রাশিয়ার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ প্রস্তাব নেওয়া হলো ন্যাটোয়। একইসঙ্গে চীনকে বিপদের তালিকায় রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ এতবড় নিরাপত্তার সংকটে পড়েনি, বুধবার এই ভাষাতেই রাশিয়াকে আক্রমণ করেছেন ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। একইসঙ্গে তিনি ইউক্রেনকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, যতদিন যুদ্ধ চলবে, ততদিন কিয়েভকে সাহায্য করবে ন্যাটো।
যে পাঁচ উপায়ে পৃথিবী বদলে দিয়েছে যুদ্ধ
রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলা শুরুর ১০০ দিন পার হলো৷ অন্য রাষ্ট্রের সীমানায় ঢুকে এমন আক্রমণ গেল ৮০ বছরে ইউরোপে আর হয়নি৷ এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে৷ সেটি কেমন? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: South Korean Defense Ministry/Getty Images
অসংখ্য শরণার্থী
রাশিয়ার আক্রমণের পর প্রায় ৬৮ লাখ ইউক্রেনিয়ান দেশ ছেড়েছেন৷ জাতিসংঘের হিসেবে, এদের প্রায় ৩০ লাখ প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও আশ্রয় নিয়েছেন৷ জার্মানিতে সাত লাখেরও বেশি ইউক্রেনিয়ান আশ্রয় নিয়েছেন৷ আরো ৭৭ লাখ দেশের ভেতরেই ঘরছাড়া হয়েছেন৷
ছবি: Kirsty O'Connor/empics/picture alliance
খাদ্য সংকট
বিশ্বের অর্ধেক সানফ্লাওয়ার ভোজ্য তেল উৎপাদন করে ইউক্রেন৷ এছাড়া দেশটি ১৫% ভুট্টা ও ১০% গম রপ্তানি করে৷ যুদ্ধের কারণে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ কারণে এসব পণ্য উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলোও অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷ গেল মে মাস পর্যন্ত ২৩টি দেশ এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে৷
ছবি: Jelena Djukic Pejic/DW
জ্বালানি সংকট
রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্বালানি গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ৷ তারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও তৃতীয় সর্বোচ্চ কয়লা রপ্তানিকারক৷ ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে বা বন্ধ করতে একযোগে কাজ করছে ইউরোপের দেশগুলো৷ রাশিয়াও একাধিক ইউরোপীয় দেশে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে৷
ছবি: ITAR-TASS/imago
দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি
খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি সংকটের মুখে দাম বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের৷ বেড়েছে মার্কিন ডলারের দাম৷ ইউরোজোনে গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে ৮.১%৷ সারা বিশ্বেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে৷
ছবি: Emre Eser/DW
ন্যাটোর পুনর্জন্ম
রাশিয়ার আক্রমণ এককাট্টা করেছে ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোকে৷ শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকিতে ভোগা অনেক রাষ্ট্র এখন ৩০ সদস্যদেশের এই জোটে যুক্ত হবার ব্যাপারে ভাবছে৷ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এরই মধ্যে তাদের আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছে৷
ছবি: Gints Ivuskans /AFP
5 ছবি1 | 5
মাদ্রিদে শুরু হয়েছে ন্যাটোর বার্ষিক সম্মেলন। সেখানেই এই ঘোষণা করেছেন ন্যাটো প্রধান। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর ন্যাটো তাদের পরিকল্পনায় বড় বদল এনেছে। নতুন করে ন্যাটোর বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে। বস্তুত, একসময় সাবেক মার্কিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোকে অকার্যকর সংস্থা বলে সমালোচনা করেছিলেন। ন্যাটো ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছিলেন, ন্যাটোর ব্রেন ডেথ হয়েছে।
স্টলটেনবার্গ এদিন জানিয়েছেন, রাশিয়ার যুদ্ধ ন্যাটোকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে। এবারের সম্মেলনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি
