1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবিধানে থেকে যাবে রাষ্ট্রধর্ম?

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২২ মার্চ ২০১৬

সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ অথচ শুরুতে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের কোনো বিধান ছিল না৷ বরং সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা৷ কিন্তু ১৯৮৮ সালে এরশাদের শানমালে সংবিধানের চরিত্র পাল্টে দেয়া হয়৷

মসজিদে প্রার্থনা
ছবি: picture-alliance/dpa

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়, যা কার্যকর হয় ঐ বছরেরই ১৬ ডিসেম্বর থেকে৷ সেই সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি ছিল – ১. জাতীয়তাবাদ, ২. গণতন্ত্র, ৩. সমাজতন্ত্র এবং ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা৷ অর্থাৎ সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়৷ এরপর ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান৷ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনার আগেই ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম'(দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম) – এই কথাটি সংযোজন করা হয়৷

তারপর ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চরিত্রটিই পরিবর্তন করে দেন তখনকার স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ৷ তাঁর শাসনামলে সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ সংবিধানের ঐ অষ্টম সংশোধনীতে বলা হয়, ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে৷''

পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হলেও, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এখনো বহাল আছে৷ তাই সেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের জন্যই এখন উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলছে, যা দায়ের করা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে৷ অর্থাৎ যখন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে সংযোজন করা হয়, সে বছরই৷

জগলুল হায়দার

This browser does not support the audio element.

২৭ বছর আগে হাইকোর্টে প্রথম এ বিষয়ে রিট আবেদন করার পর, পাঁচবছর আগে আরো একটি সম্পূরক রিট হয়৷ সেই দু'টি রিটের শুনানি একসঙ্গে করা হচ্ছে বলে রিটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক ডয়চে ভেলেকে জানান৷

রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে তখন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন দেশের ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক৷ তাঁদের মধ্যে ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল, ড. কামাল উদ্দিন হোসেন, কে এম সোবহান, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সিআর দত্ত প্রমূখ৷ তখনই আদালত রুল ইস্যু করে৷ এরপর ২০১১ সালে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলে আরেকটি সম্পূরক রিট হয় হাইকোর্টে এবং তাতেও রুল ইস্যু হয়৷

আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দু'টি রিট এক করে শুনানি শুরু হয়েছে হাইকোর্টের তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে৷ বিচারপতি নাইমা হায়দার এই বেঞ্চের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ চলতি মাসের ২৭ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে৷ মতামতের জন্য আদালত ‘এমিকাস কিউরি' নিয়োগ দিয়েছে৷''

জগলুল হায়দার বলেন, ‘‘আমাদের আবেদনের মূল কথা হলো, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার মাধ্যমে সংবিধানের অসাম্প্রদয়িক চরিত্রকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানের মূল নীতি পরিবর্তন করা যায় না, যা করা হয়েছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে স্থান দিয়ে৷''

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নির্যাতন এবং জঙ্গিবাদের মূল কারণ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা৷ আমরা এর অবসান চাই৷''

জানা গেছে, এই রিট আবেদনটি অনেক সময় পর হলেও শুনানির কার্যতালিকায় আসায় জীবিত রিটকারীরা আবার আশান্বিত হয়েছেন৷ তাঁরা মনে করছেন, এই রিটের নিষ্পত্তির মাধ্যমে সংবিধানের সাম্প্রদয়িক চরিত্রের অবসান ঘটবে৷

অ্যাডভোকেট এ কে এম জগলুল হায়দারের কথায়, ‘‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২-এর সংবিধানে এখনো আমরা পুরোপুরি ফিরে যেতে পারিনি৷ ফিরে যেতে হলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করতে হবে৷ আমরা আশা করি আদালত থেকে সেই রায় পাবো৷''

আপনি কি অ্যাডভোকেট এ কে এম জগলুল হায়দারের সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