সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ অথচ শুরুতে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের কোনো বিধান ছিল না৷ বরং সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা৷ কিন্তু ১৯৮৮ সালে এরশাদের শানমালে সংবিধানের চরিত্র পাল্টে দেয়া হয়৷
বিজ্ঞাপন
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়, যা কার্যকর হয় ঐ বছরেরই ১৬ ডিসেম্বর থেকে৷ সেই সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি ছিল – ১. জাতীয়তাবাদ, ২. গণতন্ত্র, ৩. সমাজতন্ত্র এবং ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা৷ অর্থাৎ সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা৷
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়৷ এরপর ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান৷ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনার আগেই ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম'(দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম) – এই কথাটি সংযোজন করা হয়৷
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিবছর যেসব দেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে তার তালিকা প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রকাশিত সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য থাকছে৷
ছবি: DW
প্রথম: সিরিয়া
সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে৷
ছবি: Reuters/SANA
দ্বিতীয়: সোমালিয়া
সরকারের সঙ্গে আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাত এখনও চলছে৷ আর এর শিকার হচ্ছে বান্টু (বেশিরভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) ও বেনাদিরি (বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী) গোষ্ঠীর মানুষজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Warsame
তৃতীয়: সুদান
দেশটির দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী নন-আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর খার্তুম সরকারের নিপীড়নের অভিযোগে দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০০৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেটি এখনও চলছে৷ ফলে দারফুরে বসবাসকারী ফুর, জাঘাওয়া, মাসালিট সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষদের জীবন সংকটে রয়েছে৷
ছবি: GetttyImages/AFP/C. Lomodon
চতুর্থ: আফগানিস্তান
বিদেশি সৈন্য চলে যাবার পর সেখানে আবারও তালেবানের শক্তি বেড়েছে৷ ফলে হাজারা, পশতুন, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন, বেলুচি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতনের আশঙ্কা বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Aref Karimi
পঞ্চম: ইরাক
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ তারপরও সেখানে শিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের জীবন বিপদমুক্ত নয়৷ সংকটে রয়েছে সুন্নি, কুর্দ, তুর্কমেন, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি, শাবাক, বাহাই, ফিলিস্তনি সহ অন্যান্যদের জীবনও৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
ষষ্ঠ: ডিআর কঙ্গো
স্থানীয় মায়ি-মায়ি মিলিশিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডার বিদ্রোহী এবং কাতাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে মানুষের প্রাণ যাওয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে সংকটে আছে হেমা, লেন্ডু, হুতু, লুবা, লুন্ডা, টুটসি, বাটওয়া সহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর জনগণ৷
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় সংকটে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন৷ এছাড়া কচিন, কারেনি, কারেন, মন, রাখাইন, শান, চিন এবং ওয়া জাতির জনগণও ভালো নেই সেখানে৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ, ভারতের অবস্থান
‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’-এর তালিকায় বাংলাদেশ ৪১তম আর ভারত ৫৪তম অবস্থানে আছে৷ বাংলাদেশে আহমদিয়া, হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতির লোকেদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ আর ভারতে আসামিজ, বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উপজাতি এবং কাশ্মিরী, শিখ, মুসলিম ও দলিতরা হুমকির মুখে আছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
তারপর ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চরিত্রটিই পরিবর্তন করে দেন তখনকার স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ৷ তাঁর শাসনামলে সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ সংবিধানের ঐ অষ্টম সংশোধনীতে বলা হয়, ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে৷''
পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হলেও, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এখনো বহাল আছে৷ তাই সেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের জন্যই এখন উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলছে, যা দায়ের করা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে৷ অর্থাৎ যখন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে সংযোজন করা হয়, সে বছরই৷
জগলুল হায়দার
২৭ বছর আগে হাইকোর্টে প্রথম এ বিষয়ে রিট আবেদন করার পর, পাঁচবছর আগে আরো একটি সম্পূরক রিট হয়৷ সেই দু'টি রিটের শুনানি একসঙ্গে করা হচ্ছে বলে রিটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক ডয়চে ভেলেকে জানান৷
রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে তখন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন দেশের ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক৷ তাঁদের মধ্যে ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল, ড. কামাল উদ্দিন হোসেন, কে এম সোবহান, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সিআর দত্ত প্রমূখ৷ তখনই আদালত রুল ইস্যু করে৷ এরপর ২০১১ সালে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলে আরেকটি সম্পূরক রিট হয় হাইকোর্টে এবং তাতেও রুল ইস্যু হয়৷
আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দু'টি রিট এক করে শুনানি শুরু হয়েছে হাইকোর্টের তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে৷ বিচারপতি নাইমা হায়দার এই বেঞ্চের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ চলতি মাসের ২৭ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে৷ মতামতের জন্য আদালত ‘এমিকাস কিউরি' নিয়োগ দিয়েছে৷''
জগলুল হায়দার বলেন, ‘‘আমাদের আবেদনের মূল কথা হলো, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার মাধ্যমে সংবিধানের অসাম্প্রদয়িক চরিত্রকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে৷''
ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে পৃথককরণ
তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের আমল থেকে ‘‘ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছেদ’’ কথাটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চালু৷ বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এই সমস্যার মূল্যায়ন ও সমাধান আজও আলাদা৷ তার কিছু নমুনা৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
অস্ট্রেলিয়া
কমনওয়েলথ দেশটির সংবিধানে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা বা সরকারি পদ গ্রহণের জন্য কোনো ধর্ম পরীক্ষা নিষেধ করা আছে৷ অপরদিকে যে কোনো ধর্ম মুক্তভাবে পালন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ (ছবিতে সিডনির সংসদ ভবনের উপর অস্ট্রেলিয়ার লোগো)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Coch
ব্রাজিল
ব্রাজিলের বর্তমান সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে; কোনো রাষ্ট্রীয় গির্জা প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ‘‘জোট গঠন বা নির্ভরতা’’ নিষিদ্ধ৷ (ছবিতে ব্রাজিলের কনগ্রেসো নাসিওনাল বা জাতীয় কংগ্রেস, যার দুই কক্ষ হলো সেনেট এবং চেম্বার অফ ডেপুটিজ)৷
ছবি: Voishmel/AFP/Getty Images
চীন
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো সরকারি বিভাগ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নাগরিকদের কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতে বা না করতে বাধ্য করতে পারবে না; এছাড়া যে সব নাগরিক কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন অথবা করেন না, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা চলবে না৷’’ (ছবিতে বেইজিং-এর গ্রেট হল অফ দ্য পিপল, যেখানে প্রতিবছর ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/How Hwee Young
ফ্রান্স
ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদকে ফরাসিতে বলা হয় ‘লাইসিতে’৷ ফ্রান্সে ধর্ম ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পরস্পরের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একদিকে যেমন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, অপরদিকে সরকারি ক্ষমতাকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রভাবমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ (ছবিতে প্যারিসের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা জাতীয় সম্মেলন)৷
ছবি: picture-alliance/ZB/M. Tödt
জার্মানি
জার্মান সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যদিও জার্মানিতে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে পুরোপুরি বিচ্ছেদ নেই৷ সরকারিভাবে স্বীকৃত গির্জাগুলিকে পাবলিক কর্পোরেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়, তাদের প্রাপ্য কিছু কিছু কর সরকার আদায় করে দেন – তবে বিনামূল্যে নয়৷ ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয় নয়৷ (ছবিতে বার্লিনের বুন্ডেসটাগ বা জার্মান সংসদ)৷
ছবি: imago/Schöning
জাপান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন দখলদারির সময় ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মার্কিন ধ্যানধারণা জাপানে আরোপিত হয়৷ জাপানের সংবিধানে ধর্মপালনের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা হয়েছে, অপরদিকে সরকার ধর্মপালনের জন্য কোনোরকম চাপ দিতে পারবেন না, অথবা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে সরকারি অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না৷ (ছবিতে টোকিও-র সংসদভবন)৷
ছবি: Reuters
সুইজারল্যান্ড
সুইশ কনফেডারেশনের ফেডারাল সংবিধানে ‘‘ধর্ম ও বিবেকের স্বাধীনতা’’-র গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে৷ বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, ‘‘কোনো ব্যক্তিকে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ে যোগ দিতে বা অঙ্গ হতে, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বা ধর্মীয় নির্দেশ অনুসরণ করতে বাধ্য করা চলবে না’’৷ (ছবিতে বার্ন শহরের বুন্ডেসহাউস বা ফেডারাল প্যালেস, যেখানে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন বসে)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Klaunzer
