আর্থিক ও চারিত্রিকভাবে ভয়াবহরকমের দূষণীয় মানুষ এরশাদ৷ রাষ্ট্র ক্ষমতা জোর করে দখল করেছিলেন৷ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাজনীতিকে, রাজনীতিবিদদের দূষিত করেছেন৷ আর এই দূষণের অংশ হিসেবে ব্যবহার করেছেন ধর্মকে৷
বিজ্ঞাপন
ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করেন, তাদেরকেও টেক্কা দিয়ে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেছেন এরশাদ৷ বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান৷ তারা ধর্ম পালন করেন, হৃদয়ে ধারণ করেন৷ অতি সাধারণ দরিদ্র কৃষক-শ্রমিক ধর্মীয়ভাবে উগ্র নন৷ ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাদের ভেতরে উগ্রতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন৷ এর জন্যে তারা কিছু প্রপাগান্ডামূলক কৌশল অবলম্বন করেন৷
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, পরবর্তী রিট এবং ২৮ বছর পর সেই রিটের শুনানিকে কেন্দ্র করে আবারো বাংলাদেশের রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠছে৷ তাই সেই প্রেক্ষিতেই কিছু কথা:
ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে পৃথককরণ
তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের আমল থেকে ‘‘ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছেদ’’ কথাটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চালু৷ বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এই সমস্যার মূল্যায়ন ও সমাধান আজও আলাদা৷ তার কিছু নমুনা৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
অস্ট্রেলিয়া
কমনওয়েলথ দেশটির সংবিধানে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা বা সরকারি পদ গ্রহণের জন্য কোনো ধর্ম পরীক্ষা নিষেধ করা আছে৷ অপরদিকে যে কোনো ধর্ম মুক্তভাবে পালন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ (ছবিতে সিডনির সংসদ ভবনের উপর অস্ট্রেলিয়ার লোগো)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Coch
ব্রাজিল
ব্রাজিলের বর্তমান সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে; কোনো রাষ্ট্রীয় গির্জা প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ‘‘জোট গঠন বা নির্ভরতা’’ নিষিদ্ধ৷ (ছবিতে ব্রাজিলের কনগ্রেসো নাসিওনাল বা জাতীয় কংগ্রেস, যার দুই কক্ষ হলো সেনেট এবং চেম্বার অফ ডেপুটিজ)৷
ছবি: Voishmel/AFP/Getty Images
চীন
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো সরকারি বিভাগ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নাগরিকদের কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতে বা না করতে বাধ্য করতে পারবে না; এছাড়া যে সব নাগরিক কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন অথবা করেন না, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা চলবে না৷’’ (ছবিতে বেইজিং-এর গ্রেট হল অফ দ্য পিপল, যেখানে প্রতিবছর ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/How Hwee Young
ফ্রান্স
ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদকে ফরাসিতে বলা হয় ‘লাইসিতে’৷ ফ্রান্সে ধর্ম ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পরস্পরের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একদিকে যেমন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, অপরদিকে সরকারি ক্ষমতাকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রভাবমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ (ছবিতে প্যারিসের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা জাতীয় সম্মেলন)৷
ছবি: picture-alliance/ZB/M. Tödt
জার্মানি
জার্মান সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যদিও জার্মানিতে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে পুরোপুরি বিচ্ছেদ নেই৷ সরকারিভাবে স্বীকৃত গির্জাগুলিকে পাবলিক কর্পোরেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়, তাদের প্রাপ্য কিছু কিছু কর সরকার আদায় করে দেন – তবে বিনামূল্যে নয়৷ ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয় নয়৷ (ছবিতে বার্লিনের বুন্ডেসটাগ বা জার্মান সংসদ)৷
ছবি: imago/Schöning
জাপান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন দখলদারির সময় ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মার্কিন ধ্যানধারণা জাপানে আরোপিত হয়৷ জাপানের সংবিধানে ধর্মপালনের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা হয়েছে, অপরদিকে সরকার ধর্মপালনের জন্য কোনোরকম চাপ দিতে পারবেন না, অথবা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে সরকারি অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না৷ (ছবিতে টোকিও-র সংসদভবন)৷
