রাশিয়া যেভাবে জার্মানির নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভুয়া খবর প্রচারের মাধ্যমে জার্মানির নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে রাশিয়া। মূলত মধ্যপন্থিদের ক্ষতি করার চেষ্টা হচ্ছে।
রাশিয়ার ভুয়া প্রচারকে মাত্রোস্কা বলা হয়। মাত্রোস্কা হলো এই ধরনের পুতুলের নাম। ছবি: Christian Ohde/picture alliance
বিজ্ঞাপন
অন্য দেশের নির্বাচনে নাক গলানোর অভিযোগ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নয়। অভিয়োগ, এই কাজ তারা সাধারণ ভাবে করে থাকে ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে। কিছুদিন আগেই ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল। । জার্মানির জাতীয়. পার্লামেন্টে পেশ করা একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১-এ জার্মানির নির্বাচনও প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল রাশিয়া।
এই প্রচারের মাধ্যমে মূলত মধ্যপন্থি দলগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেন্টার ফর মনিটরিং, অ্যানালিসিস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিসের (সিইএমএএস) লিয়া ফ্র্যুউইর্থ জানিয়েছেন, "সিংহভাগ ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে গ্রিন পার্টি, সিডিইউ, এসপিডি এবং তাদের প্রর্থীর বিরুদ্ধে।" সিইএমএএস ষড়যন্ত্র, ভুয়ো তথ্য, ইহুদিবিদ্বেষ এবং চরম দক্ষিণপন্থা নিয়ে কাজ করে।
লিয়া আরো জানান, এএফডি (অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি) নিয়ে খুব কম ভুয়া তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, "এএফডি-র যেটুকু উল্লেখ আছে তা মূলত সদর্থক।"
যেভাবে ছড়াচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফেক নিউজ
দুটি সাম্প্রতিক উদাহরণ দেখা যাক। ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিক থেকে সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের একটা পুরনো ভিডিও একাধিক এক্স হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট হতে থাকে। ভিডিওটিতে তার ভঙ্গুর মানসিক চিত্র ধরা পড়ে। এমনটাও দেখা যাচ্ছে যে ২০১৭-তে সিডিইউ নেতার আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা ছিল।
ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের বিরুদ্ধে প্রচারিত ভুয়া খবর। ছবি: w-a-munchen
এই সংক্রান্ত একটা পোস্ট ১০ দিনে প্রায় ৫৫ লাখ ভিউ পেয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, সামাজিক মাধ্যমে যারা এই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন তারা একই সঙ্গে একথা লিখেছেন যে ম্যার্ৎস ইউক্রেনকে টরাস মিসাইল যোগান দেওয়ার কথা বলেছেন। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের নিরিখে এই বিষয়টি খুবই উল্লেখযোগ্য।
আরেকটি ক্ষেত্রে, গ্রিন পার্টির নেতা রবার্ট হাবেক এবং ক্লডিয়া রথ ভুয়া খবরের শিকার হন। ন্যারেটিভ নামের একটি ওয়েবসাইটে একটি খবর এবং একটি ভিডিওতে দাবি করা হয় যে এই দুই নেতা ১০ কোটি ইউরোর একটি তছরূপ করেছেন। প্রুশিয়ান কালচারাল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একাধিক ছবি ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে এবং সেখান থেকে একাধিক ব্যক্তিকে সেই ছবি বিক্রি করা হয়েছে। ফাউন্ডেশন ডিডব্লুকে জানায় যে এই দাবি ভিত্তিহীন।
মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য সচেতনতা বৃদ্ধি
ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে কাজ করা সংস্থা নিউজগার্ডের লিওনি ফালার জানিয়েছেন, "রাশিয়ার লক্ষ্য অনিশ্চয়তা প্রসার এবং ভোটারদের মেরুকরণ করা।" তিনি নিশ্চিত ভাবে জানান যে এই অপপ্রচারের মধ্যেও চরম দক্ষিণপন্থি পার্টি এএফডির প্রার্থী অ্যালিস ভাইডেল সম্পর্কে সদর্থক প্রচার চালাচ্ছে এরা।
জার্মানি: টিভি বিতর্কতে কী বললেন চার প্রধান দলের নেতারা
জার্মানির নির্বাচন আসন্ন। চ্যান্সেলর-পদপ্রার্থী চার নেতা টিভি বিতর্কে অংশ নিলেন। কী বললেন তারা?
ছবি: Kay Nietfeld/dpa-Pool/picture alliance
কী বলছে সমীক্ষা?
