রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন সোমবার বলেন, রাশিয়া ‘মাতৃভূমি’ রক্ষার চেষ্টা করছে৷ পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়া দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে দাবি করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৭৭তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে মস্কোর রেড স্কয়ারে আয়োজিত প্যারেডে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন পুটিন৷
ইউক্রেনে চালানো হামলাকে ‘বিশেষ অভিযান' বলে আখ্যায়িত করে রাশিয়া৷ সোমবার এটিকে পুটিন ‘যুদ্ধ' বলে ঘোষণা করতে পারেন বলে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন৷ এছাড়া পুটিন উত্তেজনা আরো বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারেন বলেও অনুমান করা হচ্ছিল৷ কিন্তু বাড়তি সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কিছু বলেননি পুটিন৷
পুটিন বলেন, ইউক্রেনে হামলার বিষয়টি ‘সঠিক সিদ্ধান্ত' ছিল৷ এটি আগ্রাসন বন্ধের জন্য অগ্রিম পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ পুটিন বলেন, ‘‘পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়া দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করছিল ন্যাটো৷ তারা রাশিয়ার কথা শুনতে চায়নি, তাদের অন্য পরিকল্পনা ছিল৷''
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, রাশিয়া ডনবাসে ‘মাতৃভূমি' রক্ষায় লড়ছে, ‘‘যেন কেউ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শিক্ষা ভুলে না যায়৷''
ভাষণে হতাহত সৈন্যদের পরিবারগুলোর দেখাশোনা করার অঙ্গীকারও করেন পুটিন৷ ‘‘প্রত্যেক সেনা ও কর্মকর্তার মৃত্যু আমাদের জন্য বেদনাদায়ক৷ তাদের পরিবারের দেখাশোনা করতে যা করা প্রয়োজন, রাষ্ট্র তা করবে,'' বলেন তিনি৷
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘‘কোনো বিজয় দিবস থাকতে পারে না, শুধু অসম্মান ও ইউক্রেনে নিশ্চিত পরাজয় ছাড়া... তিনি (পুটিন) নিশ্চিতভাবেই হেরে গেছেন৷ রাশিয়া আর আগের মতো নেই৷''
রাশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফাউল টুইটে বলেন, ‘‘বিজয় দিবসে পুটিন ইউক্রেন যুদ্ধে হারছে৷ রাশিয়ার সৈন্যদের ঘরে ফিরে যাবার সময় এসেছে৷''
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
রাশিয়ার উপর কে, কত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে
ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার উপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে পশ্চিমা দেশগুলো৷ সঙ্গে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান৷ পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়াও৷ ছবিঘরে জানুন বিস্তারিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski
শীর্ষে যুক্তরাজ্য
রাশিয়ার উপর কারা কত নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তার হালনাগাদ পরিসংখ্যান রাখছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট কাস্টেলাম ডট এআই৷ তাদের হিসাবে ইউক্রেনে হামলার পর থেকে ক্রেমলিনের উপর সবচেয়ে বেশি ৮৭৮টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য৷ এই তালিকায় রুশ ব্যাংক, ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আব্রাহোমোভিচের (ছবি) মতো ধনকুবের কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভের সৎ কন্যাও রয়েছেন৷
ছবি: Mike Egerton/empics/picture alliance
সম্পদ জব্দ করছে সুইজারল্যান্ড
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার ৬১৭ কোটি ডলারের সম্পদ এরই মধ্যে জব্দ করেছে সুইজারল্যান্ড, যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার উপর সুইজারল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা ৭৭৪টি৷
ছবি: Jean-Christophe Bott/EPA-EFE
আরো বাড়াতে চায় ইইউ
ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো একযোগে রাশিয়ার বিভিন্ন খাত, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ কয়েক দফায় সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৭০৫-এ, যা আরো বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ এছাড়া ফ্রান্সের অর্থ বিভাগ নিজেরাও আলাদাভাবে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার তালিকা করেছে, যার সংখ্যা ৬৯৬৷
ছবি: IAN LANGSDON/AFP/Getty Images
টার্গেটে মিডিয়া ব্যাক্তিত্বরাও
ক্যানাডার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরাও৷ চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার গণমাধ্যম নির্বাহীসহ দশ জনের একটি তালিকা ঘোষণা করে দেশটি৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ান টেলিভিশন নিউজ নেটওয়ার্ক আরটির প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ানও৷ সব মিলিয়ে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫২৬ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্যানাডা৷
ছবি: Muhammed Ibrahim Ali/IMAGESLIVE via ZUMA Press Wire/picture alliance
বিনিয়োগকারীরাও ছাড় পাচ্ছে না
অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদ আছে রাশিয়ার এমন ধনকুবেরদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ গত সপ্তাহে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন কুইন্সল্যান্ডে অ্যালুমিনা পরিশোধনাগারের বিনিয়োগকারী ওলেগ দেরিপাস্কা (ছবি)৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার উপর ৪৭৯টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture.alliance/dpa/Tass/V. Smirnov
অন্যদের চেয়ে কম যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে মিত্র দেশগুলোর তুলনায় এখনও তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকাটি ছোট৷ কাস্টেলাম এর হিসাবে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের উপর ২৯৩ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন৷ তবে ২৪ মার্চ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমা ও এর ৩২৮ সদস্য এবং ৪৮টি প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Brendan Smialowski/AFP
তৎপর জাপানও
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে শুরু থেকেই সরব জাপান৷ রাশিয়ার রাজনীতিবিদ, তাদের স্বজনদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ তার মধ্যে আছেন ডুমার ১১ সদস্য, ব্যাংকার, শিল্পপতিও৷ ২২ ফেব্রুয়ারির পর এখন পর্যন্ত মোট ৮৮টি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: The Yomiuri Shimbun/AP Images/picture alliance
নিষেধাজ্ঞায় শীর্ষে রাশিয়া
রাশিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়া দেশ৷ মোট সাত হাজার ৩৮৬টি নিষেধাজ্ঞার বোঝা বিশ্বের অন্যতম এই পরাশক্তির কাঁধে৷ এর মধ্যে চার হাজার ৩৬২টি দেয়া হয়েছে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরে৷ এর আগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান (৩৬১৬৷ এরপর রয়েছে সিরিয়া (২৬০৮), উত্তর কোরিয়া (২০৭৭), ভেনেজুয়েলা (৬৫১), মিয়ানমার (৫১০) ও কিউবা (২০৮)৷
ছবি: Mikhail Klimentyev/AP/picture alliance
নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য
২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত চার হাজার ৩৬২টি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেশিরভাগই দেয়া হয়েছে ব্যক্তির উপরে৷ তিন হাজার ৯১৫টি নিষেধাজ্ঞাই এ সংক্রান্ত৷ আর বাকি ৪৩৭টি দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের উপরে৷
ছবি: Anton Novoderezhkin/Tass/imago images
রাশিয়ার পাল্টা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে ক্রেমলিন৷ অন্যদিকে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোসহ ৩১৩ জনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এছাড়াও মার্চের শুরুতে রাশিয়া ‘অবন্ধুসুলভ’ ৪৮ দেশের তালিকা প্রকাশ করে৷ বুধবার পুটিন ঘোষণা দিয়েছেন দেশগুলোকে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য শোধ করতে হবে রুবলে৷
ছবি: Bai Xueqi/ Xinhua News Agency/picture alliance