ছবি: Reuters
সুইজারল্যান্ড
সুইশ কনফেডারেশনের ফেডারাল সংবিধানে ‘‘ধর্ম ও বিবেকের স্বাধীনতা’’-র গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে৷ বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, ‘‘কোনো ব্যক্তিকে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ে যোগ দিতে বা অঙ্গ হতে, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বা ধর্মীয় নির্দেশ অনুসরণ করতে বাধ্য করা চলবে না’’৷ (ছবিতে বার্ন শহরের বুন্ডেসহাউস বা ফেডারাল প্যালেস, যেখানে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন বসে)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Klaunzer
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের প্রধান হলেন ব্রিটিশ নৃপতি স্বয়ং, তিনিই গির্জার উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়োগ করেন৷ হাউস অফ লর্ডস-এও ২৬ জন বিশপের আসন আছে৷ সব সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত, যুক্তরাজ্যে সরকারি শাসনও অপেক্ষাকৃতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ৷ ব্রিটেনের অলিখিত সংবিধান অনুযায়ী অপরাপর ধর্মীয় গোষ্ঠীও ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ (ছবিতে প্যালেস অফ ওয়েস্টমিনস্টার)৷
ছবি: Mohammad Karimi
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গির্জা ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সম্পর্কে জেফারসনের প্রখ্যাত উক্তি মার্কিন সংবিধানে উল্লিখিত নেই৷ ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টে বলা হয়েছে যে, ‘‘(মার্কিন) কংগ্রেস কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে, বা মুক্তভাবে ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে কোনো আইন প্রণয়ন করবে না’’৷ (ছবিতে ক্যাপিটল হিল-এ মার্কিন কংগ্রেসের আসন)৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
১. যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াত কোণঠাসা৷ ইসলামি ঐক্যজোটসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ এক ধরনের নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিয়েছে৷ এই সুযোগে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম৷ হেফাজত কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক সংগঠন৷ এরা একটা সংগঠিত শক্তি৷ শাপলা চত্বরের সমাবেশ এবং বিএনপির সমর্থন হেফাজতকে বড়ভাবে আলোচনায় আনে৷ সরকার কঠোরভাবে শাপলা চত্বরে তাদের দমন করে৷ একই সঙ্গে ‘ম্যানেজ' করার প্রক্রিয়াও শুরু করে৷ রেলের জমিসহ আরও নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সরকার হেফাজতকে ম্যানেজ করে৷ সেই সময় থেকেই হেফাজতকে সব সময় হাতে রাখছে৷ আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এবং এজেন্সির মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এসেছে সরকার৷ আর সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকে সুযোগ-সুবিধা নেয়ার রাজনীতি করছে হেফাজত৷
২. রাষ্ট্রধর্ম মামলার রিটের প্রেক্ষিতে তারা আবার ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা করছে৷ প্রকাশ্যেই তারা হুমকি দিয়ে বলছে, রায় যদি তাদের পক্ষে না যায়, তবে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে৷ লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে৷ গত ২২ মার্চ রাতে একাত্তর টেলিভিশনে কথা হয় একজন হেফাজত নেতার সঙ্গে৷ তার আমার সঙ্গে যে তর্ক হয় তা এমন –
যেসব দেশে রাষ্ট্রপ্রধানদের নির্দিষ্ট ধর্মের হতে হয়
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’ বিশ্বের সব দেশের সংবিধান বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ৩০টি দেশে কেউ রাষ্ট্রপ্রধান হতে হলে তাঁকে নির্দিষ্ট একটি ধর্মের হতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ABACAPRESS/E. Vandeville
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান
‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর বিশ্লেষণ বলছে, ১৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে মুসলমান হতে হবে৷ এগুলো হচ্ছে আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনাই, ইরান, জর্ডান, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সিরিয়া, টিউনিশিয়া ও ইয়েমেন৷
ছবি: Reuters/J. Roberts
ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস ইন্দোনেশিয়ায়৷ তবে সেদেশের সংবিধান বলছে, যিনি রাষ্ট্রপ্রধান হবেন তাঁকে অবশ্যই রাষ্ট্রের মতাদর্শে, যা পঞ্চশিলা নামে পরিচিত, বিশ্বাসী হতে হবে৷ ছবিতে ১৯৬৮ সালে দেশটির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুহার্তোকে শপথ নিতে দেখা যাচ্ছে৷ পঞ্চশিলার অর্থ জানতে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Public Domain
লেবানন
জনসংখ্যার প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ মুসলিম৷ এর মধ্যে ২৭ শতাংশ সুন্নি ও বাকি ২৭ শতাংশ শিয়া৷ খ্রিষ্টান জনগণের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০ শতাংশ৷ এর মধ্যে ২১ শতাংশ ম্যারোনিট ক্যাথলিক ও ৮ শতাংশ গ্রিক অর্থোডক্স৷ এবার বলুন তো রাষ্ট্রপ্রধানকে কোন ধর্মের হতে হবে? সংবিধান বলছে, অবশ্যই ম্যারোনিট ক্যাথলিক৷ আর প্রধানমন্ত্রীকে হতে হবে অবশ্যই সুন্নি মুসলমান৷ রাষ্ট্রপ্রধান খ্রিষ্টান হতে হবে এমন শর্ত আছে অ্যান্ডোরাতেও৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Haidar
রাজা বা রানিকে নির্দিষ্ট ধর্মের হতে হবে
যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সহ কমনওয়েলথভুক্ত ১৬টি দেশের রাজা অথবা রানিকে (বর্তমানে যেমন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ) অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি ধর্মের হতে হবে৷ রানির পদ অলংকারিক হলেও তিনি সেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান৷ ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেন এর ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/C.Jackson
বৌদ্ধ রাষ্ট্রপ্রধান
এমন বিধান আছে দু’টি দেশে৷ ভুটান আর থাইল্যান্ডে৷ ছবিতে ভুটানের বর্তমান রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও রানি গিয়ালতসুয়েন জেতসুন পেমা ওয়াংচুককে দেখা যাচ্ছে৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদনটি পড়তে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Royal Office For Media, Kingdom of Bhutan
ধর্মীয় নেতাদের মানা
বলিভিয়া, মেক্সিকো ও এল সালভেদর সহ আটটি দেশের সংবিধান বলছে, ধর্মীয় নেতারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না৷ অন্য দেশগুলো হচ্ছে মিয়ানমার, কস্টা রিকা, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া ও ভেনিজুয়েলা৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: picture-alliance/ABACAPRESS/E. Vandeville
6 ছবি1 | 6
হেফাজত নেতা বলেন, ‘দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আমাদের সঙ্গে৷ তারা চায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকতে হবে৷ তা না হলে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে৷' আমি বললাম, ৯০ শতাংশ মানুষ আপনাদের সঙ্গে আছে, তা কীভাবে বুঝবেন? আমি তো আপনাদের সঙ্গে নাই৷ আমি একজন মুসলমান৷ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আপনি তো মুসলমান নন৷' আমি মুসলমান নই, আপনি তা কীভাবে বলছেন? আপনি কি তা বলতে পারেন? আমি তো আপনার চেয়ে বড় মুসলমান৷ হেফাজত নেতা বলেন, ‘আমার চেয়ে বড় হতে পারেন তবে মুসলমান নন৷' আমি কেন মুসলমান নই? প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, ‘আপনি মুসলমান নন আমি তা বলিনি৷' অর্থাৎ কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি নিজের বলা কথা অস্বীকার করলেন৷
ঘটনাটি উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, এরা পবিত্র ইসলাম ধর্ম ব্যবহার করে কিভাবে অসত্য প্রপাগান্ডা চালায় তার ছোট্ট একটি নমুনা হিসেবে৷
৩. এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান৷ ১৯৮৮ সালের আগে রাষ্ট্রধর্ম যখন ইসলাম ছিল না, তখনও এ দেশের মানুষ ধর্ম পালন করতেন৷ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার পরেও মানুষ ধর্ম পালন করেন৷ ধর্ম পালনে আগেও কোনো সমস্যা ছিল না, এখনও নেই৷ সব ধর্ম-বর্ণের মানুষকে নিয়ে রাষ্ট্র৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম৷ তারা অধিকারও বেশি ভোগ করেন৷ আলাদা করে রাষ্ট্রের কোনো ধর্মীয় পরিচয়ের প্রয়োজন হয় না৷ রাষ্ট্রের ধর্মীয় পরিচয় না থাকলে, কোনো ক্ষতি হয় না৷ ধর্মীয় পরিচয় থাকলে, অন্য ধর্মের (সংখ্যায় তারা কম হলেও) মানুষ নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবেন৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দায়িত্ব সংখ্যায় যারা কম তাদের দেখে রাখা৷ নিজের অধিকারের নামে তাদের মনে ভীতি তৈরি করা নয়৷ বর্তমানে বাংলাদেশে ভীতি তৈরির সংস্কৃতি চলছে৷
