1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে রাজনীতি

গোলাম মোর্তোজা২৩ মার্চ ২০১৬

আর্থিক ও চারিত্রিকভাবে ভয়াবহরকমের দূষণীয় মানুষ এরশাদ৷ রাষ্ট্র ক্ষমতা জোর করে দখল করেছিলেন৷ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাজনীতিকে, রাজনীতিবিদদের দূষিত করেছেন৷ আর এই দূষণের অংশ হিসেবে ব্যবহার করেছেন ধর্মকে৷

ঢাকায় একটি মসজিদের বাইরে হেফাজতের সমর্থকরা
ছবি: picture-alliance/AP Photo

ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করেন, তাদেরকেও টেক্কা দিয়ে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেছেন এরশাদ৷ বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান৷ তারা ধর্ম পালন করেন, হৃদয়ে ধারণ করেন৷ অতি সাধারণ দরিদ্র কৃষক-শ্রমিক ধর্মীয়ভাবে উগ্র নন৷ ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাদের ভেতরে উগ্রতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন৷ এর জন্যে তারা কিছু প্রপাগান্ডামূলক কৌশল অবলম্বন করেন৷

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, পরবর্তী রিট এবং ২৮ বছর পর সেই রিটের শুনানিকে কেন্দ্র করে আবারো বাংলাদেশের রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠছে৷ তাই সেই প্রেক্ষিতেই কিছু কথা:

১. যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াত কোণঠাসা৷ ইসলামি ঐক্যজোটসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ এক ধরনের নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিয়েছে৷ এই সুযোগে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম৷ হেফাজত কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক সংগঠন৷ এরা একটা সংগঠিত শক্তি৷ শাপলা চত্বরের সমাবেশ এবং বিএনপির সমর্থন হেফাজতকে বড়ভাবে আলোচনায় আনে৷ সরকার কঠোরভাবে শাপলা চত্বরে তাদের দমন করে৷ একই সঙ্গে ‘ম্যানেজ' করার প্রক্রিয়াও শুরু করে৷ রেলের জমিসহ আরও নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সরকার হেফাজতকে ম্যানেজ করে৷ সেই সময় থেকেই হেফাজতকে সব সময় হাতে রাখছে৷ আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এবং এজেন্সির মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এসেছে সরকার৷ আর সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকে সুযোগ-সুবিধা নেয়ার রাজনীতি করছে হেফাজত৷

২. রাষ্ট্রধর্ম মামলার রিটের প্রেক্ষিতে তারা আবার ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা করছে৷ প্রকাশ্যেই তারা হুমকি দিয়ে বলছে, রায় যদি তাদের পক্ষে না যায়, তবে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে৷ লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে৷ গত ২২ মার্চ রাতে একাত্তর টেলিভিশনে কথা হয় একজন হেফাজত নেতার সঙ্গে৷ তার আমার সঙ্গে যে তর্ক হয় তা এমন –

হেফাজত নেতা বলেন, ‘দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আমাদের সঙ্গে৷ তারা চায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকতে হবে৷ তা না হলে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে৷'
আমি বললাম, ৯০ শতাংশ মানুষ আপনাদের সঙ্গে আছে, তা কীভাবে বুঝবেন? আমি তো আপনাদের সঙ্গে নাই৷ আমি একজন মুসলমান৷
উত্তরে তিনি বললেন, ‘আপনি তো মুসলমান নন৷'
আমি মুসলমান নই, আপনি তা কীভাবে বলছেন? আপনি কি তা বলতে পারেন? আমি তো আপনার চেয়ে বড় মুসলমান৷
হেফাজত নেতা বলেন, ‘আমার চেয়ে বড় হতে পারেন তবে মুসলমান নন৷'
আমি কেন মুসলমান নই?
প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, ‘আপনি মুসলমান নন আমি তা বলিনি৷' অর্থাৎ কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি নিজের বলা কথা অস্বীকার করলেন৷

ঘটনাটি উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, এরা পবিত্র ইসলাম ধর্ম ব্যবহার করে কিভাবে অসত্য প্রপাগান্ডা চালায় তার ছোট্ট একটি নমুনা হিসেবে৷

চারিত্রিকভাবে ভয়াবহরকমের দূষণীয় মানুষ এরশাদ: গোলাম মোর্তোজাছবি: STR/AFP/Getty Images

৩. এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান৷ ১৯৮৮ সালের আগে রাষ্ট্রধর্ম যখন ইসলাম ছিল না, তখনও এ দেশের মানুষ ধর্ম পালন করতেন৷ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার পরেও মানুষ ধর্ম পালন করেন৷ ধর্ম পালনে আগেও কোনো সমস্যা ছিল না, এখনও নেই৷ সব ধর্ম-বর্ণের মানুষকে নিয়ে রাষ্ট্র৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম৷ তারা অধিকারও বেশি ভোগ করেন৷ আলাদা করে রাষ্ট্রের কোনো ধর্মীয় পরিচয়ের প্রয়োজন হয় না৷ রাষ্ট্রের ধর্মীয় পরিচয় না থাকলে, কোনো ক্ষতি হয় না৷ ধর্মীয় পরিচয় থাকলে, অন্য ধর্মের (সংখ্যায় তারা কম হলেও) মানুষ নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবেন৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দায়িত্ব সংখ্যায় যারা কম তাদের দেখে রাখা৷ নিজের অধিকারের নামে তাদের মনে ভীতি তৈরি করা নয়৷ বর্তমানে বাংলাদেশে ভীতি তৈরির সংস্কৃতি চলছে৷

গোলাম মোর্তোজা, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এবং টিভি টকশো-র মডারেটরছবি: Golam Mortoza

৪. হেফাজত বিষয়টি নিয়ে এমন প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে যে, যারা রাষ্ট্রধর্মের পক্ষে তাদের সঙ্গে একমত হবেন না, তারাই ধর্ম বিরোধী বা তারা মুসলমান নন৷ সরকার হেফাজতকে তুষ্ট রাখতে চায়৷ ফলে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির হুমকি দিতে পারছে৷ তারা জানে যে সরকার তাদের কিছু বলবে না৷ দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ সরকারের কাছে নিজেদের বিবেক বিক্রি করে দিয়েছেন৷ হেফাজতের বিরুদ্ধে তারা কোনো কথা বা সমাবেশ করুক, তা সরকার চায় না৷ ফলে বুদ্ধিজীবীরা নিরব থাকছেন৷ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সরকারের তল্পিবাহক, তারাও চুপ৷

এমন অবস্থায় আদালতের রিটের শুনানতে কেন্দ্র করে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে হেফাজত৷ বিএনপি চাইছে হেফাজত বিশৃঙ্খলা তৈরি করুক৷ তাহলে সরকার বিপদে পড়বে৷ সরকার চাইছে, কোনো অবস্থাতেই যেন হেফাজত মাঠে নামার পরিবেশ না পায়৷ হেফাজত তুষ্ট করার এই নীতিতে আটকে গেছে
বাংলাদেশ. ফলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বিষয়টির সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ৷ আমার মনে হয়, রাজনীতির উপকরণ হিসেবেই থেকে যাবে তা৷

বন্ধু, আপনি কি গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