এদিন ন্যাটোর 'স্ট্র্যাটেজিক কনসেপ্ট' ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সেনার সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে তিন লাখ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক জায়গায় এই সেনারা আপাতত হাই অ্যালার্টে থাকবে। একইসঙ্গে বাল্টিক সাগর অঞ্চলে এবং পোল্যান্ডে ভারি অস্ত্র সরবারহ করা হবে। যে কোনো সময় যাতে তা ব্যবহার করা যায়, তা দেখা হবে।
ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক মহড়া
সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ আরও কিছু মহড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ ন্যাটোর সদস্য ও পার্টনার রাষ্ট্রগুলোর সেনারা এতে অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: REMO CASILLI/REUTERS
সামরিক মহড়া
‘ডিফেন্ডার ইউরোপ’ ও ‘সুইফট রেসপন্স’ নামের দুটো সামরিক মহড়ায় ২০টি দেশের প্রায় ১৮ হাজার সেনা অংশ নিয়েছেন৷ পোল্যান্ড, নর্থ মেসিডোনিয়াসহ আটটি দেশে এসব মহড়া হয়েছে৷ ছবিতে নর্থ মেসিডোনিয়ায় ব্রিটিশ সেনাদের মহড়া করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: OGNEN TEOFILOVSKI/REUTERS
এস্তোনিয়ায় মহড়া
১৯৯১ সালের পর বাল্টিক দেশ এস্তোনিয়ার সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এর নাম ‘হেজহগ’৷ ১৪ দেশের প্রায় ১৫ হাজার সেনা এতে অংশ নেন৷ ছবিতে রোমানিয়ায় ‘এক্সারসাইজ ট্রোজান ফুটপ্রিন্ট’ মহড়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷ রোমানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সেনারা এতে অংশ নেন৷
ছবি: REMO CASILLI/REUTERS
আরেক বাল্টিক দেশ লিথুয়ানিয়ায় মহড়া
লিথুয়ানিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘আয়রন উল্ফ’ মহড়ায় অংশ নেন তিন হাজার সেনা৷ সঙ্গে ছিল প্রায় এক হাজার সামরিক যান৷ এর মধ্যে জার্মানির লেওপার্ড ২ ট্যাংকও ছিল৷
ছবি: REMO CASILLI/REUTERS
জার্মানি
জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ‘ভেটিনার হাইডে’ মহড়ায় অংশ নেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার সেনা৷
ছবি: FABIAN BIMMER/REUTERS
রাশিয়ার প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডে
ন্যাটোর পার্টনার দেশ ফিনল্যান্ডে ‘অ্যারো ২২’ মহড়ায় ফিনিশ সেনাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন, ব্রিটিশ, এস্তোনিয়ান ও লাটভিয়ান সেনারা৷ ছবিতে লাটভিয়ায় মহড়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: INTS KALNINS/REUTERS
পূর্ব পরিকল্পিত
ন্যাটোর মুখপাত্র ওয়ানা লুঙ্গেস্কু জানান ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু আগেই এসব মহড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷
ছবি: OGNEN TEOFILOVSKI/REUTERS
এয়ার ও মিসাইল ডিফেন্স
আগামী মাসে পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোতে ‘রামস্টাইন লিগ্যাসি’ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে৷ ২৩ দেশের সেনারা এতে অংশ নেবেন৷ এটি হবে ইউরোপের সবচেয়ে বড় এয়ার ও মিসাইল ডিফেন্স মহড়া৷
ছবি: KACPER PEMPEL/REUTERS
লাটভিয়ায় মহড়া
বাল্টিক দেশ লাটভিয়ায় মহড়ায় জার্মান ও ক্যানাডার সৈন্যরা অংশ নেন৷
ছবি: INTS KALNINS/REUTERS
8 ছবি1 | 8
ন্যাটো জানিয়েছে, যতদিন ইউক্রেনের যুদ্ধ চলবে, ততদিন ন্যাটো তাকে সাহায্য করবে। সামরিক সাহায্যের পাশাপাশি চিকিৎসা সংক্রান্ত এবং মানবিক সাহায্যও করা হবে। ইউক্রেনের সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারেও কিয়েভকে আশ্বাস দিয়েছে ন্যাটো।
ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনকে আহ্বান
এদিনের সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনকে ন্যাটোয় আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে গোটা প্রক্রিয়াটি শেষ হতে প্রায় একবছর সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। এরফলে ন্যাটোর ৫ নম্বর ধারায় যুক্ত হবে নতুন দুই দেশ। যার অর্থ, সামগ্রিক সামরিক সহায়তা পাবে তারা।
অ্যামেরিকার ঘোষণা
অ্যামেরিকা জানিয়েছে, তারাও ইউরোপে সেনার সংখ্যা বাড়াবে। জল, স্থল এবং আকাশে তারা শক্তিবৃদ্ধি করবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, পোল্যান্ডে নতুন সেনা হেডকোয়ার্টার খুলবে অ্যামেরিকা। স্পেনে দুইটি নতুন যুদ্ধজাহাজ পাঠানো হবে এবং যুক্তরাজ্য অঞ্চলে অতিরিক্ত ফাইটার জেট স্কোয়াড্রন পাঠানো হবে।