ছবিতে জন প্রেসিডেন্টের টেবিলের তলায় লুকোচ্ছে বা সেক্রেটারির টাইপরাইটারের চাবি টিপছে৷ হোয়াইট হাউস ছিল এই দু’টি শিশুর বাড়ি ও খেলার জায়গা৷
ছবি: picture alliance/abaca
ফোর্ড পরিবার
১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ সাল অবধি জেরাল্ড ফোর্ডের সংক্ষিপ্ত প্রেসিডেন্সির সময় তাঁর চার সন্তানের কেউই হোয়াইট হাউসে থাকেনি৷ তবে ১৯৭৫ সালে সুজান (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়) তার ‘সিনিয়র প্রম’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঐ হোয়াইট হাউসে, সেটা ১৯৭৫ সালে, সুজানের বয়স যখন ১৭৷ ছবিতে ফার্স্ট ফ্যামিলিকে দেখা যাচ্ছে হোয়াইট হাউসের লনে, ১৯৭৬ সালে৷
প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট তাঁর স্ত্রী ও ছয় সন্তানকে নিয়ে হোয়াইট হাউসে ছিলেন ১৯০১ থেকে ১৯০৯ সাল অবধি৷ কোয়েন্টিনের বয়স তখন চার৷ তার একটি আলগনকুইন নামের টাট্টু ঘোড়া ছিল৷ একদিন কোয়েন্টিন সেই টাট্টু ঘোড়াকে তার ভাইয়ের ঘরে নিয়ে যায়, কেননা ভাই তখন অসুস্থ৷ ‘‘আর কোনো পরিবার আমাদের মতো হোয়াইট হাউস উপভোগ করেছে বলে আমার মনে হয় না’’, একবার মন্তব্য করেছিলেন কোয়েন্টিনের বাবা প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
ট্যাড লিংকন
আব্রাহাম লিংকন তাঁর স্ত্রী মেরি ও ছেলে-মেয়েদের হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছিলেন৷ ছোট্ট ট্যাড যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলতে ভালোবাসত; তার বাবা মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় (১৮৬১-৬৫) প্রেসিডেন্ট ছিলেন কিনা৷ মেরির বিবৃতি অনুযায়ী লিংকন তাঁর ছেলে-মেয়েদের খুব প্রশ্রয় দিতেন, বলতেন, ‘‘আমার ইচ্ছে, আমার ছেলে-মেয়েরা স্বাধীন, সুখি ও বাবা-মায়ের শাসনমুক্ত হোক৷’’