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের প্রধান হলেন ব্রিটিশ নৃপতি স্বয়ং, তিনিই গির্জার উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়োগ করেন৷ হাউস অফ লর্ডস-এও ২৬ জন বিশপের আসন আছে৷ সব সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত, যুক্তরাজ্যে সরকারি শাসনও অপেক্ষাকৃতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ৷ ব্রিটেনের অলিখিত সংবিধান অনুযায়ী অপরাপর ধর্মীয় গোষ্ঠীও ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ (ছবিতে প্যালেস অফ ওয়েস্টমিনস্টার)৷
ছবি: Mohammad Karimi
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গির্জা ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সম্পর্কে জেফারসনের প্রখ্যাত উক্তি মার্কিন সংবিধানে উল্লিখিত নেই৷ ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টে বলা হয়েছে যে, ‘‘(মার্কিন) কংগ্রেস কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে, বা মুক্তভাবে ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে কোনো আইন প্রণয়ন করবে না’’৷ (ছবিতে ক্যাপিটল হিল-এ মার্কিন কংগ্রেসের আসন)৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানের মূল নীতি পরিবর্তন করা যায় না, যা করা হয়েছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে স্থান দিয়ে৷''
জানা গেছে, এই রিট আবেদনটি অনেক সময় পর হলেও শুনানির কার্যতালিকায় আসায় জীবিত রিটকারীরা আবার আশান্বিত হয়েছেন৷ তাঁরা মনে করছেন, এই রিটের নিষ্পত্তির মাধ্যমে সংবিধানের সাম্প্রদয়িক চরিত্রের অবসান ঘটবে৷
অ্যাডভোকেট এ কে এম জগলুল হায়দারের কথায়, ‘‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২-এর সংবিধানে এখনো আমরা পুরোপুরি ফিরে যেতে পারিনি৷ ফিরে যেতে হলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করতে হবে৷ আমরা আশা করি আদালত থেকে সেই রায় পাবো৷''
আপনি কি অ্যাডভোকেট এ কে এম জগলুল হায়দারের সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷
যেসব দেশে রাষ্ট্রপ্রধানদের নির্দিষ্ট ধর্মের হতে হয়
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’ বিশ্বের সব দেশের সংবিধান বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ৩০টি দেশে কেউ রাষ্ট্রপ্রধান হতে হলে তাঁকে নির্দিষ্ট একটি ধর্মের হতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ABACAPRESS/E. Vandeville
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান
‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর বিশ্লেষণ বলছে, ১৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে মুসলমান হতে হবে৷ এগুলো হচ্ছে আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনাই, ইরান, জর্ডান, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সিরিয়া, টিউনিশিয়া ও ইয়েমেন৷
ছবি: Reuters/J. Roberts
ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস ইন্দোনেশিয়ায়৷ তবে সেদেশের সংবিধান বলছে, যিনি রাষ্ট্রপ্রধান হবেন তাঁকে অবশ্যই রাষ্ট্রের মতাদর্শে, যা পঞ্চশিলা নামে পরিচিত, বিশ্বাসী হতে হবে৷ ছবিতে ১৯৬৮ সালে দেশটির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুহার্তোকে শপথ নিতে দেখা যাচ্ছে৷ পঞ্চশিলার অর্থ জানতে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Public Domain
লেবানন
জনসংখ্যার প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ মুসলিম৷ এর মধ্যে ২৭ শতাংশ সুন্নি ও বাকি ২৭ শতাংশ শিয়া৷ খ্রিষ্টান জনগণের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০ শতাংশ৷ এর মধ্যে ২১ শতাংশ ম্যারোনিট ক্যাথলিক ও ৮ শতাংশ গ্রিক অর্থোডক্স৷ এবার বলুন তো রাষ্ট্রপ্রধানকে কোন ধর্মের হতে হবে? সংবিধান বলছে, অবশ্যই ম্যারোনিট ক্যাথলিক৷ আর প্রধানমন্ত্রীকে হতে হবে অবশ্যই সুন্নি মুসলমান৷ রাষ্ট্রপ্রধান খ্রিষ্টান হতে হবে এমন শর্ত আছে অ্যান্ডোরাতেও৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Haidar
রাজা বা রানিকে নির্দিষ্ট ধর্মের হতে হবে
যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সহ কমনওয়েলথভুক্ত ১৬টি দেশের রাজা অথবা রানিকে (বর্তমানে যেমন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ) অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি ধর্মের হতে হবে৷ রানির পদ অলংকারিক হলেও তিনি সেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান৷ ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেন এর ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/C.Jackson
বৌদ্ধ রাষ্ট্রপ্রধান
এমন বিধান আছে দু’টি দেশে৷ ভুটান আর থাইল্যান্ডে৷ ছবিতে ভুটানের বর্তমান রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও রানি গিয়ালতসুয়েন জেতসুন পেমা ওয়াংচুককে দেখা যাচ্ছে৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদনটি পড়তে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Royal Office For Media, Kingdom of Bhutan
ধর্মীয় নেতাদের মানা
বলিভিয়া, মেক্সিকো ও এল সালভেদর সহ আটটি দেশের সংবিধান বলছে, ধর্মীয় নেতারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না৷ অন্য দেশগুলো হচ্ছে মিয়ানমার, কস্টা রিকা, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া ও ভেনিজুয়েলা৷ (প্রতীকী ছবি)