সমীক্ষা বলছে রক্ষণশীল সিডিইউ ৩০ শতাংশ, অতি ডানপন্থি এএফডি ২০ শতাংশ, বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের এসপিডি ১৫ শতাংশ এবং গ্রিন পার্টি ১৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে। এই চার প্রধান দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীরা যোগ দিয়েছিলেন টিভি বিতর্কে।
ছবি: picture alliance/dpa
সিডিইউ নেতা যা বললেন
সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছেন, ''নির্বাচনের পর আমাদের বেশ কয়েকটা সমস্যার সমাধান করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে অবৈধ অভিবাসন এবং অর্থিক বৃদ্ধি থমকে যাওয়ার সমস্যা। আমি এমন সরকার গঠন করতে চাই, যারা নিজেদের মধ্যে বিরোধে কালক্ষেপ করবে না, যারা ইউরোপে গুরুত্ব পাবে। আমরা আর্থিকভাবে শক্তিশালী হলেই তা সম্ভব। ভালো শিক্ষানীতি, তরুণ উদ্যোগপতিদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করে এটা করা সম্ভব।''
ছবি: Kay Nietfeld/dpa-Pool/picture alliance
'এএফডি-র সঙ্গে হাত মেলাব না'
ম্যার্ৎস বলেছেন, তিনি অতি ডানপন্থি এএফডির সঙ্গে কখনোই সরকার গঠনের জন্য হাত মেলাবেন না। তাহলে কার সঙ্গে তিনি হাত মেলাতে পারেন? সিডিইউ নেতার জবাব, ''সম্ভবত এসপিডি, সম্ভবত গ্রিনের সঙ্গে।''
ছবি: Kay Nietfeld/dpa-Pool/picture alliance
ওলাফ শলৎসের বক্তব্য
বর্তমান চ্যান্সেলর এবং এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎসের বক্তব্য, ''বিতর্ক থেকে এটাই বোঝা যাচ্ছে, বর্তমান চ্যান্সেলরের আবার ক্ষমতায় আসা উচিত। ইউরোপের সুরক্ষা, যুদ্ধ ও শান্তি এবং আর্থিক কারণে এসপিডি-কে মানুষের দরকার। তারা পেনশন কম করবে না, স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামোর উন্নতি করবে, বিনিয়োগ বাড়াবে, দেশকে এক করে রাখবে। তারা ন্যূনতম মজুরিও বাড়াবে।''
ছবি: Kay Nietfeld/dpa-Pool/picture alliance
এএফডি নেত্রীর দাবি
অতি ডানপন্থি এএফডি নেত্রী অ্যালিস ভাইডেল বলেছেন, ''আমরা জার্মানিকে ধনী ও নিরাপদ করতে চাই। আমরা বেআইনি অভিবাসন থামাব। যারা অবৈধভাবে ঢুকেছে বা অপরাধ করছে, তাদের ফেরত পাঠাব। সিডিইউ এটা করতে দেয়নি। বিদ্যুৎক্ষেত্রে আমাদের মাসুল সবচেয়ে বেশি। আমরা নতুন প্রযুক্তি এনে তার বদল করব। আমরা দেশের করদাতাদের উপর বোঝা চাপাব না।''
ছবি: Kay Nietfeld/dpa-Pool/picture alliance
গ্রিন পার্টি যা বলছে
গ্রিন পার্টির নেতা রবার্ট হাবেক বলেছেন, "আমার বয়স ৫৫ বছর। আমি এমন একটা দেশে বাস করেছি, যেখানে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই নিশ্চয়তা আর নেই। নির্বাচনের পর আমরা একযোগে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব। আমি সেই জার্মানির সেবা করতে চাই, যেখানে আমাদের সন্তানরা আপনার ছেলেমেয়েরা অতীতের মতো একইরকম সম্ভাবনাময় পরিস্থিতিতে থাকতে পারে।''
ছবি: Kay Nietfeld/dpa-Pool/picture alliance
ইউক্রেন নিয়ে
এএফডি নেত্রী অ্যালিস ভেইডেল বাকি তিন দলের ইউক্রেন নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, জার্মানির নিরপেক্ষ থাকা উচিত। কিন্তু ম্যার্ৎস জানিয়ে দেন, ''ইউক্রেন নিয়ে আমরা নিরপেক্ষ নই, আমরা ইউক্রেনের পক্ষে।'' গ্রিন নেতা রবার্ট হাবেক জানান, ''এএফডি ছাড়া সব দলই ইউক্রেনকে সমর্থন করে।''
ছবি: Kay Nietfeld/dpa-Pool/picture alliance
অর্থনীতি প্রসঙ্গে
এই বিতর্কে অর্থনীতি ও শক্তিক্ষেত্রে সংকট রীতিমতো গুরুত্ব পায়। সিডিইউ নেতা ম্যার্ৎস বলেন, জোট সরকার তিনটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে সংকট ডেকে এনেছে। এএফডি নেত্রী ভাইডেল বলেছেন, তিনি নিরাপদ পরমাণু, কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের পক্ষে। পাশাপাশি নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার করতে হবে। হাবেকের দাবি, রাশিয়ার গ্যাস আসা বন্ধ হওয়া এবং রপ্তানি কমে যাওয়ার ফলে এই সংকট।
ছবি: Kay Nietfeld/dpa-Pool/picture alliance
8 ছবি1 | 8
সাধারণভাবে, অন্য দেশের সরকার যদি জার্মানিতে ভুয়া খবর ছড়ায় তা আইনত দণ্ডনীয় নয়। জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারেক্টিভ গবেষণা কেন্দ্রকে একথা জানায়। তবে একথাও জানানো হয়েছে যে একটি আন্তর্বিভাগীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ চালু করা হয়েছে যারা ভুয়া তথ্যের মাধ্যমে ছড়ানো বিপদগুলির দিকে নজর রাখছে।
মন্ত্রণালয় একটি সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছে যে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুয়ো তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।