৪. হেফাজত বিষয়টি নিয়ে এমন প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে যে, যারা রাষ্ট্রধর্মের পক্ষে তাদের সঙ্গে একমত হবেন না, তারাই ধর্ম বিরোধী বা তারা মুসলমান নন৷ সরকার হেফাজতকে তুষ্ট রাখতে চায়৷ ফলে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির হুমকি দিতে পারছে৷ তারা জানে যে সরকার তাদের কিছু বলবে না৷ দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ সরকারের কাছে নিজেদের বিবেক বিক্রি করে দিয়েছেন৷ হেফাজতের বিরুদ্ধে তারা কোনো কথা বা সমাবেশ করুক, তা সরকার চায় না৷ ফলে বুদ্ধিজীবীরা নিরব থাকছেন৷ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সরকারের তল্পিবাহক, তারাও চুপ৷
এমন অবস্থায় আদালতের রিটের শুনানতে কেন্দ্র করে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে হেফাজত৷ বিএনপি চাইছে হেফাজত বিশৃঙ্খলা তৈরি করুক৷ তাহলে সরকার বিপদে পড়বে৷ সরকার চাইছে, কোনো অবস্থাতেই যেন হেফাজত মাঠে নামার পরিবেশ না পায়৷ হেফাজত তুষ্ট করার এই নীতিতে আটকে গেছে বাংলাদেশ. ফলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বিষয়টির সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ৷ আমার মনে হয়, রাজনীতির উপকরণ হিসেবেই থেকে যাবে তা৷
বন্ধু, আপনি কি গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিবছর যেসব দেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে তার তালিকা প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রকাশিত সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য থাকছে৷
ছবি: DW
প্রথম: সিরিয়া
সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে৷
ছবি: Reuters/SANA
দ্বিতীয়: সোমালিয়া
সরকারের সঙ্গে আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাত এখনও চলছে৷ আর এর শিকার হচ্ছে বান্টু (বেশিরভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) ও বেনাদিরি (বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী) গোষ্ঠীর মানুষজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Warsame
তৃতীয়: সুদান
দেশটির দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী নন-আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর খার্তুম সরকারের নিপীড়নের অভিযোগে দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০০৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেটি এখনও চলছে৷ ফলে দারফুরে বসবাসকারী ফুর, জাঘাওয়া, মাসালিট সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষদের জীবন সংকটে রয়েছে৷
ছবি: GetttyImages/AFP/C. Lomodon
চতুর্থ: আফগানিস্তান
বিদেশি সৈন্য চলে যাবার পর সেখানে আবারও তালেবানের শক্তি বেড়েছে৷ ফলে হাজারা, পশতুন, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন, বেলুচি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতনের আশঙ্কা বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Aref Karimi
পঞ্চম: ইরাক
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ তারপরও সেখানে শিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের জীবন বিপদমুক্ত নয়৷ সংকটে রয়েছে সুন্নি, কুর্দ, তুর্কমেন, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি, শাবাক, বাহাই, ফিলিস্তনি সহ অন্যান্যদের জীবনও৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
ষষ্ঠ: ডিআর কঙ্গো
স্থানীয় মায়ি-মায়ি মিলিশিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডার বিদ্রোহী এবং কাতাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে মানুষের প্রাণ যাওয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে সংকটে আছে হেমা, লেন্ডু, হুতু, লুবা, লুন্ডা, টুটসি, বাটওয়া সহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর জনগণ৷
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় সংকটে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন৷ এছাড়া কচিন, কারেনি, কারেন, মন, রাখাইন, শান, চিন এবং ওয়া জাতির জনগণও ভালো নেই সেখানে৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ, ভারতের অবস্থান
‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’-এর তালিকায় বাংলাদেশ ৪১তম আর ভারত ৫৪তম অবস্থানে আছে৷ বাংলাদেশে আহমদিয়া, হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতির লোকেদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ আর ভারতে আসামিজ, বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উপজাতি এবং কাশ্মিরী, শিখ, মুসলিম ও দলিতরা হুমকির মুখে আছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