রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে: অ্যামেরিকা
১০ মার্চ ২০২২
ইউক্রেনে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালাতে পারে বলে সতর্ক করল অ্যামেরিকা। হাসপাতালের বোমাবর্ষণ 'গণহত্যা' বলে ব্যাখ্যা করলেন জেলেনস্কি।
বিজ্ঞাপন
বুধবার ইউক্রেনের মারিউপলে রাশিয়া একটি হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তার অভিযোগ, পূর্বপরিকল্পনা করেই হাসপাতালে আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া। ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কারো নিহত হওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও বহু ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। যার মধ্যে গর্ভবতী নারী এবং শিশুও আছে। এখনো ধ্বংসস্তূপে বহু মানুষ আটকে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে পাড়ি জমানো বিদেশিদের কথা
প্রাণ বাঁচাতে লাখো ইউক্রেনীয় যখন দেশ ছাড়ছেন, তখন অনেক বিদেশি যাচ্ছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে৷ ছবিঘরে জানুন তাদের কথা....
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
জেলেনস্কির আহ্বান
গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি বিশ্ববাসীকে বলেন, ‘‘আপনারা ইউক্রেনের পাশে থেকে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করুন৷’ পরে’ জেলেনস্কি দাবি করেন, তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক দেশের মানুষই যুদ্ধে অংশ নিতে ইউক্রেনে আসছেন৷ এ পর্যন্ত ১৬ হাজার বিদেশি যুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ ১৬ হাজারের মধ্যে কতজন ইউক্রেনে পৌঁছেছেন তা তিনি জানাননি৷
ছবি: REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনে
এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন মাইকেল ফারকল৷ সম্প্রতি রোমে প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করার সময় জানতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বিদেশিদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তারপরই ইটালি থেকে ইউক্রেনে চলে এসেছেন ২৯ বছর বয়সি তরুণ৷ মাইকেল জানিয়েছেন, অস্ত্র হাতে নেবেন না, তার লক্ষ্য যুদ্ধেক্ষেত্রে প্যারামেডিক, অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবার করা৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
কারা আসছেন?
বিদেশ থেকে আসা ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷ তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার উপযুক্ত যারা এসেছেন, তাদের বড় একটা অংশই ইরাক বা আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নেয়া যোদ্ধা৷ নিজের দেশের সরকার এখন আর তাদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করে না বলে মনে হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষতা প্রমাণের বড় একটা সুযোগ৷ সে কারণেই নিজের দেশ থেকে ইউক্রেনে ছুটে এসেছেন৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
আনাড়িদের ভিড়
এক সময় ব্রিটেনের সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানান, জেলেনস্কির আহ্বানে সাড়া দিয়ে যারা ইউক্রেনে আসছেন, তাদের অনেকেই যুদ্ধের ময়দানে বিশেষ কোনো কাজে আসবেন না৷ তার মতে, তারা এত অনভিজ্ঞ এবং অদক্ষ যে তাদের শুধু ‘বুলেট কুড়ানোর’ কাজে লাগাতে হবে৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
অপ্রস্তুত ইউক্রেন
কয়েকজন বিদেশি যোদ্ধা জানান, যুদ্ধের নানা সরঞ্জাম এমনকি অত্যাধুনিক অস্ত্র চালাতে পারেন এম লোক খুঁজতে ‘হ্যাভ গান উইল ট্র্যাভেল’ ধরনের নাম দিয়ে ইতিমধ্যে ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খোলা হয়েছে৷ বডি আর্মার, নাইট-ভিশন গগলসের মতো জিনিসও কারো কাছে থাকলে দিয়ে যেতে বলছে গ্রুপগুলো৷ এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো যেসব অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়েছে, সেগুলো চালানোর প্রশিক্ষকও খোঁজা হচ্ছে গ্রুপগুলোর মাধ্যমে৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
অদক্ষরাও গুরুত্বপূর্ণ
লভিভ শহরে বিদেশ থেকে যুদ্ধে অংশ নিতে আসাদের তালিকা প্রণয়ন করেন রোমান শেপেলাক৷ বিদেশি যোদ্ধাদের গ্রহণ করা, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি করার প্রস্তুতি যে ইউক্রেন এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি রোমান তা স্বীকার করেন৷ তবে তার বিশ্বাস, দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে৷ অদক্ষ বিদেশিরা আসছে বলেও হতাশ নন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা যে অন্য দেশের জন্য যুদ্ধ করতে চাইছে- এটাই দারুণ ব্যাপার৷ তারাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷’’
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
6 ছবি1 | 6
অন্যদিকে, বুধবার রাতেঅ্যামেরিকা জানিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। বুধবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেস সেক্রেটারি এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি রাশিয়া অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ তুলেছে। অ্যামেরিকা সেই অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠাচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।
প্রেস সেক্রেটারির অভিযোগ, অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে রাশিয়া আসলে নিজেদের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের রাস্তা তৈরি করে রাখতে চেয়েছে। যে কোনো সময় তারা ওই অস্ত্র ইউক্রেনে ব্যবহার করতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইউক্রেনে হামলার গতি আরো বাড়াতে পারে রাশিয়া। সেখানে প্রথাগত নয়, এমন অস্ত্র রাশিয়া ব্যবহার করতে পারে।
বুধবার মারিউপলের আক্রমণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। ওই আক্রমণকে শুধু গণহত্যা নয়, যুদ্ধাপরাধ বলেও বর্ণনা করেছেন জেলেনস্কি। রাশিয়ার উপর আরো বেশি নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পক্ষেও আবেদন করেছেন তিনি। জেলেনস্কির অভিযোগ, মারিউপল কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে রাশিয়া। সেখান থেকে সাধারণ মানুষকেও বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। সামরিক ঘাঁটির বাইরেও বোমা এবং গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
তবে সুমি এবং কিয়েভের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে বুধবার প্রায় ৩৫ হাজার সাধারণ মানুষকে বার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবারও ওই রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষকে বের করা যাবে বলে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেন চাইছে, এমন আরো বেশ কয়েকটি সেফ প্যাসেজ তৈরি করতে।
বৃহস্পতিবার তুরস্কে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
এদিকে, আরো বেশ কয়েকটি সংস্থা রাশিয়া থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে। মাইনিং সংস্থা রিও টিন্টো জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে সবরকম ব্যবসায়িক সম্পর্ক তারা ছিন্ন করছে। সেখান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া হচ্ছে।